-"তারান্নুম! ইয়ে মানে স্যরি অসময়ে চলে এলাম। আসলে হয়েছে কি..চাচীর প্রেসারটা আবার বেড়ে গেছে। তৃণাকে যদি বলতে নাচের প্র্যাক্টিস সন্ধ্যার পরে করতে, তাহলে খুব উপকার হয়।"
আমতা আমতা করে দরজার ওপাশ থেকে তারান্নুম অস্ফুট স্বরে বললো,
-"ঠি-ঠিকাছে সাফায়েত ভাই।"
সাফায়েত যেতেই তারান্নুম দরজা লাগিয়ে হুরমুর করে পড়ে গেলো নিজেকে সামলাতে না পেরে আর। সাফায়েতের উসকোখুসকো চুল, শুকিয়ে যাওয়া মুখ দেখে তারান্নুমের কাঁদতে ইচ্ছে করছে খুব। তার শরীরে আগে মাংস যা অবশিষ্ট ছিলো তাও উধাও হয়ে গেছে এখন। চোখ দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি বেরিয়ে আসবে। কি বেহাল দশাই না হয়েছে মানুষটার। মানুষটা এতিম! চাচা চাচীর বাড়িতে চাকরের মত একটা কোণার ঘরে পড়ে থাকে। সুযোগ পেলেই বিসিএস এর জন্য পড়াশোনা করে জান প্রাণ দিয়ে। চাচা থাকায় দু'বেলার অন্ন, বছরে দু'জোড়া বস্ত্র আর মাথার ওপর ছাদ জুটেছে তার। ছাত্র হিসেবে খুবই ব্রিলিয়ান্ট ছেলে সে! পড়াশুনার খরচ সে নিজেই জোগার করে নেয়। রাতে মাথা লুকোবোর মত জায়গা নেই তার। তাই তো মরে মরে বেঁচে থাকার জন্যই সে শতবার লাঞ্চিত হয়ে ও যায়না এখান থেকে কোথাও। সাফায়েতের এক এলাকার বন্ধু হারুন কতবার যে বুঝিয়েছে তাকে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে। বুকের মাঝখানটায় কষ্টখানা লুকিয়ে সে প্রতিবার বলে,
-"মা বাবা নাই! কোথায় যাবো? চাচা-চাচীজান থাকতে দেন, খেতে দেন। বছরে দু'জোড়া বস্ত্র দেয়। আর শাসন করবেই তো! ছেলের মত মনে করে যে আমায়।"
কথাগুলো তারান্নুম একবার কলেজ থেকে আসার সময় শুনেছিলো। সাফায়েতের গলা ধরে আসছিলো সে সময়। কীভাবে ভুলে সে সাফায়েতের প্রতিটা কষ্টের গল্পগুলো? তার প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটা অন্যায়ের কথা? মাঝে মাঝে তার উদ্দেশ্য তার চাচীর অকথ্য ভাষায় গালাগালি, কানাঘুষো শুনে তারান্নুম রান্নাঘরে কাজ করতে করে। তখন লজ্জায় তার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে। মনে মনে একটা জিনিস ভেবে খুশী হয় আর বলে, 'ভাগ্যিস সাফায়েত ভাই সামনে নেই।' নাহলে মানুষটা চোখ তুলে তাকাতে ও পারতোনা তার দিকে। মানুষটাকে একটুও দেখতে পারেনা তার চাচী! কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করে সারাটাক্ষন। অথচ সেই চাচীকে কত শ্রদ্ধাই না করে সাফায়েত। মানুষটার মন তুলোর মত নরম, মুখের বুলি যেন মধুর চেয়ে ও মিষ্টি। মা বাবা না থাকলে কি এত কষ্ট জুটে একটা মানুষের কপালে? বিড়বিড় করে তারান্নুম বলে উঠলো, 'আল্লাহ তুমি সাফায়েত ভাইয়ের সব দুঃখ আমায় দিয়ে দাও। উনার কষ্ট আমায় কুড়ে কুড়ে খায় যে প্রতিদিন! রহম করো খোদা, রহম করো মানুষটার ওপর। তুমি তোমার বান্দাকে এভাবে কষ্ট কেন দিচ্ছো? উনি তো খারাপ মানুষ নন!' মনের অজান্তেই সাফায়েতের কষ্টের কথা ভাবতে ভাবতে তারান্নুমের চোখ থেকে দু'ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
ВЫ ЧИТАЕТЕ
দুই মঞ্জিলের গল্প(completed ✅)
Любовные романыসময়কাল ২০০০ সনের আশে পাশেই। কিছু সুখবতীদের গল্পের মাঝে ঢাকা পড়ে যায় দুঃখবতীদের গল্পগুলো। দুই দুঃখবতীর আপ্রাণ চেষ্টা এক হওয়ার। কিন্তু হায়, কেউ কি এটুকু ও বুঝেনি যে সমাজ ভালোবাসাকে খুনের মত পাপ বানিয়ে দেয়? যতদিন ঘনায়, ততই কেন দুঃখদের ভেলা চেপে বসে দুঃ...