পার্থ ড্রাগ অ্যাডিক্ট ছিল। দীপাকেও ধীরে ধীরে হাত ধরে সেই পথে নিয়ে যাচ্ছিল। মিতাদেবী বুঝতে পেরে মেয়েকে বাধা দেবার চেষ্টা করেন, কিন্তু প্রথমদিকে তাতে আশাপ্রদ ফল পাননি। যাইহোক, শেষমেশ মেয়েকে নেশার অন্ধকার গর্ত থেকে বার করে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
দীপা ড্রাগের ভয়ঙ্কর ছোবল থেকে মুক্তি পেলেও, মদের প্রতি তার আসক্তি বেড়ে গিয়েছিল। মিতাদেবী সবই বুঝতেন, কিন্তু তাকে বাধা না দিয়ে সময় দিতেন। বাড়িতে তার মনোমত পরিবেশ তৈরি করতে চাইতেন। মেয়ের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইতেন, কারণ তখন দীপা মাঝে মাঝেই মায়ের ওপর অকারণে রেগে যেত। মায়ের মনে আঘাত দিয়ে কথা বলত। মা যে তার হেরে যাবার সাক্ষী তা সে মানতে পারত না।
দীপার ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতেন মিতাদেবী। ডাক্তারের পরামর্শ মেনেই প্রত্যেক পদক্ষেপ করতেন এবং পরিশেষে সফল হয়েছিলেন। মেয়ের মন থেকে ভালোবাসার প্রতি বিদ্বেষভাব দূর করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মেয়ের মন জয় করতেই মিতাদেবী প্রস্তাব দিয়েছিলেন, "রবিবার দুপুরে তো আমরা বাড়িতে পার্টী করতে পারি। একটু ড্রিঙ্ক হল আর তার সাথে মিঠুর গান।" প্রিয়বাবু তো খুশী হয়েছিলেনই, তার সাথে দীপাও গলা মিলিয়ে বলেছিল, "গুড আইডিয়া মা।" সেই থেকেই রবিবারের আড্ডা রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে।
মিতাদেবী উঠে দাঁড়িয়ে প্রিয়বাবুকে বললেন, "দাঁড়াও, মেয়েকে ডাকি।"
মেয়েকে ডাকতে তিনি ঘর থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। প্রিয়বাবুও সব ভুলে সেলার খুলে ড্রিঙ্ক বানাতে শুরু করলেন। দীপার আবির্ভাবে ঘরের পরিবেশ পালটে গেল। বাবার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আবদার করল, "আমি 'টম কলিন্স' দিয়ে শুরু করব।"
খুশীতে ডগমগ হয়ে প্রিয়বাবু বললেন, "শুনছ মেয়ের বায়না।" হাসতে হাসতে যোগ করলেন, "তুই তো বাবাকেও ছাড়িয়ে যাবি।"
তিনজনেই খুশীর জোয়ারে ভাসছেন। দীপা একের পর এক কলেজের জমাটি গল্প বলে আসর জমিয়ে রেখেছে। মেয়েকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়ে এসেছেন মা। ধরিয়ে দিচ্ছেন কাহিনীর সূত্র আর দীপার গল্প বলার ভঙ্গিতে হাসিতে ফেটে পড়ছেন সবাই। জমিয়ে খাবার খেয়ে, যে যার ঘরে বিশ্রাম। মিতাদেবীর ভীষণ প্রয়োজন ছিল একটু আরামের। ইদানীং শরীর সবেতেই বাধ সাধছে, কিছুতেই মনঃসংযোগ করতে পারছেন না। তাঁর চারপাশটা ফাঁকা হয়ে গিয়েছে, শুধুমাত্র মেয়ের দিকে তাকিয়ে দিন গুনছেন। বেঁচে থাকতে আর ভালো লাগছে না। প্রায়শই মনে হয় বাঁচার অভিনয় করছেন, কারণ জীবনে বেঁচে থাকতে গেলে যে লক্ষ্যের প্রয়োজন, উৎসাহের তাগিদ থাকা দরকার তা তিনি অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছেন।
YOU ARE READING
সাপলুডো
General FictionAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.