বিকাশের হৃদয় জুড়ে শুধুই দীপান্বিতা, সেখানে আর কারও স্থান নেই। প্রথম দর্শনেই তার চিত্তে এমন গভীর ছাপ ফেলে দিয়েছে যা কোনদিন মলিন হবার নয়, বরং দিনে দিনে উজ্জ্বলতা বাড়বে। দীপান্বিতার মুখচ্ছবি বিকাশের সর্বক্ষণের সাথী। কতবার মনে মনে দু-হাতের তালুর মাঝে অনুভব করেছে তার কোমল ত্বকের মিষ্টি ছোঁয়া। ত্বরিতগতিতে শিহরণ ছড়িয়ে পড়েছে শিরা-উপশিরার জটিল পথ আশ্রয় করে রক্তপ্রবাহে। কিন্তু দীপার উপস্থিতিতে, সে কেমন যেন গুটিয়ে যায়—কিছুতেই তার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। তার ইচ্ছাগুলো হৃদয়ে ডানা ঝাপটায়, কিন্তু ডানা মেলে উড়তে পারে না। দীপা যে বিকাশকে শারীরিক, মানসিকভাবে চায় তাও তার জানা, তা সত্ত্বেও কেন যে সে স্বাভাবিক ব্যবহার করতে পারে না, তার উত্তর বিকাশের কাছে রহস্য হয়েই রয়ে গিয়েছে। সে মনে মনে মেনে নিয়েছে--এটাই হয়তো গ্রামীণ মানসিকতা।
বিকাশ কিছুতেই নিজেকে দীপার যোগ্য পুরুষ বলে ভাবতে পারে না। এই হীনমন্যতার জন্য মাঝেমাঝে বিকাশের ওপর রাগ হয় দীপার। যে পুরুষ শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিবান, কর্মদক্ষ, সৎ--সে কেন নিজেকে ছোট ভাববে! যে গুণগুলো মানুষকে উজ্জ্বল করে তার সবই তো বিকাশের আছে--তবু কেন নিজেকে অযোগ্য ভাবে? দীপাকে যথেষ্ট পছন্দ করে, বন্ধু হিসাবে যথাযথ মর্যাদা দেয়, তবে কি শারীরিক ভালোবাসায় বৈরাগ্য? হয়তো তাই! সেই কারণে দীপা রেগে বিকাশকে 'বৈরাগী' সম্বোধন করে।
প্রিয়বাবু একদিন বিকাশকে নিজের চেম্বারে ডেকে বলেছিলেন, "তুমি তো আমাদের ডাকবে না, তবে আমরা ঠিক করেছি এই শনিবার তোমার বাড়িতে পার্টী করব। আপত্তি থাকলে বলে দাও।"
বিকাশ অপ্রস্তুত হয়ে বলেছিল, "কি বলছেন প্রিয়দা, এ তো আমার সৌভাগ্য।"
হাসতে হাসতে উত্তর দিয়েছিলেন, "দেখে তো মনে হচ্ছে না। একবার নিজের মুখে বল অন্তত, নাহলে যাই কি করে? তুমি কাজে এত স্মার্ট, নেতাদের ঘোল খাইয়ে দিতে পার, অথচ নিজের ব্যাপারে একটা কথা খরচ করতে চাও না কেন আমায় বোঝাও তো?"
বিকাশ নিজস্ব ভঙ্গিতে, "আসলে বাড়িটা তো সেরকম ভালো নয়, তাই কিছু বলিনি।"
ESTÁS LEYENDO
সাপলুডো
Ficción GeneralAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.