#নীরবতা #১৮

417 24 1
                                    


সময়ের সাথে মানুষের অভ্যাস বদলে যায়, ভালোলাগাগুলো পাল্টে যায়। ছাত্র অবস্থায় একসময় রাতের এই ঢাকায় রিকশা নিয়ে এলোমেলো ভাবে ঘোরা হতো। তবে আজকাল নানান দায়বদ্ধতায় বাঁধা পড়ায় তা আর হয়ে উঠে না। কেনো যেনো আগের মতো ইচ্ছেও করে না। কিন্তু আজ করছে। সারাটা রাত রিকশায় করে উল্লাসীর পাশে বসে পুরো ঢাকায় ঘুরতে ইচ্ছে করছে। উল্লাসীর কোমরে হাত চাপিয়ে তাকে নিজের দিকে টানতে ইচ্ছে করছে৷ ইচ্ছে করছে মৃদু বাতাসের ছোঁয়াকে উপেক্ষা করে উল্লাসীর চুলের মাঝে নাক ডোবাতে। দেবে কি সে তাকে এসবের অনুমতি? বাতাসে সজোরে একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে হাতের সিগারেট ফেলে দিল মেসবাহ। তারপর পাশে তাকিয়ে বললো,
-"রাতের ঢাকা অপরূপ সুন্দর না?"
-"হ্যাঁ.. বেশ লাগছে আমার।"
-"আগামী শুক্রবার আবার বেরুবো।"
চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো উল্লাসীর। ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,
-"সত্যিই?"
-"হ্যাঁ.. তবে সেদিন লিমন থাকবে না।"
-"শুধু আপনি আর আমি?"
-"হ্যাঁ।"
-"ঠিকাছে।"
ফুটপাতের রাস্তার দিকে নজর দিল মেসবাহ। লিমন আজ যথেষ্ট জ্বালিয়েছে তাকে। এটাসেটা নানান কথাবার্তার মাঝে ফুটিয়ে তুলেছে, উল্লাসী সুন্দর। এবং উল্লাসীর মতো সুন্দরী এক মেয়ের পাশে তার মতো সুদর্শন এক পুরুষকেই মানায়। বিষয়টি হয়তো হাসি ঠাট্টার হলেও একদম ভালোলাগেনি মেসবাহর। লিমনের স্ত্রীর সঙ্গে তো বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে তার। তবে কখনোই এমন বিশ্রী রসিকতা তো করেনি সে। আর না কখনো করবে...
-"লিমনকে কেমন লাগে তোমার?"
হঠাৎ মেসবাহর এমন প্রশ্নে তার দিকে তাকালো উল্লাসী। সহজ গলায় বললো,
-"ভালোই তো লাগে। মানুষটা অনেক মজার।"
-"আর আমাকে?"
-"আপনিও ভালো.. তবে উনার মতো মজার নন।"
-"অহ। আচ্ছা.. লিমন কি সত্যিই আমার চেয়ে সুন্দর?"
-"হ্যাঁ.. উনি তো অনেক বেশি ফর্সা।"
মন অসম্ভব রকমের খারাপ হয়ে এল মেসবাহর। তবে এর ঠিক যৌক্তিক কারণ খুঁজে পেল না সে। লিমন সুন্দর। এবং তার চেয়ে কয়েকগুনে বেশিই সুন্দর। উল্লাসী তো ভুল কিছু বলেনি! তাহলে শুধুশুধু খারাপ লাগছে কেনো তার? উল্লাসীর মুখে লিমনের প্রশংসা শুনে? লম্বা একটি দম ছেড়ে আরেকটি সিগারেট ধরালো মেসবাহ। চলন্ত রিকসায় বসে সিগারেট ফোঁকার মতো মজা এজীবনে আর কিছুতে আছে বলে আগে মনে হতো না। তবে আজ ভিন্ন কিছুর সুখ অনুধাবন করতে পারছে সে। এসুখ সকল সুখের উর্ধ্বে।
-"কিছু খাবে?"
-"উহু.."
সিগারেট শেষ করলো না মেসবাহ। আবারও তা রাস্তায় ফেলে শীতল গলায় বললো,
-"কেনো? ফুচকা, চটপটি বা আইসক্রিম.. কিছু একটা খাও।"
-"ঠিকাছে, খাবো। জানেন, অনা আপা যে কলেজে পড়ে তার সামনে রোজই ফুচকাওয়ালা ফুচকা, চটপটি নিয়ে আসে? তবে ছোটমা ওসব খাবার জন্য টাকা দিত না। আমি প্রায়ই দেখেছি ওসব, কিন্তু কখনো খাওয়া হয়নি।"
বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো মেসবাহর। ছোটমার কথা এর আগে অনেকবারই বলেছে উল্লাসী। তবে প্রায়ই তা উপেক্ষা করে গেছে সে। জিজ্ঞেস করবে করবে করেও করা হয়ে উঠেনি। একজন সন্তান কতটা নিঃস্ব তার মাকে ছাড়া তা আজ খুব করে অনুভব করতে পারছে। বুকচিরে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠোঁট হালকা প্রশস্ত করলো মেসবাহ। তারপর বললো,
-"চলো.. আজ আমি খাওয়াই তোমাকে। মামা, রিকশা এক সাইড করে থামাও তো।"

নীরবতাМесто, где живут истории. Откройте их для себя