#নীরবতা #৩৯

430 18 3
                                    


আজ শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। আগে মেসবাহর কাছে ছুটির দিন মানেই ছিল লম্বা একটা ঘুম দিয়ে উঠে গোসল সেরে জুমার নামাযে যাওয়া। এদিনটায় নেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সময়মতো হাসপাতালে যাবার কোনো তাড়া। নেই ছকে বাঁধা কাজের হিসেব, নেই রোগীদের করুন আর্তনাদ ধ্বনি। তবে আজ থেকে মনে হচ্ছে বাধা ধরা কাজের নিয়মে পরিবর্তন আনতে হবে। উল্লাসী অন্তঃসত্ত্বা তারউপর বয়স কম। এর মাঝে তাকে একা হাতে পুরো বাড়ির কাজ সামলাতে দেয়া যাবে না। ছুটি থাকুক বা হাসপাতালে ডিউটি প্রতিদিন সকালে উঠে উল্লাসীকে রান্না সহ সকল ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র কাজেও সাহায্য করতে হবে। দরকার পড়লে গ্রাম থেকে কাওকে আনতে হবে সারাদিন উল্লাসীকে দেখেশুনে রাখার কাজে। আজ অনা বেঁচে থাকলে না হয় আম্মাকে কিছুদিন এনে এখানে রাখা যেত! হঠাৎ অনার কথা স্মরণ হতেই বুকচিরে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল মেসবাহর। অনার মৃত্যু এখনো মেনে নিতে পারেনি সে। কেনো যেনো মনে হয় বেঁচে আছে অনা। তার আশেপাশেই আছে। ব্যাগ হাতে বাড়িতে ঢোকার পর সে ছুটে আসবে তার পাওনাকড়ি বুঝে নেবার জন্য। বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠতেই ঠোঁট চেপে নিজেকে সামলে নিল মেসবাহ। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে এগুলো রান্নাঘরের দিকে।
-"তোমাকে বারবার বললাম মাংস টাংস রাধতে হবে না। অল্প কিছুর মাঝেই করে ফেলো.. কথা কেনো শোনো না তুমি?"
মেসবাহ কড়া স্বরে কথাগুলো বলতেই তার দিকে ফিরলো উল্লাসী। চোখেমুখে কুঁচকে আহ্লাদী গলায় বললো,
-"আমার মাংস খেতে ইচ্ছে করলে আমি কী করবো?"
-"তোমার মাংস খেতে ইচ্ছে করছে?"
-"হ্যাঁ.. খুব।"
-"ঠিকাছে। আমি ধুয়ে পরিষ্কার করে দিচ্ছি। তুমি ওদিকেই থাকো.. নয়তো আবার বমি হবে!"
-"উফ.. বাঁচালেন! আমি আরও ভাবছিলাম আরও একদফা বমির জন্য তৈরি হ উল্লাসী!"
হালকা হেসে মাংসর গামলায় হাত দিল মেসবাহ। একেকটি টুকরো পরিষ্কার করতে করতে উল্লাসীর উদ্দেশ্যে বললো,
-"বাড়িতে কল করবো ভাবছি.. তবে এখন করলে আব্বাকে পাবো কিনা সন্দেহ!"
পেয়াজ কুঁচিকুঁচি করে মরিচে হাত দিল উল্লাসী। আগ্রহী গলায় বললো,
-"কেনো? পাবেন না কেনো?"
-"আমাদের ওখানে জুমার নামাজ অনেক আগেই পড়ায় না? আব্বা হয়তো নামাজেই গেছে।"
-"অহ.. হ্যাঁ! কিন্তু আব্বার তো পায়ে পানি ধরেছে। উনি কী মসজিদে যেতে পারবেন?"
-"ওহহো! এটা তো ভুলেই গিয়েছিলাম! তুমি চুলোয় পেয়াজ মরিচ দাও। আমি কথা বলে আসি।"
-"আপনি যান.. আপনাকে আর লাগবে না।"
মাংসের গামলা উল্লাসীর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে মেসবাহ বললো,
-"বেশি পন্ডিতগীরি করো না! আমি এসে ঢেলে দিব।"
-"ওটুকু আমি পারবো।"
-"পারবে না। দেখি দাও মাংসের ডিশটা। আমি সাথেই নিয়ে যাই।"
-"আরে! ঠিকাছে, আমি নাড়বো না মাংস। রেখে যান ওটা।"
উল্লাসীর কথায় পাত্তা না দিয়ে মাংসভর্তি গামলা নিয়ে ঘরে ফিরে এল মেসবাহ। চার্জ থেকে ফোন খুলে ডায়াল করলো বাড়ির টেলিফোন নাম্বারে।

নীরবতাМесто, где живут истории. Откройте их для себя