বাড়ি ছেড়ে হলে ফেরার সময় হয়ে এসেছে মুবিনের। আবারও তার সেই একঘেয়ে জীবন শুরু। পড়া পড়া আর পড়া, যেখানে নেই একদন্ডের জন্য স্বস্তি। না জানি কবে মুক্তি মেলবে এর হাত থেকে! এদিকে চৈতালি মেয়েটাও এক দৃঢ় ভালোবাসার জালে জড়িয়ে ফেলেছে তাকে। খুব বেশি কষ্ট হয় আজকাল তাকে ছাড়া থাকতে। মন চায় সব ছেড়েছুড়ে গ্রামে এসে চৈতালির আশেপাশে পরে থাকতে। তাকে নিজের করে নিতে। তবে নানান বাঁধার কারণে তা আর হয়ে উঠে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্যাগ গোছানোয় মন দিল মুবিন। বিকেল পাঁচটায় তার ট্রেন। এখন বাজে বেলা বারোটা। বেশি একটা সময় নেই মাঝে...
-"আমি সাহায্য করবো?"
চৈতালির প্রশ্নে চোখ তুলে তার দিকে তাকালো মুবিন। মৃদু হেসে বললো,
-"এসো..."
মুবিনের একটি শার্ট হাতে তুলে নিল চৈতালি। তা ভাজ করতে করতে অভিমানী গলায় বললো,
-"আজ না গেলে হয় না?"
-"অনেক দিন তো হলো এসেছি.."
গলা খানিকটা ধরে এল চৈতালির। ভারী স্বরে সে বললো,
-"কষ্ট হয় আমার.."
-"তোমার এইচএসসির তো আর বেশিদিন নেই। ভালো করে পরীক্ষা দিয়ে কোচিংয়ের জন্য রাজশাহী চলে আসবে৷ চাচার সঙ্গেও এই বিষয়ে আমি কথা বলে রেখেছি।"
-"কোচিং তো মাত্র কয়েকমাসের.. তারপর?"
-"তারপর তোমাকে কোনো না কোনোভাবে আমার কাছেই রেখে দেবো। তোমার এনিয়ে টেনশন করতে হবে না।"
চোখ ভর্তি জল নিয়ে বিছানায় বসে পড়লো চৈতালি। এই একটি দিন কেন আসে তার জীবনে?
-"কাঁদে না চৈতালি। দেখি উঠে দাঁড়াও।"
একরকম জোর করেই চৈতালিকে টেনে উঠালো মুবিন। তারপর নিজের বুকে চেপে বললো,
-"যাবার দিন কান্নাকাটি না করলে হয় না?"
সে কথার জবাব না দিয়ে ভেজা গলায় চৈতালি বললো,
-"আমাদের বিয়ে? তা কী শুধু আমাদের ভাবনাতেই রয়ে যাবে?"
বুকচিরে বেড়িয়ে আসা একটি দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো মুবিন। পঁচিশ বছরের এই জীবনে তার বাবাকে চিনতে আর বাকি নেই তার। চৈতালিকে সহজভাবে মেনে নেবেন না তিনি। নানান অযুহাত দেখাবে, নানান কথা শোনাবে। তবে সেও কম যায় না! বাবা না মানলেও কি করে চৈতালিকে নিজের করে পেতে হয় তাও জানা রয়েছে তার। ম্লান হেসে চৈতালির চুলে ঠোঁট ডোবালো মুবিন। অস্পষ্ট গলায় বললো,
-"উহু.. সেটাও হবে। শুধু একটু বিশ্বাস রাখো আমার উপর।"