#নীরবতা #১১

391 17 0
                                    


খানিক্ষণ ঘরের ভেতরে পায়চারী করে বিছানায় শরীর মেলে দিল মেসবাহ। তবে এপাশ ওপাশ করেও ঘুমের দেখা পেল না। রাগ তার কিছুটা কমে এলেও মনের ভেতরটা অস্থিরতায় ছটফট করছে। সে কি ঠিক করলো কাজটি? ভয় পায় মেয়েটি একা ঘরে ঘুমোতে। গ্রাম্য পরিবেশে বেড়ে উঠা একটি মেয়ের পক্ষে এমনটাই কি স্বাভাবিক নয়? তাছাড়া মেয়েটির বয়সও তার একবার বিবেচনায় আনা উচিৎ ছিল। অস্থির মনে বিছানা ছেড়ে উঠে ডাইনিংয়ে এসে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে গিলে ফেললো মেসবাহ। তারপর লম্বা একটি দম ছেড়ে একটি চেয়ার টেনে বসে পড়লো তাতে। কী এমন হবে মেয়েটির পাশে ঘুমোলে? নিজেকে সংযত রাখতে পারবে না সে? তাহলে তার এবং কোনো পশুর মাঝে পার্থক্য থাকলো কি? বাচ্চা একটি মেয়ের পাশে শুয়েই যে ব্যক্তি নিজেকে সংযত রাখতে ব্যর্থ হবে, বাচ্চা মেয়েটিকে নিয়ে নানান আজেবাজে চিন্তাভাবনা করবে, সে আর যাই হোক কোনো মানুষ নয়। পশু সে.. নীচু স্তরের এক নিকৃষ্ট পশু। ভাবামাত্র চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো মেসবাহ। নীরব পায়ে এগুলো উল্লাসীকে একা ফেলে রেখে আসা ঘরের দিকে।বিছানায় কারো উপস্থিতি টের পেয়ে বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো উল্লাসীর। তবে সেদিকে চোখ তুলে তাকাবার মতো সাহস হলো না তার। যদি অদ্ভুত সেই চেহারার মানুষগুলো হয়? তখন কী করবে সে? এক দৌড়ে এই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবার সকল পথই যে বন্ধ!
-"উল্লাসী... এই উল্লাসী?"
হঠাৎ মেসবাহর ডাক কানে আসতেই মাথা উঠালো উল্লাসী। অবিশ্বাস্য চোখে একবার মেসবাহর দিকে তাকিয়েই ঝাপিয়ে পড়লো তার বুকে। অপরদিকে খানিক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর এক হাত উঠিয়ে উল্লাসী মাথায় রাখলো মেসবাহ। চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শান্ত গলায় বললো,
-"খুব ভয় পেয়েছিলে?"
মেসবাহর বুকে মুখ ডুবিয়ে উল্লাসী নাক টেনে জবাব দিল,
-"হু..."
-"এত ভয় কিসের বোকা মেয়ে? দেখো চারপাশের দরজা জানালা সব কিছুই তো বন্ধ। এর ভেতর কেউ কি আসতে পারবে এই ফ্ল্যাটে?"
-"উহু..."
-"তাহলে এত কিসের ভয় তোমার?"
-"জানিনা..."
-"আজ কি তোমায় জানিনা রোগ হয়েছে? সব প্রশ্নেরই এক উত্তর করে যাচ্ছো! জানিনা জানিনা আর জানিনা।"
শরীরের কাঁপুনির সঙ্গে কান্নার বেগ খানিকটা কমে এল উল্লাসীর। ভেজা গলায় সে বললো,
-"আপনার যদি ভাল্লাগেনা রোগ হতে পারে তাহলে আমার জানিনা রোগ হলে দোষ কী?"
-"আমি তো ডক্টর। নিজের রোগ হলে নিজে চিকিৎসা করে তা সারিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু তুমি? তোমার এই রোগ কে সারাবে শুনি?"
-"কেনো? আপনি সারাবেন। আপনি আমার স্বামী না?"
জবাবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো মেসবাহ। অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে উল্লাসী। কান্নার দরুন আর শরীর কেঁপে কেঁপেও উঠছে না তার। হয়তো কিছুক্ষণের মাঝে একদম ঠিকঠাকও হয়ে যাবে সে।
-"চলো.. শুয়ে পড়ি।"
মেসবাহর বুক থেকে মাথা উঠালো উল্লাসী। অসহায় চোখে তার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো,
-"আমার তো আজ জ্বর নেই। আমি নিচে শুই? আর আপনি এঘরেই বিছানায় ঘুমোন?"
-"উহু.. আমি তুমি, আমরা দুজনেই আজ একসাথে ঘুমোবো। এবং তা বিছানায়। নাও দেখি তোমার বালিশ একপাশে রাখো।"
খানিক্ষনের জন্য বিস্মিত হলেও উল্লাসী ঠোঁটে ফুটলো মিষ্টি হাসি। সত্যিই এই মানুষটিকে বোঝা বড় দায়!

নীরবতাDonde viven las historias. Descúbrelo ahora