সর্বাঙ্গে চাদর জড়িয়ে অন্ধকার থেকে আলোয় বেরিয়ে এল দীপা। বিকাশ ততক্ষণে তাৎক্ষণিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে, ইচ্ছে ছিল দীপাকে পাশে বসিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তাদের ভুল বোঝাবুঝির সমাপ্তি করবে, কিন্তু সেই অবসর মিলল না। দীপার সর্বাঙ্গ তখন জ্বলছিল, অপমানের আগুনে দগ্ধ হচ্ছিল। বিকাশের থেকে একহাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, "তুমি আমায় অপমান করলে কেন?"
দীপার চোখের দিকে তাকিয়ে কষ্ট পাচ্ছিল বিকাশও, যে চোখ দুটো তাকে শান্তির জলে ভিজিয়ে দিত, এক নিমেষে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে দিত, সেই শিশুসুলভ সরলতায় ভরা চোখে আঘাতের চিহ্ন প্রত্যক্ষ করে নিজেকে বারবার দোষারোপ করছিল। ইশারায় দীপাকে বসতে বলে নিচু স্বরে বলল, "আমি তোমায় অপমান করতে যাব কেন?"
দীপা বিষাক্ত সাপের মতো ফুঁসে উঠল, "তবে কি ওটা তোমার আদর করার অতি আধুনিক স্টাইল ছিল যা আমি বুঝতে পারিনি?"
বিকাশের মুঠোয় ধরা হুইস্কির গ্লাস তখন মৃদু কাঁপছে। মনের পর্দায় একের পর এক ছবি দ্রুত গতিতে সরে সরে যাচ্ছে। অবাঞ্ছিত অস্থিরতার মাঝে নিজেকে স্থির রাখতে কতটা সক্ষম হবে তা নিয়েও মনে দোলাচলের সৃষ্টি হয়েছে। নিজের দুর্বলতা চাপা দেবার জন্যই বিকাশ হাতের গ্লাসটাকে একমাত্র সম্বল মনে করে প্রাণপণে আঁকড়ে আছে।
সাদা চাদরে আপাদমস্তক ঢাকা দীপার শরীরও স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। মন অবলম্বন হাতড়ে বেড়াচ্ছে, কিন্তু হাতের মুঠোয় শূন্যতা ছাড়া আর কিছুই উপলব্ধি করছে না। দীপার খোলা চোখের সাদা অংশটায় মনে হচ্ছে ফাটল ধরেছে, প্রত্যেক শিরা-উপশিরায় লাল রক্তের জমাট অন্ধকার।
ভালোবাসার মানুষের সান্নিধ্যে যে মধুর উষ্ণতা অনুভব করা যায় তা থেকে তারা তখন একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। পরিবেশ ক্রমশ বিষাক্ত বোধ হচ্ছিল বিকাশের। সে উপলব্ধি করতে পারছিল যে দীপান্বিতাও ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে, তার অভিমানের ভার লাঘব করতেই তার চোখে চোখ রেখে বলল, "আসলে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল তোমায় দেখে।"
ESTÁS LEYENDO
সাপলুডো
Ficción GeneralAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.