#নীরবতা #৭

411 22 1
                                    

-"তুমি শাড়ি বদলে কামিজ পরে নাও। আমি এতক্ষণ তোমার বাসায় পরার জন্য আরও কিছু কামিজ দেখছি।"
উল্লাসীকে ট্রায়াল রুম দেখিয়ে আরও কিছু সালোয়ার কামিজ তার জন্য নিল মেসবাহ। তারপর ধীরেসুস্থে এগুলো ট্রায়াল রুমের দিকে। স্টেশন থেকে সরাসরি শপিংমলে এসেছে তারা। উল্লাসী যে সাজসজ্জায় ছিল তা নিয়ে বাসায় ঢুকলেই সকলের মনে সন্দেহ ঢুকে যেত। তাই কোনো উপায় না পেয়ে সরাসরি শপিংমলে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাকে।
-"শুনছেন? আমার হয়েছে।"
উল্লাসীর ডাকে পেছন ফিরে তাকে একনজর দেখলো মেসবাহ। তারপর শান্ত গলায় বললো,
-"কানের দুল খোলো.. সাথে গলার হারটাও।"
কোনো প্রশ্ন না করে কাঁপা হাতে উল্লাসী স্বর্ণের হার এবং দুল খুলে বাড়িয়ে ধরলো মেসবাহর দিকে। মেসবাহ সেগুলো নিয়ে একটি শপিং ব্যাগে ঢুকিয়ে বললো,
-"হাতের বালা দুটো খোলো।"
বাঁধ সাধলো উল্লাসী। বিয়ের আগে এই বালা তার হাতে পরিয়ে দেবার সময় ছোটমা বলে দিয়েছে, বিয়ের পর হাত কখনোই খালি রাখবি না। এতে স্বামীর অকল্যাণ হয়। আর একজন আদর্শ স্ত্রী হিসেবে স্বামীর অকল্যাণ চাওয়া কোনো স্ত্রীর কাম্য নয়। একদন্ড ভেবে দু'কদম পিছিয়ে উল্লাসী বললো,
-"আপনার অকল্যাণ হবে।"
বিস্ময়ে চোখমুখ কুঁচকে মেসবাহ বললো,
-"লেইম কথা রেখে বালাজোড়া খুলে ফেলো।"
-"ছোটমা বারন করেছে। আপনার অকল্যাণ হবে।"
-"আমার কল্যাণ অকল্যাণ নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। তুমি আপাতত আমার কথা মতো কাজ করো।"
-"উহু.."
মেজাজ চওড়া হয়ে এল মেসবাহর। কড়া গলায় সে বললো,
-"সিনক্রিয়েট করো না। যা বলছি দ্রুত করো।"
ঢোক গিলে আরও কয়েক কদম পেছালো উল্লাসী। এই লোককে কোনোভাবেই বুঝতে পারে না সে। মাঝেমাঝে এত মনোরম ভাষায় কথা বলে আবার মাঝেমাঝে প্রচুর রাগ দেখায়। একজন মানুষের দুই রূপ কীভাবে হয়?

কথা বাড়ালো না মেসবাহ। দ্রুত পায়ে উল্লাসীর দিকে এগিয়ে এসে সজোরে চেপে ধরলো তার হাত। সময় নিয়ে বালাজোড়া খুলে তা শপিং ব্যাগে ঢুকিয়ে চারিপাশটায় চোখ বুলিয়ে নিল। লোকজনের আনাগোনা এদিকে খুব একটা না থাকলেও দু'একজনের উপস্থিতি রয়েছে। যারা সকলেই প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে রয়েছে তাদের দিকে। সেদিক থেকে নজর সরিয়ে সকলের দৃষ্টি উপেক্ষা করেই উল্লাসীর হাত ধরলো মেসবাহ। তারপর তাকে টেনে দ্রুত বের হয়ে এল শপিংমল ছেড়ে। শহরে পা ফেলতে না ফেলতেই যে মেয়েকে নিয়ে একদফা ঝামেলায় পড়তে পড়তে বেঁচে গেছে, সেই মেয়েকে নিয়েই পুরো জীবন কাটাবে কী করে সে? জবাবে বুকচিরে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল মেসবাহর। খুব দ্রুত একটি রিকশা ডেকে তাতে উঠে বসে উল্লাসীর দিকে দৃষ্টি দিতেই তার নজরে এলো মেয়েটির কান্নামাখা মুখ। নিরবে কাঁদছে সে। অঝোরে ধারায় যা টপাটপ গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে...

নীরবতাOnde histórias criam vida. Descubra agora