রাত থেকেই মনে কু ডাক আসছিলো তারান্নুমের। ভোর রাতেই উঠে পড়েছিলো। উঠে সবার আগে মা'কে দেখে এসেছে। গায়ের কাঁথাটা গলা অব্দি টেনে দিয়েছিলো। এরপর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে এক কাপ চা ও খেয়েছে! চা ছাড়া সকালই অচল তার। বাবা শাহেদুল আলম বসার ঘরেই ঘুমিয়ে পড়েছেন কাজ করতে করতে। আর তৃণা উঠবে আরো সময় করে। অলস দুপুরের মতো অলস ভোররাত তার। আকাশে চাঁদের ওই বাঁকানো অবয়বটা এখনো দৃশ্যমান। মনে মনে তারান্নুম বলে উঠলো, 'সময় তো অনেক হলো! আরেকবার মা'কে দেখে আসি।'
আলতো পায়ে মায়ের ঘরের দরজায় এসে দাঁড়তেই তারান্নুমের চোখজোড়ার আকার দ্বিগুণ হয়ে যায়। তার মা জোহরা সারোয়ার নিশ্বাস নিতে পারছেন না, এক অদ্ভুত ভাবে কাঁপছে! মনে হচ্ছে কেউ যেন তার গলা চেপে ধরেছে। 'কি হয়েছে? কিছুক্ষণ আগেও তো মা ভালো ছিলো!' মনে মনে ভাবলো তারান্নুম। মায়ের বেহাল দশা দেখে আকাশ কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলো সে।
দৌড়ে মায়ের পাশে এসে বসলো। কপালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
-"মা? মা উঠে বসো। এমন করছো কেন তুমি? কেমন লাগছে মা তোমার?
মা কথা বলছেনা। শুধু কাঁপছে চোখ বন্ধ করে। তারান্নুম কাঁদোকাঁদো মুখে আবারো বললো,
-"মা তোমার কি হয়েছে? মা কথা বলো না! চোখ বন্ধ করোনা প্লিজ। চোখ খুলো মা। বাবা! ও বাবা! বাবা দেখো না কেমন করছে মা!"
জোহরা সারোয়ার বুক চাপড়াচ্ছেন বারবার। মনে হচ্ছে তার বুকের সাথে কত ভারী একখানা পাথর বেঁধে দিয়েছে কেউ। বুক ফেটে কান্না আসছে চাইছে, দু'চোখেই অশ্রুজল টলমল করছে। নিশ্বাস ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে তার। এমন লাগছে কেন তার হঠাৎ? কাল রাতেও তো ভালো লাগছিলো! তাহলে কি তার সময় ঘনিয়ে এসেছে? এতো তাড়াতাড়ি? তার তো সুস্থ হওয়ার কথা ছিলো। কথা ছিলো তার প্রাণপ্রিয় স্বামী আর দুই চোখের মণিদের নিয়ে বেশ কিছুদিনের জন্য নিরুদ্দেশ হওয়ার। তাহলে কি কিছুই করা হবেনা তার আর? মনে মনে বললো, 'ভালো করেছি চিঠিগুলো আগেভাগেই লিখে।' প্রাণপ্রিয় স্বামী আর দুই কন্যার জন্য তিনটে চিঠি লিখেছেন জোহরা সারোয়ার। গত পরশু লিখেছিলেন চিঠিগুলো। ভেবেছিলেন লিখতে লিখতেই তিনি গত হয়ে যাবেন। কিন্তু পরম করুণাময় তাকে এটকু আশা পূরণ করার পরিপূর্ণ সময় সুযোগ ঠিকই দিয়েছিলেন!
YOU ARE READING
দুই মঞ্জিলের গল্প(completed ✅)
Romanceসময়কাল ২০০০ সনের আশে পাশেই। কিছু সুখবতীদের গল্পের মাঝে ঢাকা পড়ে যায় দুঃখবতীদের গল্পগুলো। দুই দুঃখবতীর আপ্রাণ চেষ্টা এক হওয়ার। কিন্তু হায়, কেউ কি এটুকু ও বুঝেনি যে সমাজ ভালোবাসাকে খুনের মত পাপ বানিয়ে দেয়? যতদিন ঘনায়, ততই কেন দুঃখদের ভেলা চেপে বসে দুঃ...