#নীরবতা #২২

436 19 1
                                    

হাতঘড়িতে সময় দেখে নিল জ্যোতি। বিকেল চারটা বেজে পঁচিশ মিনিট। অফিস থেকে বেরিয়ে জ্যাম থাকলে ধানমন্ডি পৌঁছাতে পৌঁছাতে ঘন্টা দুয়েক লেগে যাবে। তবে তার মেয়ের সাথে তো দেখা হবে! সেক্ষেত্রে ক্লান্তি অবসাদ কিছুই আসে যায় না। ফাইলপত্র গুছিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লো জ্যোতি। ভ্যানিটিব্যাগ হাতে দরজার দিকে এগুতেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো তার।
-"তুমি অফিস থেকে বেরুবে কখন?"
ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রাশেদ রহমানের কথা শুনে বিরক্ত হলো জ্যোতি। ভ্রু কুঁচকে বললো,
-"কেনো?"
-"আমি তোমাকে পিক করতে আসছি।"
-"আসতে হবে না। আমি এখন মৌমির সাথে দেখা করতে ধানমন্ডি যাচ্ছি।"
-"দুইদিন আগেই না দেখা করলে! আজও আবার দেখা করতে হবে?"
-"প্লিজ রাশেদ। এনিয়ে তোমার কোনো মতামত আমি চাইছি না। মৌমিকে নিয়ে কথা বলার অধিকার তোমার নেই।"
-"আমি অধিকারের প্রসঙ্গে আসছি না। তবে আজ আমি ঢাকার বাইরে যাচ্ছি। যাবার আগে আমাদের একবার দেখা হবার প্রয়োজন ছিল।"
-"তুমি ঘুরে এসো। না আমি কোথাও যাচ্ছি আর না তুমি। দেখা হবেই.. রাখছি।"
ফোন কেটে হন্যে পায়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লো জ্যোতি। মৌমির জার্নিতে কষ্ট হয়। তাই মেসবাহর বাসা ধানমন্ডি হবার কারণে তাকেই সেদিকে যেতে হচ্ছে। তবুও মেয়েকে দেখার সুযোগ সে মোটেও খোয়াবে না...

বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ রেস্তোরাঁয় বসে অপেক্ষা করে যাচ্ছে মাজহারুল জ্যোতির। মেয়েকে দেখার জ্যোতির বারবার অনুনয় উপেক্ষা করতে পারেনি সে। কেনোই বা সে ঢাকায় এল? আর কেনই বা জ্যোতির সাথে মেয়েকে দেখা করালো সে? একবারের দেখায় ভুলে গিয়েছিল মৌমি তার মাকে। তবে এভাবে দ্বিতীয় তৃতীয় বার চলতে থাকলে তা আদৌ কী কখনো সম্ভব হবে? চিন্তায় নিমগ্ন ছিল মাজহারুল। হঠাৎ জ্যোতির ডাকে হুশ ফিরলো তার। লম্বা একটি দম ছেড়ে সে গম্ভীরমুখে বললো,
-"আজই শেষ। আর না তুমি কখনো মৌমিকে দেখতে চাইবে আর না আমি তোমার কথায় আসবো।"
মৌমিকে নিজের বুকে চেপে ধরলো জ্যোতি। মাজহারুলের মুখোমুখি চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
-"যতদিন ঢাকায় আছো, আমি রোজই আমার মেয়ের সাথে দেখা করতে চাই।"
-"চাই বললেই হবে না। এতে মৌমির তোমার প্রতি মায়া জন্মাবে। কষ্ট হবে তোমায় ছাড়া থাকতে। কান্নাকাটি করবে।"
-"তাই বলেই কি আমি আমার মেয়েকে কাছে পাবো না?"
-"মেয়েকে কাছে পাওয়ার মতো তুমি কখনোই কোনো কাজ করোনি জ্যোতি।"
নিশ্চুপ হয়ে গেল জ্যোতি। মেয়ের মাথায় শতশত ভালোবাসার পরশ বুলে দিয়ে বললো,
-"কান্নাকাটি করলেই বা কয়দিন? একদিন দুইদিন... তারপর আবারও ও আমায় ভুলে যাবে। কী মা? মনে রাখবি আমায়?"
মায়ের কথায় মাথা নেড়ে আবারও খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো মৌমি। দু'দিন আগের দেখা সেই মানুষটিকে আজ কী মনে নেই তার? গোপনে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো জ্যোতি। বিমর্ষ মুখে বললো,
-"দেখেছো.. ও আমায় ভুলে গেছে। জানো, মাঝেমাঝে খুব কষ্ট হয় আমার?"
-"কেনো?"
-"মেয়ের জন্য। মায়ের আদর ছাড়া মেয়েটি বেড়ে উঠছে। ভাবলেই বুকের ভেতরটায় মুচড়ে উঠে। তুমি এখনো বিয়ে করোনি কেনো?"
জবাবে ক্ষীণ গলায় মাজহারুল বললো,
-"বিয়ের প্রয়োজন বোধ করিনি কখনো।"
-"মৌমির মা প্রয়োজন। মায়ের আদর ভালোবাসা প্রয়োজন।"
-"আমি সবটাই দিচ্ছি..."
-"এখন দিচ্ছো.. কিন্তু মৌমি যখন বড় হবে তখন ও তোমার সাথে সব কিছু শেয়ার করতে পারবে না। তুমি বিয়ে করে ফেলো, মাজহার।"
চোয়াল শক্ত হয়ে এল মাজহারুলের। শক্ত গলায় সে বললো,
-"আমাকে আর আমার মেয়েকে আমাদের হালে ছেড়ে দাও। আমরা নিজেদের গুছিয়ে নেব।"
বুকচিরে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল জ্যোতির। স্বাভাবিক গলায় সে বললো,
-"ঠিকাছে.. খাবার অর্ডার করো। আজ রাতের খাবার তোমার পছন্দ অনুযায়ী হবে।"
-"আমার পছন্দ তোমার ভালোলাগবে না। তুমিই বরং করো.. আমি মানিয়ে নিব।"

নীরবতাWhere stories live. Discover now