#নীরবতা #২৬

574 18 1
                                    


বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ উল্লাসীকে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকে নিয়ে শুয়ে রয়েছে মেসবাহ। অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে ভরে উঠেছে তার বুকের ভেতরটা। পুরো শরীরজুড়ে কাজ করছে তৃপ্ততা। যা নামহীন ভালোবাসার এক জগতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাকে। এত কেন সুখ সেই জগতে? যে সুখের ছায়ায় নিজেকে হারাতে ইচ্ছে করছে বারেবার! তৃপ্তির শ্বাস ছেড়ে উল্লাসীর চুলে হাত বোলালো মেসবাহ। ঠোঁট জোড়া তার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
-"উল্লাসী?"
-"হু.."
-"আমি একটু ওয়াশরুম থেকে ঘুরে আসি?"
-"হু.."
উল্লাসীর সম্মতি পেয়ে ধীরেসুস্থে বিছানা ছাড়লো মেসবাহ। পা বাড়ালো ওয়াশরুমের দিকে। আজকের রাতটি কী সত্যিই এসেছিল তার জীবনে? সত্যিই কী উল্লাসীকে পুরোটা নিজের করে পেয়েছে সে? বিশ্বাস হচ্ছে না.. নিজেকে যথাযথভাবে সামলে রেখেও শেষমেশ এত দ্রুত এমন একটি রাত তার জীবনে এসেছে তা মোটেও বিশ্বাস হচ্ছে না। সবটাই কল্পনা নয় তো? প্রশ্নই আসে না। তবে কাজটা কি ঠিক হলো? আরও কিছু সময় কি নেয়া যেত না? ভাবনার গতিপথ বাড়ালো না মেসবাহ। সময় নিয়ে পরিষ্কার হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ঘরের আলো জ্বালালো সে। এগুলো উল্লাসীর দিকে। কাঁথা গায়ে মুড়িয়ে নিস্তেজভাবে শুয়ে রয়েছে উল্লাসী। তার ক্লান্তিমাখা মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো মেসবাহ। তারপর ক্ষীণ গলায় ডেকে উঠলো তাকে।
-"উল্লাসী, ওয়াশরুমের কাজটা সেরে এসে একেবারে ঘুমোও।"
তবে ওপর পাশ থেকে উল্লাসীর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। মেয়েটি কি এর মাঝেই ঘুমিয়ে পড়লো? তার সাদা ধবধবে কাঁধে হাত ছুঁয়িয়ে আবারও তাকে ডেকে উঠলো মেসবাহ। এবারও উল্লাসীর দিক থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেল তার। উদ্বিগ্ন গলায় কয়েকবার ডাকার পরও ওপর পাশ থেকে উল্লাসীর কোনোরকম সাড়াশব্দ না পেয়ে অস্থির হয়ে পানির খোঁজে ড্রইংরুমের দিকে এগুলো মেসবাহ৷ বুকের ভেতরটা অনবরত কেঁপে কেঁপে উঠছে তার। এ কী করে ফেললো সে? উল্লাসী কেনো অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে বিছানায়? অশান্ত পায়ে ঘরে ফিরে উল্লাসীর মুখে পানি ছিটিয়ে দিল মেসবাহ। তবে উল্লাসীর ভাবমূর্তির পরিবর্তন না দেখতে পেয়ে লম্বা কিছু দম ছেড়ে নিজেকে শান্ত করলো। ঢোক গিলে কাঁপা হাতে উল্লাসীর শরীরের উপর থেকে কাথা সঁড়াতেই মাথা ঘুরে উঠলো তার। রক্তপাত এখনো বন্ধ হয়নি। শ্লথ ধারায় তা বেয়েই যাচ্ছে...
-"সরি উল্লাসী.. আই অ্যাম সরি। আমি কী করলাম এটা! এই উল্লাসী আমার কথা শুনছো? সরি উল্লাসী।"
উতলা মনে নিজের ফোন খুঁজতে শুরু করলো মেসবাহ। আপাতত এই পরিস্থিতিতে ইভানা ছাড়া দ্বিতীয় কিছু মাথায় আসছে না তার। সে একজন স্ত্রীরোগবিশারদ। নিশ্চয় তার কাছে এর সমাধান রয়েছে। কাঁপা হাতে ইভানার নাম্বারে ডায়াল করতে করতে উল্লাসীর পাশে এসে বসলো মেসবাহ। তার কপালে হাতে রেখে অধীর গলায় বারবার ডেকে উঠলো তাকে।

নীরবতাWhere stories live. Discover now