#নীরবতা #৯

382 20 0
                                    


রাতে খাবার শেষে সব কিছু গোছগাছ করে উল্লাসী ড্রইংরুমে এলো। পাশেই সোফায় শরীর মেলে দিয়ে শুয়ে রয়েছে মেজবাহ। নজর তার টেলিভিশনের দিকে। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলে সেদিক থেকে নজর সরিয়ে সোফায় বসলো উল্লাসী। উৎফুল্ল চোখে টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে তা দেখায় মনোযোগ দিল।
-"পানি গরম দিয়ে এসেছো?"
পাশ থেকে মেসবাহর প্রশ্নে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল উল্লাসী। তারপর মেজবাহর দিকে ফিরে বললো,
-"আপনার লাগবে এখন?"
-"না, যখন লাগবে আমি নিয়ে নেব।"
-"আচ্ছা.."
-"ছোট হিসেবে বেশ ভালো রাঁধো তুমি।"
-"আপনার ভালো লেগেছে?"
-"হ্যাঁ.. ভালো লেগেছে।"
মেজবাহর কথায় খুশির এক দোলা বয়ে গেল উল্লাসীর মনজুড়ে। সোফায় দু'পা উঠিয়ে আরাম করে বসে সে মেসবাহর দিকে সকল মনোযোগ জুড়ে দিয়ে মৃদু হেসে বললো,
-"আপনি জানেন, আমার বাবার ছোটমার চেয়ে আমার হাতের রান্না খেতে বেশি ভালোলাগে?"
-"জানা ছিল না.. তবে এখন জানলাম। রান্নাবাড়া করতে কী খুব ভালো লাগে তোমার?"
-"খুউউব ভালো লাগে..."
-"বেশ তো.. তা আর কী কী করতে ভালোলাগে তোমার?"
-"ঘুরতে, টেলিভিশন দেখতে, সুহার সঙ্গে সময় কাটাতে, বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে, বৃষ্টিতে ভিজতে, আর..."
আঙুলে কড় ধরে ধরে একেএকে নিজের ভালোলাগা গুলো মেসবাহর কাছে খুলে বললো উল্লাসী। তারপর আগ্রহী গলায় জানতে চাইলো,
-"আর আপনার?"
-"আমার তো কিছুই ভালোলাগে না। তবে বয়স বলো বা পরিস্থিতি, এসব মেনে সব কিছুকেই ভালো লাগাতে হয়।"
-"তার মানে আপনার ভাল্লেগেনা অসুখ হয়েছে। ডাক্তারদেরও তাহলে অসুখবিসুখ হয়!"
ঠোঁটে হাসি ফুটলো মেসবাহর। শোয়া থেকে উঠে বসে সে বললো,
-"তোমার কী ধারণা ছিল হয় না?"
-"হু... মানে উহু।"
-"ঠিকাছে। ডাক্তারদের নিয়ে আপাতত তোমার আর গবেষণা করতে হবে না। দ্রুত ঘরে চলো। অনেক রাত হয়েছে।"
টেলিভিশন বন্ধ করে ঘরের দিকে পা বাড়ালো মেসবাহ। তার পিছুপিছু ঘরে ঢুকে নিচে শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো উল্লাসী। তাকে মাঝপথেই থামিয়ে দিল মেসবাহ। স্বাভাবিক গলায় সে বললো,
-"বেডেই শুয়ে পড়ো।"
-"তাহলে আপনি কোথায় শোবেন?"
সে প্রশ্নের জবাব আজও উপেক্ষা করলো মেসবাহ। বেড সাইড টেবিল থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে স্টাডি টেবিলে এসে বসলো সে।
-"আপনি আমাকে পছন্দ করেন না, তাই না?"
উল্লাসীর কথায় বুকের ভেতর হালকা কাঁপুনি অনুভব করলো মেসবাহ। তবে পরমুহূর্তেই নিজের সকল মনোযোগ ঘোরাতে গতকালের পড়া ডেভিড কপারফিল্ড বইটি বের করে অবশিষ্ট অংশতে চোখ ডোবালো সে।
-"ছোটমা খোকনকে আমাদের সঙ্গে প্রায়ই ঘুমোতে বলে। কিন্তু খোকন কখনোই আমাদের সঙ্গে ঘুমোয় না। কারণ ওর সুহাকে পছন্দ নয়। সুহার কাছে শুলে নাকি ওর গা ঘিনঘিন করে।"
বলেই থামলো উল্লাসী। আঁড়চোখে মেজবাহর দিকে ফিরে সে আবারও বললো,
-"তেমন আমাকেও আপনার পছন্দ নয় বলে আপনি আমার সঙ্গে ঘুমুতে চান না। আপনার গা ঘিনঘিন করে.. তাই না?"
-"অদ্ভুত সব কথা বলবে না। ঘুমোতে এসেছো ঘুমোও। ঘুমোনোর সময় এত কথা কিসের?"
মেসবাহর ধমকে দমিয়ে গেল উল্লাসী। ঝটপট বালিশে মাথা গুঁজে ঘুমের পায়তারা শুরু করলো সে। লোকটি বড়ই অদ্ভুত। তাকে বোঝা বড় দায়!

নীরবতাOpowieści tętniące życiem. Odkryj je teraz