পর্ব ৯

146 10 0
                                    

তৃণা আয়নায় বোনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলো। ধোপাসে কাঁচা কলাপাতা রঙের শাড়ি তার বোনের পরনে, ঘনকালো চুলগুলো খোঁপায় বাঁধা, আর চোখে হালকা কাজল। হাসিহাসি মুখ করে তৃণা বোনের দিকে ফিরে বললো,

-"আপা? তুই সত্যিই কলেজে যাচ্ছিস আজ?"
-"হ্যা। আসলে তুই আর বাবা গত দু'মাস যাবৎ বলছিস। কিন্তু আমি শুনছিনা তোদের চিন্তায় পড়ে।"
-"আমাদের চিন্তা কম করবি আপা। তোর লাইফে চিন্তা করার জন্য অনেক কিছুই আছে এখনো। এত তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে গেলে চলবে?"

তৃণা সাফায়েতের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে বললো। তারান্নুম বুঝে উঠলেও কিছু বললোনা। লজ্জামাখা মুখে বললো,

-"কেমন যেন লাগছে রে তৃণু! এতদিন পর যাচ্ছি কলেজে আমি। তাও শাড়ি পড়ে। আগে তো সেলোয়ার-কামিজ পড়তাম।"
-"তো কি হয়েছে? এতদিন সেলোয়ার কামিজ পড়তি, এখন থেকে শাড়ি পড়বি। এটাকেই উন্নতি বলে। আর শাড়িতে তোকে অপূর্ব লাগে রে আপা।"

তারান্নুম আচমকা বোনকে জড়িয়ে ধরলো। বুক ভরে নিশ্বাস নিলো তৃণার চুলগুলোতে।তিনটা মাস পার হয়ে গেছে দু'বোনের জীবন থেকে মা নামক মানুষটার চলে যাওয়ার। অনেকগুলো দুঃখময় রাত কেটেছে। এই দুঃখের অন্ত কখনো হয়না। কিন্তু এটা নিয়েই তো সারাজীবন কাটানো যাবেনা। জীবনকে চলে যেতে হয় কোনো এক অজানা ভবিষ্যতের উদ্দেশ্য।

আয়নার খুব কাছে এসে নিজের চোখের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে তারান্নুম বললো,

-"তিন মাস পর যাবো রে। আগা মাথা কিছুই বুঝবোনা মনে হচ্ছে।"
-"আরে বুঝবি রে আপা বুঝবি! মা যাওয়ার পর পুরো দু'মাস আমি পড়াশোনা করিনি এক রত্তি। হাতে সময় আছে আর মাত্র এক মাস। এই মাসের পর তো বন্ধ। এরপর সোজা নিবে পরীক্ষা।"
-"চিন্তা করিস না। সব ঠিক হবে।"
-"তোর দেরী হচ্ছেনা?"
-"হ্যা হচ্ছে। চল তোকে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবো।"

.

-"চাচীজান, আমার সত্যিই দেরী হচ্ছে। ভার্সিটির বাস ছেড়ে দিয়েছে। যেতে হবে।"
-"এই! কি কইলি? তোর দেরী হইলে ও আমার কিচ্ছু না! আমার ঘরে থাইকতে হইলে আমার কথায় উঠবি আর বইবি।"
-"চাচীজান, আমি এসে করে দেবো আপনার কাজ।"
-"তোরে কইলাম আমার কাম এহন করন লাগবো মানে এহনই করন লাগবো। যা আমার কাম কইরা এরপর যেইখানে যাবি যা। মা বাপে থুইয়া গেসে, আশ্রয় দিছি। কুথায় সাত রাজার কপাল মনে করবি হেইডা না, আমার মুখের উপ্রে কথা কস!"

দুই মঞ্জিলের গল্প(completed ✅)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora