পর্ব ৩১

155 9 3
                                    


শীতকালের সবথেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে ঘুম। নরম নরম লেপের তলে বরফ শীতল দেহটা যখন উষ্ণ হতে শুরু করে, তখন মাথায় শুধু একটাই চিন্তা আসে। কীভাবে সারাদিন গড়িয়ে নেয়া যায় এই লেপের তলে! তখন হাঁক ছুড়ে বলতে ইচ্ছে হয়, আজ একদিন স্কুলে হাজিরা না দিলে হবে কি শুনি? আজ অফিসে না গেলে চাকুরি তো যাবেনা, তাইনা? আচ্ছা আজ রান্নাটা না করলে কি হয়না? আছে তো খাবার অনেক কিছু! শীত আমেজ যেমন থাকে, শীতের দিনে বাহানারা ও তেমনি তৈরী থাকে সেজেগুজে রঙিন মোজা পায়ে। কিন্তু ব্যস্ত নগরীরা হয়ে উঠছে দিনদিন আরো ব্যস্ত। সাথে ব্যস্ত হচ্ছে সেইসব নগরীর বাসিন্দারা ও। পাচ্ছেনা কেউ এটুকুন ও সময় দম ফেলার, পরিবার নিয়ে আনন্দ ফূর্তি করার, নিজেকে সময় দেয়ার! ছুটছে সবাই আপন গতিতে একটুখানি বেশী উপার্জন করতে প্রতিদিন। কারো গতি কচ্ছপের তো কারো গতি খরগোশের। জমিনে মানবসমাজের প্রতিযোগিতা চলছে তো খোলা আসমানে চলছে পক্ষীসমাজের। এইতো! দিব্যি চলে যাচ্ছে জীবন এভাবেই।

খুব ভোরেই এসে পৌঁছেছিল ট্রেন চট্টগ্রামে। তাই জহির আর শাহনাজ ও গেলনা নিজেদের বাড়িতে। চলে আসল নব দম্পতির সাথে টিচার্স কোয়াটারে ,তাদের ছোট্ট নীরে। ঢুলুঢুলু চোখে সবাই হাতড়ে হাতড়ে এক এক কোণ খুঁজে শুয়ে পড়েছিল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমানোয় যে কেউ হঠাৎ দেখে ভাববে এরা হয় নির্ঘাত জংলী আর নাহয় অভ্যস্ত না এমন বাসা বাড়িতে থাকতে! নাহলে এমন মরণদশা করে কেউ ঘুমায় নাকি? সাড়ে নয়টার দিকে সর্বপ্রথম তারান্নুমেরই ঘুম ভাঙে। ঘুমের রেশ যে অনেকটাই রয়ে গেছে তখনো তা চোখে মুখে স্পষ্ট। আলতো পায়ে পায়চারী করতে করতে রান্নাঘরের দিকে গেল। হালকা চাপে জানালার কপাট খুলে দিতেই এক পশলা রোদ এসে রাঙিয়ে দিলো তার দেহ মনকে। শীত সকালে রৌদ্রস্নান মানেই এক ভালোলাগার অনুভূতি। হালকা দমকা বাতাস উইন্ডচাইমটার গায়ে লাগতেই ওতে থাকা বেলগুলি টিনটিন করে বেজে উঠল । কি মিষ্টি লাগে না শুনতে? মন চায় বারবার বাতাস এসে ছুঁয়ে যাক ওই উইন্ডচাইমকে। ওদিকে হাড়িতে বসিয়েছে তারান্নুম চা। ফুটন্ত পানিতে নাচতে শুরু করে দিয়েছে চা পাতারা। ভুরভুর করে ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছে চায়ের সুভাস সারা ঘরময়।

দুই মঞ্জিলের গল্প(completed ✅)Where stories live. Discover now