#নীরবতা #৩১

527 18 4
                                    


সকালের তীক্ষ্ণ রোদের সঙ্গে জানালার পর্দার লুকোচুরি খেলা শেষে নীরবে ঘরে রোদ প্রবেশ করতেই ঘুম ভেঙে গেলো উল্লাসীর। আড়মোড়া ভেঙে ঘুমে আচ্ছন্ন চোখজোড়া মেলতেই মেসবাহর ঘুমন্ত মুখ সামনে এল তার। দু'হাতের মাঝে আষ্ঠেপৃষ্ঠে তাকে জড়িয়ে বেশ আয়েশেই নিদ্রায় নিদ্রিত রয়েছেন তিনি। কী নিষ্পাপ লাগছে তাকে দেখতে! কে বলবে কাল পুরো রাত এই নিষ্পাপ লোকটিই কিভাবে জ্বালিয়ে মেরেছে তাকে! ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়েও তার কার্যকলাপের মুখে পরে বারবার অজানা এক সুখের রাজ্যে ভেসে গেছে। পর্যাপ্ত সময় নিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেসবাহর দিকে তাকিয়ে থাকার পর তার মাথার দিকে হাত বাড়ালো উল্লাসী। চুলে হাত ডুবিয়ে বিলি কাটতে শুরু করতেই নড়েচড়ে উঠলো মেসবাহ। মাথার অবস্থান পরিবর্তন করে তা গুঁজে দিল উল্লাসীর বুকে। সুপ্ত গলায় বললো,
-"কখন উঠলে?"
-"এইতো মাত্র.."
-"ঘুম হয়েছে?"
-"জানি না।"
ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটলো মেসবাহর। মুখ উঠিয়ে উল্লাসীর দিকে চেয়ে বললো,
-"তা কী জানেন আপনি?"
-"জানি না। এভাবে তাকাবেন না।"
-"কেনো? লজ্জা পান?"
-"মোটেও না। দেখি ছাড়ুন।"
-"ছাড়াছাড়ির কারবার কি না টানলেই নয়?"
-"না.. ছাড়ুন।"
-"ছাড়বো তো অবশ্যই। গোসলের পাঠ তো চুকাতে হবে।"
ভ্রু কুঁচকে উল্লাসী বললো,
-"কিসের গোসল? আপনি তো বলেছিলেন এখানে থাকা অব্দি আমার সকালে গোছলের দরকার নেই।"
-"এখন থেকে দরকার।"
-"কেনো? এখন দরকার কেনো?"
-"এতসব বোঝাতে পারবো না। প্রতি সকালে দুজন একসাথে গোসল সারবো.. ব্যস! কথা শেষ।"
-"ছিঃ! এত বাজে কথা কেন বলেন আপনি? মোটেও না.. আমি একদম আপনার সাথে গোসল করবো না।"
-"করবে না?"
-"না.. ছাড়ুন। ছাড়ুন না!"
উল্লাসীর ছটফটানি কমাতে তার গলায় মুখ ডোবালো মেসবাহ। সময় নিয়ে একেরপর এক চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে ঠোঁটের দিকে এগুতেই তার নজর গেল উল্লাসীর পিছনের দিকে। গুটিসুটি মেরে উল্লাসীর পাশে শুয়ে চোখজোড়া প্রসস্থ করে তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে সুহা। কিন্তু সুহা এঘরে এলো কখন? ভোরে? তাহলে কী চোখ মেলে উল্লাসীর দেখা না পেয়ে তাকে খুঁজতে খুঁজতে কী এঘরে চলে এসেছে সে? অজস্র অস্বস্তি নিয়ে উল্লাসীকে ছেড়ে উঠে পড়লো মেসবাহ। এমন বিশ্রী এক পরিস্থিতিতে এর আগেও মৌমির সামনে পড়েছিল তারা। তবে তখন আদরের ডোজ কম থাকলেও আজ তা সীমানা ছাড়িয়েছে।
-"কী হলো?"
উল্লাসীর প্রশ্নের জবাবে ঢোক গিলে মেসবাহ বললো,
-"সুহা.."
-"কী সুহা? সুহার কিছু হয়েছে?"
-"না.. পেছনে তাকাও।"
মেসবাহর কথায় পেছনে ঘুরতেই সুহাকে দেখে চোখমুখ সংকুচিত হয়ে এল উল্লাসীর। বোনের কপালে হাত বুলিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললো,
-"তুই কখন এলি? ভয় পেয়েছিলি? আমি আপনাকে বারবার বলেছি, সুহা একা আছে। ওর কাছে যাই। আপনি যেতেই দিলেন না! ইশ.. কলিজার টুকরোটা আমার! ভয় পেয়েছিলি রে?"
লম্বা একটি দম ছেড়ে বিছানা ছেড়ে নেমে পড়লো মেসবাহ। পা বাড়ালো ওয়াশরুমের দিকে। সুহা যে তাদের মাঝের আদর ভালোবাসার বেশ কিছু অংশ দেখে ফেলেছে সেদিকে সামান্য ভ্রুক্ষেপ নেই উল্লাসীর। তার সমস্ত ধ্যান জ্ঞান আপাতত তার ভুতগীরিতে সীমাবদ্ধ। বোনকে একা পেয়ে যে ভুতেরা তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়নি এইবা কম কী!

নীরবতাМесто, где живут истории. Откройте их для себя