প্রিয়বাবুর সকাল দশটায় জুনিয়ারদের সাথে মিটিং। ল্যাপটপ খুলে বসে গেলেন তার প্রস্তুতিতে। বহুদিনের পুরনো অভ্যাস সকালে নিজেদের কাগজে চোখ বুলানো। ইন্টারনেটের সাহায্যে ল্যাপটপের স্ক্রিনে প্রথম পাতাটা দেখেই অবাক হয়ে গেলেন। বিকাশ একটা স্টোরি করেছে, প্রথম পাতায় বাঁ-দিকে, ছত্রিশ পয়েন্টে হেডিং দিয়েছে, 'সরকার জনতার।' প্রিয়বাবু তড়িঘড়ি পড়তে শুরু করলেন, কিন্তু মনের পর্দায় চলছিল অন্য ছবি। বিকাশ এভাবে এত সহজে বিকিয়ে যাবে তা তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। লেখাটা পড়ে বুঝলেন, সুস্মিতার সাহায্য ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড়ো কথা এটা কাগজের লাইন নয়। তাঁদের কাগজ সরকারের সমালোচনায় মুখর, সবেতে ভুল বার করাই ছিল অ্যাজেন্ডা হঠাৎ রাতারাতি কি এমন ঘটে গেল যে 'লাইন অফ অ্যাকশন' একশো আশি ডিগ্রী ঘুরে গেল, এবং তাঁকে একেবারে অন্ধকারে রেখে।
ল্যাপটপের পর্দায় অক্ষরগুলো ম্লান হয়ে বিকাশের মুখচ্ছবি ভেসে উঠতেই প্রিয়বাবুর শরীর আনচান করতে লাগল। রাগে, অপমানে শরীর কাঁপছিল, কিছুতেই তিনি বিকাশকে ক্ষমা করতে পারছিলেন না। কিছুদিন আগেই বাড়িতে বসে আড্ডা মেরে গেল, আর এই তার প্রতিদান। সুস্মিতার কাছে নিজেকে বিক্রি করে বসে আছে--যার ওপর ভরসা করেছিলেন, নিজের মেয়েকে একরকম যার হাতে তুলে দিয়েছেন, সে-ই বিশ্বাসঘাতকতা করল! ঘাড়ের কাছে শিরদাঁড়া বরাবর চিনচিন করে উঠতেই ব্লাড প্রেশারের ওষুধ খেয়ে নিলেন। যবে থেকে বিকাশ সিঙ্গাপুরের ট্রিপ ক্যানসেল করেছে, তবে থেকেই প্রতারণার ভ্যাপসা গন্ধ পাচ্ছিলেন, আজ তা সত্য প্রমাণিত হল।
কলকাতার অন্যান্য কাগজগুলোতে চোখ বোলাতেই বুঝতে পারলেন, সবাই সুর বদল করেছে। তার মানে সিদ্ধান্ত এসেছে একেবারে ওপর মহল থেকে। একের পর এক ফোন করে চলেছেন তাঁর বিশ্বস্ত মানুষজনদের। প্রশ্ন একটাই--এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, অথচ কেন কেউ কিছু জানতে পারল না! একজনকে তো বলেই বসলেন, "কোনও খবর যদি ঠিক সময়ে না দিতে পারো তবে তোমাদের পুষে লাভ কি? সুযোগ নিতে তো ছাড়ো না, কাজটা করবে কে? কাঠগড়ায় দাঁড়াবার জন্য আমি?"
YOU ARE READING
সাপলুডো
General FictionAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.