ভোর থেকে সকাল হওয়া অব্দি কেউই আর ঘুমায়নি। চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছে পাঁচজনে। থেকে থেকে নাদিম যদিও শাহনাজকে মনে করছিল। আড্ডায় যদিও সেদিন একটুও মন ছিল না সাফায়েত আর তারান্নুমের। দু'জনে সুযোগ পেলেই একজন আরেকজনকে দেখতে ব্যস্ত ছিল। আড্ডাকে প্রখর করতে যোগ হয়েছিল চা মুড়ি আর বিস্কিট! ঘন্টাখানেক আগে নিজের পরিবার ছেড়ে আসা মেয়েটি হয়তো ভাবেনি যে পরিবারের বাইরেও আছে এক দুনিয়া। যে দুনিয়ায় সবাই রঙবেরঙের পাখি হয়ে বিচরণ করে সারা গগনে। ছুটে বেড়ায় আজানা কোনো কোনো নক্ষত্রমন্ডলে নিজ প্রাণের মায়া ছেড়ে। শুষে নিতে চায় নিজেদের মধ্যে সেই মৃদুমন্দ বাতাসে উড়তে থাকা শুদ্ধতা-বিশুদ্ধতাকে!
তার যা খারাপ লাগছে তা কেবলই বোনটার জন্য লাগছে। না হলে পরিবারের প্রতি তার মায়া তো অপহৃত হয়েছিল সেদিন মায়ের মৃত্যু ঘটতেই! এতদিন যা ছিল তা ছিল শুধুই দায়িত্ব, মোহ! মানবধর্ম মানুষকে বাধ্য করে অন্যর জন্য করে যেতে। কিন্তু মানবধর্ম তো এও শেখায় যে 'আগে নিজে সুখী হতে শেখো! তবেই না তুমি অন্যকে সুখে রাখিতে পারিবে।' আজ তার সুখের পথে পাড়ি জমানোর প্রথম দিন। এই সুখ শুধু তার! তার আর তার সাফায়েত ভাইয়ের।
.
সকালে উঠেই প্রথমে তৃণা সবসময় বুঝতে চেষ্টা করে তার আশেপাশে হচ্ছে কি। কি ঘটছে, কে কি করছে এসব। অন্যদিন তার বোন হয় রুমের জানালায় দাঁড়ায় আর না হলে কোণায় থাকা বেতের সোফায় বসে ডুবে যায় বিদ্যার সাগরে।এক হাত তার চুলের খোঁপা ধরে আছে অন্যহাত বিচক্ষণের মতো ক্লিপ খুঁজে চলছে। ক্লিপের নিচে থাকা কাগজে হাত পড়তেই তৃণা ভালোমতো চোখ খুলে ফেলল। খোঁপায় থাকা হাতটা নিয়ে আসতেই খোঁপাটা আস্তে আস্তে খুলে গেল। একটা চিঠি, তার বোনের। সে পালিয়েছে! কয়েক মিনিটের জন্য তার হুশ চলে গেল যেন চিঠি পড়ে। ধীরে ধীরে দাঁড়াতে গিয়ে অনুভব করল তার প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে কাঁপছে। কেমন কেমন অনুভূতিতে ছেয়ে গেছে ভেতরটা। উঠতে গিয়েও আবার সে বসে পড়ল। কানে ভেসে আসছে বাবার রাগান্বিত গলা আর বন্ধ দরজায় পড়তে থাকা বেদম প্রহার। কিন্তু দাঁড়ানোর মতো জোর তার পা পাচ্ছেনা। কি করবে সে? কি বলবে বাবাকে সে? এই সমাজই বা কি বলবে তাদের? কি নামে জানবে তার বোনকে? তার পরিবার কে! লোকমুখে কি কথা উঠবে ভাবতেই তাই গলা শুকিয়ে গেল। কথা বলার চেষ্টা করতে গিয়ে তার কান্না পেল। কোনোভাবে সে কাঁপাকাঁপা গলায় চেঁচিয়ে বলল, 'বাবা তুমি বসো। আ-আমি আসছি।'
ŞİMDİ OKUDUĞUN
দুই মঞ্জিলের গল্প(completed ✅)
Romantizmসময়কাল ২০০০ সনের আশে পাশেই। কিছু সুখবতীদের গল্পের মাঝে ঢাকা পড়ে যায় দুঃখবতীদের গল্পগুলো। দুই দুঃখবতীর আপ্রাণ চেষ্টা এক হওয়ার। কিন্তু হায়, কেউ কি এটুকু ও বুঝেনি যে সমাজ ভালোবাসাকে খুনের মত পাপ বানিয়ে দেয়? যতদিন ঘনায়, ততই কেন দুঃখদের ভেলা চেপে বসে দুঃ...