Chapter-2 | part-3

51 2 0
                                    

প্রিয়বাবু এবং তাঁর স্ত্রী, মিতাদেবী, দু'জনেই নিজেদের চাকরিজীবনে সফল। তাঁদের অতি আদরের মেয়ে দীপান্বিতা কলেজে পড়ছে, কাজেই সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। রবিবারই একমাত্র ছুটির দিন যখন একসাথে মিলিত হয়ে জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। সেই দিনটা যদি মনের মতো করে অতিবাহিত করা না যায়, তবে সংসারে শান্তি বজায় রাখা দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। তাঁদের তিনজনের সংসারে দু'জন, অর্থাৎ মা-মেয়ে এক পাল্লায়, আর প্রিয়বাবু অন্য দিকে।

যাইহোক, ভদ্রতার মোড়ক থাকায় প্রকাশ্যে এইসব বিষয়ে কখনো কথা হয় না। কে আর পুরনো হিসাবের খাতা নূতন করে খুলতে চায়! যা চলছে, যেভাবে চলছে—চলুক। বর্তমানে সমাজের প্রায় সর্বস্তরে—কথাবার্তায় বা ব্যবহারে রাজনীতির কপট চাল লক্ষ্য করা যায়। আগে যা ঘৃণ্য বলে বিবেচিত হতো, এখন তারই সমাদর। এই খেলা সবাই একটু-আধটু বুঝে গিয়েছে, এবং সময় সুযোগ বুঝে ব্যবহারও করছে, ফলও পাচ্ছে। তাতে মজা পাচ্ছে বলেই দিনে দিনে উৎসাহ বাড়ছে।

সকাল থেকেই প্রিয়বাবুর মন ভালো নেই। ঘুম থেকে উঠেছেন অনেক দেরিতে--প্রায় দশটায়। স্ত্রীর গম্ভীর মুখশ্রী এবং হাঁটাচলার ধরণ দেখেই বুঝতে পারছেন যে কোন মুহূর্তে অঘটন ঘটতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর ভিতর সকাল থেকে কোন বাক্য বিনিময় হয়নি। প্রিয়বাবু দু-একবার হালকা চালে কথা চালাচালি করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু মিতাদেবী আমলই দেননি। প্রিয়বাবু মনে মনে ভাবছেন, 'সন্ধে শুরু হয় নিজের পছন্দে, কিন্তু শেষটা কিছুতেই হাতে থাকে না।'

গতকাল রাতে ক্লাব থেকে অনায়াসে বাড়ি ফিরে আসতে পারতেন, কিন্তু না, কিছুতেই শেষরক্ষা করতে পারলেন না। সব গণ্ডগোলের মূলে হল সুস্মিতা। এমন সময়ে এন্ট্রি নিলো যখন আসর সবে জমে উঠেছে, আর আসা থেকে আড্ডাটা হাইজ্যাক করে নিলো। আর কারও মুখে কথা নেই যেন স্বর্গ থেকে অপ্সরা নেমে এসেছে। বিকাশকে কি জাদু করেছে কে জানে? এই চিন্তাও বারবার খোঁচা দিচ্ছে। সাদামাটা ছেলে, তার মাথাটা আজ খাবে।

সকাল থেকে তিনবার সুস্মিতার ফোন এসেছে, তিনবারই মিতাদেবীর কানে ঘণ্টাধ্বনি গিয়েছে, পিয়ানোর মিঠে সুর এখন কানে কর্কশ শোনাচ্ছে। প্রিয়বাবুর মন বলছে--সত্যি বলতে কি, নিজের ব্যক্তিগত জীবন থাকার উপায় নেই। ভারতবর্ষে 'প্রাইভেসি' শব্দের মানেই কেউ বোঝে না।

সাপলুডোWhere stories live. Discover now