পর্ব ১৭

145 9 3
                                    

পরের দুইদিন তারান্নুমের খানিকটা ব্যস্ততায় কাটল। যাবতীয় জিনিসপত্র সব একজায়গায় জমা করেছিল। জমানো টাকা, কিছু কাপড়, জোহরা সারোয়ারের রেখে যাওয়া সেই চিঠিসহ আরো বেশ কিছু জিনিস। তার সবকিছু তৃণাই। কিন্তু তৃণাকে সাথে করে নিয়ে যাওয়া হবেনা ভাবতেই তার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। নিজেকে তার খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে । ছোটবোনকে এভাবে বিপদে ফেলে রেখে সে লেজ গুটিয়ে পালাচ্ছে। কিন্তু সে ও যে নিরুপায়! সে না পালালে দু'জনই সমস্যার বেড়াজালে আটকা পড়বে। তৃণাকে না হয় পরে সে যেভাবেই হোক নিয়ে যাবে।

ঘড়ির দিকে তাকাতেই সে হন্য হয়ে ছুটে গেল ল্যান্ডফোনের দিকে। ঘরের সব কাজ শেষ এখনের জন্য। তার হাতে রাইটিং প্যাডটা আছে। কি একটা ভেবে নিয়ে যেন একটা নাম্বারে ডায়াল করল। চারবার রিং পড়তেই এক মহিলার কণ্ঠ বলে উঠল,

-"হ্যালো?"
-"মিসেস দোলন?"
-"বলছি। আপনি কে?"
-"শুভ সকাল। আমরা ল্যান্ডফোন সার্ভিস অফিস থেকে বলছি। আপনার বাসা থেকে কমপ্লেইন্ট এসেছিল আওয়াজ নাকি কম শোনা যায়। আমরা ঠিক করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে আর এমনটা হবেনা ম্যাডাম।"
-"ও আচ্ছা। ধন্যবাদ আপনাদের।"

তারান্নুম অনেক্ষণ ভেবে চিন্তে ও বুঝে উঠতে পারল না এই মহিলা কে। ভাবার পরে খুঁজে না পেয়ে খুব একটা আর মাথা ঘামালো না সে। তার চিন্তা কীভাবে সাফায়েতকে ইনফর্ম করবে বিয়ের ব্যাপারে! বেশ কিছুক্ষণ এদিক ওদিক হাঁটল, কিছুক্ষণ বসে কিছুক্ষণ শোয়! ভাবনার জুড়ি নেই। কিন্তু প্রায় আট - ঘন্টা পরে তার কপাল থেকে চিন্তার রেখা মুছে গিয়ে সেই রেখা তার ঠোঁটে ফুটতে দেখা গেল।

.

-"সাফু তুই টেনশন নিস না। কাল পরশু তোর পরীক্ষা। এমন টেনশন করলে কিছুই ঠিক হবেনা রে।" শাহনাজ বলে উঠল।

নন্দিনী তার দাঁত দিয়ে নখ খুঁটতে শুরু করল। তার মাথায় আজকাল গাঙ্গুলি না, সাফায়েত আর তারান্নুমই থাকে শুধু। সে চায় যেভাবেই হোক দু'জনকে এক করে দিতে। কিন্তু কীভাবে তা সে জানেনা! বন্ধুর মুখের দিকে তাকালেও তার খারাপ লাগে আজকাল৷ নেই মা বাবার ছায়া মাথার ওপর, তার ওপর এত ঝামেলা মাথায় নিয়ে আছে।

দুই মঞ্জিলের গল্প(completed ✅)Where stories live. Discover now