বিকাশ কলকাতায় এসে খবরের কাগজের অফিসে চাকরিজীবন শুরু করেছে। অফিসে পৌঁছে তার প্রথম কাজ হল--নেতা, মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী অর্থাৎ শহরের খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎকারের জন্য সময় ঠিক করা। প্রতিদিন নিয়ম করে একের পর এক ফোন করে যেত। কথোপকথন শুরু করত তাদের কাগজের নাম উল্লেখ করে। নিজের নাম ব্যবহার করত না। সেটাই স্বাভাবিক, কারণ বিকাশ সেই পেশায় নূতন, কাজেই তার নাম তো বিশেষ কারও জানার কথা নয়। কিছুদিন এইভাবে চলার পর প্রিয় মজুমদার, পত্রিকার সম্পাদক, ব্যাপারটা লক্ষ্য করে মুচকি হেসেছিলেন, কিন্তু প্রকাশ্যে কিছু প্রকাশ করেননি।
প্রিয়বাবু বিকাশের সরল, স্বচ্ছ ব্যবহার প্রথম দিন থেকেই পছন্দ করতেন। গ্রামে বড়ো হয়েছে বলেই হয়তো, শহুরে আদবকায়দা এখনও তার চালচলনে ঠুনকো অহংকারের বদমেজাজি ছাপ ফেলতে পারেনি। এই অফিসে বিকাশকে চাকরিতে বহাল করেছেন প্রিয়বাবু। বিকাশ তাঁর নির্বাচন। নির্বাচকমণ্ডলীর অনেকেই বিকাশকে পছন্দ করেনি যদিও চাকরি পাবার যাবতীয় যোগ্যতা তার ছিল। বিকাশের চেহারায় কোন চটক ছিল না, এবং সেটাই সম্ভবত তার চাকরির অধিকার কেড়ে নেবার পক্ষে যথেষ্ট বলে মনে হয়েছিল তাদের। প্রিয়বাবু সেই অবিচার হতে দেননি। সবার বিরুদ্ধে গিয়ে বিকাশকে যোগ্য পদপ্রার্থী হিসাবে বেছে নেন, এবং তিনি যে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, তা আবারও সর্বজন সমক্ষে প্রমাণ করেন। জয়ের আনন্দ দু-তরফেই। বিকাশের গ্রাম বাংলা থেকে শহরে এসে চাকরি পাওয়ার আনন্দ, আর প্রিয়বাবুর বোর্ডের সবাইকে টপকে অনন্য কিছু করে নিজেকে জাহির করবার সুখ।
সংসারে সবার মাঝে নিজেকে সুখী প্রমাণ করতে গেলে যা যা সামগ্রীর প্রয়োজন, অর্থাৎ নামী-দামী কোম্পানির চাকরি, শহরের ভালো জায়গায় বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি, উচ্চশিক্ষিতা সুন্দরী স্ত্রী, বুদ্ধিদীপ্ত সন্তান--সবই প্রিয়বাবুর করায়ত্ত। প্রিয়বাবু ভেবে দেখেছেন--এই সব উপাধি জীবনে বাঁচতে গেলে যে খুব জরুরী তা নয়, কিন্তু না থাকলে নিজেকে কেমন যেন শূন্য বলে মনে হয়। কোথাও সামান্য ফাঁক থাকলেই মন সেখানে আটকে যায়। যতক্ষণ না হাতের নাগালে পাওয়া যায়, ততক্ষণ মন কিছুতেই শান্ত হতে চায় না।