পর্ব ২৯

130 12 5
                                    

দুই তিনদিনে নব দম্পতির ঘরটার খুব একটা উন্নতি হয়নি। জিনিসই না থাকলে উন্নতি হবেই বা কি করে? কিন্তু তাতেও দুজন ভারী খুশী। কিছু থাকুক আর না থাকুক! সেই ঘরে যেন আছে শান্তি। ঘরে উঠার আগেই শান্তি শান্তি অনুভূতি দুজনেরই। যেন হাতে এসেছে সাত রাজার ধন। তবে গোছগাছ করে তারা আজই চলে যাচ্ছে খুলনা, তারান্নুমের ভাইয়ের বাসায়। কাল রাতের ট্রেনে ফিরবে আবাড়। বউয়ের বড় ভাই দাওয়াত করেছে। না গিয়ে পারে?
ট্রেন আপনমনে চলছে তো চলছেই। ঝুম ঝুম ঝুম! ট্রেনের ভেতরের ছোট ছোট অলিগলিতে হকারি করে বেড়াচ্ছে বেশ কিছু বয়স্ক-মধ্যে বয়স্ক লোক। শাহনাজ আর তারান্নুম কথা বলছে, কথা বলতে বলতে কখনো হেসে উঠছে। জহির নিশ্চিন্তে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। সাফায়েতের হাতে আজকের পত্রিকা, মন আর নজর তার ওতেই আটকে আছে। নন্দিনীর আসা আর হলো না। পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে তাকে আজ। ওদিকে নাদিমেরও খুব জরুরি কাজ পড়ে গেছে। শাহনাজের স্বামী ও ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে কেটে পড়েছে। ট্রেনের বিশাল বিশাল জানালা দিয়ে যতদূর চোখ যাচ্ছে ততদূরই নজরে আসছে শস্য ও অন্যন্য শাক সব্জি ও ফলমূলের ক্ষেত। কিছু কিছু জায়গায় দুলছে সোনালী রঙের শস্য। রোদের ঝিলিক পড়তেই সেই সোনালী রঙ যেন বারবার হয়ে উঠছে স্বর্ণ। দূরের এই ক্ষেত পেরোলেই আছে একখানা প্রবাহিণী। তার ওপরেই যেন বরদাস্ত উজ্জল সোনালী বর্ণের এই সূর্য।
ট্রেন খুলনা এসে পৌঁছেছে বরাবর দুপুর বারোটায়। কোনো হেরফের হয়নি সময়ের! সবাইকে স্টেশন থেকে নিতে শিহাব এসেছে। বিয়ের পর বোন প্রথমবার এসেছে। সাফায়েতকে এবারে দেখে একটু খারাপ অবশ্য লেগেছে। এভাবে হুট করে বিয়ে করলে রাগ লাগারই কথা। কিন্তু সে গায়ে মাখল না কিছুই। মনে মনে অনেক কিছুই ভেবে রেখেছে সে। খারাপ ভাবলে সব খারাপ হয় বলে কথা!

বাসায় আসতেই রেণু আর মাহিন জাপ্টে ধরল তারান্নুমকে। কতদিন পর এসেছে মেয়েটা! মা ছেলে দুজনেরই যেন মন ভরতে চাইছেনা তাকে দেখে। ভাতিজা চায় ফুফু তার পাশে বসে থাকুক আর ভাবী চায় ননদিনী তার পাশে বসে জুড়ে দিক হাজার হাজার গল্প।

-"তারু! বিয়ের পর তোকে এত সুন্দর লাগছে রে..মাশাল্লাহ!"

তারান্নুম লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসল। বিয়ের পর কি সব মেয়েকেই সুন্দর লাগে? তার মনে আছে শাহনাজের বিয়ের পর তারা আর নন্দিনীর কাছে মেয়েটাকে তাদের কতখানি অপূর্ভ লেগেছিল। তারান্নুমের মনে হয়েছিল, এই কাব্যিক রূপ চোখ ঝলসে দেয়ার মতোই। সবাই পরিচিত হয়ে একে একে ফ্রেশ হয়ে নিল। রেণু হরেক পদ রান্না করেছে মধ্যাহ্নভোজের জন্য। ভীষণ ব্যস্ত আর উদ্দীপ্ত দেখাচ্ছে তাকে। সাথে ক্লান্ত ও! মাহিন বারবার এসে শাড়ির আঁচলে টান দিচ্ছে। যতবার বাচ্চা কাছে আসছে হাসি হাসি মুখে ততবারই রেণু ছেলের আদুরে মুখটায় হাত বুলিয়ে বলছে, 'কাজ করে আসছি সোনা! তুমি খেলো।' খাবার টেবিলে রেণুর হাতের তৈরী সব ক'টা রান্নার আয়োজন আয়েশ করে জায়গা করে নিয়েছে। দুপুরের খাবারে ভালো মাছের আয়োজন করা হয়েছে, সাথে আছে টিপিকাল বাঙালে নিরামিষ। কাতাল মাছের মাথার ঝোল, ছোট মাছের চচ্চড়ি, ঈলিশ ভুনা, কলার মোচা, বেগুন আলু আর শিমের সব্জি। সাথে করেছে নতুন করে তার শেখা মাছের কোফতা। এই জিনিস সে তারান্নুমের জন্যই শিখেছে মূলত! এতদিন পর এসে নতুন কিছুর স্বাদ ও তো নিতে হয়! রেণুর মনে হচ্ছে সব আগের মতো হয়ে গেছে। তারান্নুম আর তৃণা স্কুল থেকে ফিরছে। রেণু আগ্রহের সাথে খাবারের বাটিটা দুই বোনেরএগিয়ে দিয়ে বলছে, 'আজ নতুন রাঁধলাম। পেপারে দেখেছি! তোমরা খেয়ে বলো কেমন হয়েছে? মিথ্যা প্রশংসা করবেনা কিন্তু! খবরদার। তোমাদের ভাই নাহলে আবার হাসবে আমায় নিয়ে।' রেণু হেসে উঠল পুরোনো কথা মাথা নাড়া দিয়ে উঠতেই। কিন্তু কারো হাতের ঝাঁকুনিতে ছিন্নবিন্ন হয়ে গেল তার চিন্তাধারণা। পাশ ফিরে দেখে ননদিনী মুচকি মুচকি হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। মিষ্টি করে না হেসে আর পারল না রেণু।

দুই মঞ্জিলের গল্প(completed ✅)Tempat cerita menjadi hidup. Temukan sekarang