পর্ব ১৮

128 14 10
                                    

বিকেল পাঁচটা বাজতে মিনিট চারেক বাকি। তৃণা বেঘোরে ঘুম। আকাশে সোনালী লাল আভা বেশ ভালোভাবেই ছড়িয়েছে। কারো বাড়ি থেকে কড়া ফুলের কড়া ঘ্রাণ ভেসে আসছে। হাতে থাকা চায়ের থেকে চা পাতা, এলাচি, আদার এক মিহি সুগন্ধি দেহ মনকে কাবু করে ফেলছে। ব্যালকনিতে থাকা বেতের মোড়াটায় বসতেই বেলটা বেজে উঠল। তারান্নুমের কপালে জোড়ায় জোড়ায় পড়ছে দুশ্চিন্তার রেখা৷ মন প্রশ্ন করে উঠল, 'কে আসতে পারে এই সময়ে?' বাবা হলে তো চাবি দিয়ে দরজা খুলেই আসতো। হাতে থাকা চায়ের কাপটা মেঝেতে রেখে দিল। একবার ভাবল খুলবে না। কারণ আগে খুব বেশী কেউ না আসলেও তাদের মামারা আসতো। কিন্তু জোহরা সারোয়ার মারা যাওয়ার পর থেকে তাদের আনা গোনা ও বন্ধ হয়ে গেছে । বেল আরো দু'চারবার বাজল। সোফায় থাকা ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিল। বিরক্ত হয়ে শেষমেশ দরজাটা খুলে তারান্নুম অবাক হয়ে গেল।

-"আপনারা এই সময়ে?"
-"চমকে দিলাম নাকি?'
-"ভীষণ।" তারান্নুম অপ্রস্তুতভাবে হেসে বলল।

নিচু স্বরে তারান্নুমের কানের পাশে নন্দিনী বলে উঠল,

-"সাফু আজই তোমার চিঠি পেয়েছে। আর আমাদের আজই আসার হুকুম করেছে, তাই এসেছি।"
-"ভালো করেছেন। আপনারা আমার রুমে গিয়ে বসুন আমি এক্ষুণি আসছি।"

ঘরে তেমন কিছু না থাকায় তারান্নুম ও যেন পড়ল বিপাকে। কি দেবে ভেবে ভেবে সে ফ্রিজ খুলল। সাত পাঁচ ভেবে দইয়ের হাড়িটা উঠিয়ে নিল। দশ মিনিতের ভেতরে কোনোমতে দুই গ্লাস লাচ্ছি বানিয়ে নন্দিনী আর শাহনাজকে দিল। নন্দিনী লাচ্ছি দেখেই খুশিতে খিলখিলিয়ে উঠল। লাচ্ছি তার বড়ই পছন্দের জিনিস বলে কথা! তার খুশী দেখে তারান্নুমের একবার ভাবল, 'এত বড় ঘরের মেয়ে। সে কি না সামান্য লাচ্ছিতেই খুশী?'

-"আসলে বাইরে যাইনা আমি। ঘরে ওভাবে কিছু আনা ও হয়না তো। তাই আর কিছু দিতে পারলাম না। আপনাদের।" কিছুটা লজ্জা নিয়ে বলল তারান্নুম।

শাহনাজ তারান্নুমের চিবুক ধরে বলল,

-"এই মেয়ে৷ আমরা এখানে কি খেতে এসেছি? জরুরি কাজে এসেছি। তুমি এতটুকু করলে আমাদের জন্য এটাও অনেক।"

দুই মঞ্জিলের গল্প(completed ✅)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora