১.৫

793 2 0
                                    

রাতে দুজনেরই একটু ভয়ভয় করছিল। আমি নিজের মনে সাহস যোগাতে সোহানীকে বোঝাচ্ছি, কাকা রসিক মানুষ। একটু দুষ্টুমি করেছে। ও এই অজুহাত মেনেছে বলে মনে হয়না।
একটু ভয়েভয়ে দরজায় সিটকিনি মেরে ঘুমাতে গেলাম। শরীর ক্লান্ত থাকায় ঘুম হল।
সকালে আবার জামি কাকা এল। সোহানী আজ বাথরুমে না ঢুকে আমার গায়ের সঙ্গে লেগে রইল। লোকটা আজ অন্যদিনের মতই ফুরফুরে মেজাজে। গতরাতে যে বদ কাজটা করেছে তার কোন স্মৃতিও যেন নেই। তরকারির বাটি নিয়ে চলে গেল। বলল, আমরাই যেহেতু রান্না করে খাচ্ছি, তাই আর খাবার আনছেনা। যদি প্রয়োজন হয় তবে জানালেই হবে।
বেলা বাড়ার পর টিউশন পড়াতে যাবার জন্য বের হতে গেলে সোহানী বাধা দিচ্ছিল। একা একা আর নিরাপদ বোধ করছেনা। আমিও যে পুরোপুরি নিরাপদ বোধ করছি তা না। জামি কাকা রাতে যে ধরণের পাগলামি করল তাতে ভয় থাকবারই কথা মনে। কিন্ত ওনাকে যতটুকু জানি এত বছর এলাকায় থেকে, বড় কোন অঘটন ঘটাবেনা।
তাছাড়া মওলানা সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। সকালে বলছিল আমাকে নাকি আজ আছরের ওয়াক্তে মসজিদে যেতে হবে।
টিউশন থাকায় আমি যে সাধারণত আছরের সময় মসজিদে যাইনা তা কাকার জানার কথা না। মানে, আসলেই তার সঙ্গে হুজুরের লোকজন যোগাযোগ করছে। এরমধ্যে খারাপ কিছু করে ফেলবে বলে মনে হয়না।
সোহানী বলেছিল আজ মাছটাছ আনতে। দুপুর বেলায় মাছ-মাংস পাওয়া দুষ্কর। মাছ পেলাম না, গরু আর সবজি কিনতে হল। একবার পড়ানোর ফাঁকে বাসায় দিয়ে গেলাম।
জোহরের সময় মসজিদে গেলাম না। সোহানী ভয় পাচ্ছিল বলে ভোররাতে ফজর পড়তেও বের হইনি। কাকা সকালে বলছিল একেবারে আছরের সময় যেন যাই।
দুপুর বেলায় বাসায় ফিরলে সোহাকে বেশ এক্সাইটেড দেখলাম। ঢুকতেই বলল,
– আজ নাকি কমিউনিটিতে পুলিশ এসেছিল আবার!
কমিউনিটির এক মহিলা ফোন করে কিছু খবর জানিয়েছে সোহাকে। পলাতকদের মধ্যে একজনের স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছে অনেকক্ষণ। মহিলা মানুষ বলে থানায় নেয়নি। নিলে কওমীরা এক ইস্যু পেয়ে যায়। তবে খবর বের করতে মরিয়া হলে যা দরকার সব করবে পুলিশ।
ওকে সবজি কাটাকাটিতে ব্যস্ত রেখে আছরের সময় বেরোলাম। নামাজের পর ইমাম সাহেব সেদিনের মত ডাকল। তবে আজ বারান্দায় নয়, ভেতরে আলাপ হচ্ছে।
– কি অবস্থা ইমাম সাহেব, কি হচ্ছে?
কুশলাদি সেরে জানতে চাই।
– কি যে হচ্ছে আল্লাহ ভাল জানেন। আমি যতটুকু জানি হুজুর হাজতে আছেন। ঠিক কি কি মামলা দেয়া হয়েছে জানতে পারিনাই, উকিলকে এখনো দেখা করতে দেয়া হয়নি। কেন্দ্র থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে কোর্টে চালান দেয়ার আগে যেন অন্তত জামিন শিওর করা যায়।
– সাক্ষাৎ হয়নি ওনার সঙ্গে কারো?
– সরাসরি হয়নি। থানায় তো দ্বীনের লোক আছে, সেইভাবে কিছু খবর পাঠিয়েছেন। ওগুলো সংগঠনের জন্য… আপনি তো মাশাল্লাহ দায়িত্ব পালন করছেন এত বিপদ জেনেও।
প্রশংসায় মত্ত গলায় বলে ইমাম।
– হুজুরের যা নির্দেশ…
– বিপদ যে আমাদের মহিলাদের উপরও আসতেছে, শুনেছেন?
– পুলিশ নাকি এসেছিল কমিউনিটিতে, ইন্টারভিউ নিয়েছে কার।
– ইন্টারভিউ! কিসের ইন্টারভিউ?
গলা চড়িয়ে ফেলে আবার শান্ত হয় ইমাম।
– দুইটা বদমায়েশ মহিলা পুলিশ নিয়ে এক জানোয়ার এসে হেনস্থা করে গেছে একজন আপাকে। নিকাব খুলিয়ে ছবি উঠিয়েছে, কি বেদতমিজ!
– কাওকে থানায় নিয়ে গেছে?
– না। নিয়ে যেতে চাইবে, সেজন্যই আপনাকে ডাকা। আমাদের মহিলাদের ওদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবেনা। কতরকমভাবে বেজ্জতি করবে আল্লাহ মালুম।
– কি করবেন?
– যাদের স্বামী গোপনে আছেন, তাদের সরানো হচ্ছে। আমাদের লোক দুইজনকে সরিয়ে নিয়েছে।
– কোথায় নিচ্ছে?
– আশেপাশেই মুভ করা হয়েছে।
বুঝলাম আমাকে ভেঙে বলবেনা।
– বাবুল ভাইয়ের ওয়াইফ বাকি আছে। ওনাকেও আপাতত রাখতে হবে আপনার জিম্মায়।
বলে তাকাল আমার দিকে ইমাম।
– আমার? মানে, আমি তো এক নারী নিয়েই বিপদে আছি। আবার আরেজনকে কই রাখব!
ইমাম সাহেব আমার অজুহাত শুনতে প্রস্তত ছিল, ঘাবড়ালনা।
– আর জায়গা নেই, ভাই। আপনি নিজে একটা সেফ জোন। আমাদের সবকিছুতে তো নজরদারি পড়ে গেছে। সুযোগ বুঝে ভেতরের খবর জেনেই আজকে ভাবীসাহেবাকে আপনার হাওয়ালায় দেয়া হবে।

কমিউনিটি সার্ভিস (১৮+)Where stories live. Discover now