৫.১

649 1 0
                                    

শাতিরা বেগমের বিয়ে হয়েছিল পাকিস্তান আমলে ঢাকার বনেদি ব্যবসায়ি-আড়ৎদার পারিবারে। যুদ্ধের সময় পরিবারের কেউ কেউ রাজাকারে যোগ দিয়েছিল। সেই রেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়িঘর ছেড়ে একরকম লুকোচুরি খেলে এদিক-ওদিক ভাড়া বাসায় থাকতে হয়েছে তাদের কয়েক বছর।
পঁচাত্তরে শেখ সাহেবের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আবার অনুকূলে চলে আসে। তবু ব্যবসাপাতি ফিরে পাওয়া, পুরনো জৌলুস উদ্ধার করা সম্ভব হয়না। সে অবস্থানগুলো অন্যকেউ দখল করে নিয়েছে।
শাতিরা বেগম স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসা বদলেছেন বারবার টানাটানি করে। এরমধ্যেই এক জায়গায় থিতু হয়েছেন। জমি কিনে বাসা করেছেন পৈতৃকসূত্রে পাওয়া কিছু অর্থে।
ঢাকায় টিনশেড একতলা বাসা সত্তরের দশকে খারাপ ছিলনা। তাছাড়া সামনে ঘেসো উঠান, ভবিষ্যতে বাড়িঘর তোলা যাবে।
দেশের পরিস্থিতি কখনোই পুরোপুরি ধর্মীয় রাজনীতির জন্যে খুব একটা অনুকূল ছিলনা। বিশেষ করে যুদ্ধের পর তো নয়ই। মানুষ দাড়িটুপি দেখলে সেলাম দেয়, কিন্ত ভোট দেয়না।
শাতিরা বেগমের স্বামী হাকিম চৌধুরি ছিলেন পরিশ্রমী সৎ লোক। সেইসঙ্গে বেজায় ধার্মিক। সাধারণ মোল্লাকুলের হিপোক্রেসি দেখতে পারতেন না। স্বপ্ন দেখতেন আন্দোলনের। পাকিস্তানের পাকাপোক্তভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্র হওয়ার খবরে আফসোস করতেন। কিন্ত এদেশে সে আর হবার কই?
সমমনা সঙ্গী খুজতে খুজতে একটা ছোটখাট দল হয়ে যায়। নিজেরা নিজেদের ‘সংগঠন’ বলতেন। কোন রাজনৈতিক এক্টিভিটি ছিলনা, ছোট গ্রুপ। তারা বিশ্বাস করতেন সমকালীন রাজনৈতিক পরিবেশে ভাল কিছু সম্ভব না। পরিস্থিতি নিজেদেরই বদলাতে হবে। সেজন্যে সময় লাগবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে।
সমমনা হলেও তারা একত্রে এক সমাজে থাকতে পারতেন না, তেমন জায়গা ছিলনা। একই বা আশেপাশের এলাকায় ভাড়া বাসা, নিজ বাড়ি এভাবেই ছিলেন। একটা নিবিড় কলোনির স্বপ্ন অধরা রয়ে যায় আরো অনেক বছর।
শাতিরা বেগম বড় ছেলের জন্যে বৌ দেখার সময় শিক্ষিত মেয়ে খুঁজছিলেন। স্বামী গত হওয়ায় সেদিক থেকে বাধা না আসলেও, ফ্যামিলির ভেতর-বাইরে এর বিরোধিতা ছিল।
গৃহকর্ত্রী নিজে শিক্ষিত হয়ে চৌধুরি বাড়িতে আসেননি। পরে সাক্ষর হয়েছেন নিজ ইচ্ছায়। সঙ্গি হয়েছেনে স্বামীর সাংগঠনিক কর্মকান্ডে। তার সবসময় মনে হয়েছে, সংগঠনটাকে সত্যিকারের অগ্রগতি পেতে হলে নারীদের অংশগ্রহণ দরকার। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে দরকার শিক্ষিত মস্তিষ্ক।
সামিতুন্নেছা সেতু ইডেন কলেজে বাংলা বিষয়ে বি.এ. ফাইনাল পরীক্ষা দেবার পরপর বিয়েটা হয়। বাপের বাড়িতে কিন্ত সবাই মাস্টার-উকিল, শিক্ষিতমনষ্ক ফ্যামিলি। ওপরঅলার ইচ্ছা, ‘সংগ্রামী’ ফ্যামিলিতে বিয়ে হলো।
শাতিরা বেগম নিজে বৌ চয়েজ করেছেন। উচা-লম্বা, ফর্সা চেহারা, ফিট গড়ন আর সুন্দর হাসি – বুঝেছেন ছেলের সঙ্গে মানাবে ভাল। বয়সের ব্যবধানটাও মডারেট।
প্রথম বৌয়ের সঙ্গে বয়সের ব্যবধান কম হলে ভাল বলে ধারণা শাতিরা বেগমের। হাকিম সাহেব যদিও কখনো তার আঁচলছাড়া হননি, ছেলের যে আরো কাওকে মনে ধরবেনা তার নিশ্চয়তা নেই। যেহেতু শরীয়তে আছে, পুরুষের জন্যে চারটে হালাল। ক’বছর যাক, নাতি-নাতকর হলে বড় বৌয়ের শরীরে ভাঙন ধরবে, মুটিয়ে যাবে। ছেলেও চল্লিশের কোঠায় পড়বে। ও বয়সে ভীমরতি হয় অনেকের।
তেমন হলে আর বেঁচে থাকলে শাতিরা বেগম নিজে ষোড়শী পছন্দ করে আনবেন। তাহলে অন্তত এক-দেড় দশক নিশ্চিন্তে কাটবে। ষাটের দিকে যদি আবার ইচ্ছে হয়, তবে বড় বৌ-ই কোন বিধবা মেয়েলোক জোগাড় করে দেবে। বৌ স্কুল-কলেজ পড়েছে তো কি হয়েছে, গড়ে তুলবেন শাতিরা বেগম নিজ হাতে।

কমিউনিটি সার্ভিস (১৮+)Where stories live. Discover now