মাঝখান দিয়ে কেটে গেল আরো বেশ ক'টা দিন। কিন্তু দেখা মিললো না তারান্নুমের। সে বাড়ির দিকে দেখে এসেছিল, একটুখানি দেখা পাবে এই আশায়। মেয়েটাকে দেখতে না পাওয়ায় টেনশনে সাফায়েতের জান যায় যায় অবস্থা। একদিকে মনের মানুষটার দেখা না পাওয়ার যন্ত্রনা আরেকদিকে মনে থাকা সকল অনুভূতি মেয়েটাকে না বলতে পারা যন্ত্রনা তার। দুইয়ে মিলে সাফায়েতের ঠাই হয়েছে অস্থিরতায়। এমনটা হবে জানলে হয়তো সে আগেই উড়িয়ে দিতো মনের অনুভূতি নামের পাখিদের।
বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে সাফায়েত বেশ কিছুক্ষণ ধরে। গত দশ মিনিটে সে কতবার যে পালা বদল করছে তাই গুনছে বন্ধু জহির। কি করবে সাফায়েত? স্বস্তি পাচ্ছেনা কিছুতেই সে। হয়তো বা স্বস্তি পাবে ও না মনের মানুষটাকে না দেখা পর্যন্ত। বিরক্তি লেপানো কণ্ঠে জহির চেঁচিয়ে বলল,
-"তুই ঘুমাবি নাকি ঘর থেকে বের করে দেবো তোকে?"
-"ঘুম আসছেনা রে! আমার কথা মেনে নে। কালই পাঠাই আমরা নন্দি আর নাজুকে। ওরা জেনে আসুক সব অবস্থা। তুই বলিস একটু ওদের।"
-"তুই ব্যাটা আসলেই খারাপ!"
-"কেন? কি করলাম আবার?"
-"ওই কেউটে সাপকে আমি কিছু বলতে গেলে ছোবল মারবেনা সোজা গিলে নেবে আমায়।"
-"যাহ! ও অতটা খারাপ না। তুই ক্ষ্যাপাতে যাস কেন ওরে? সাধে ছোবল মারতে চায় নাকি তোকে?"জহির কিছু বলার আগেই নাদিম চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,
-"তোদের মাথায় গোবর ঠাসা নাকি রে? রাতের বাজছে দুইটা। তোরা না ঘুমিয়ে মোড়ের কুত্তাদের মতো চেঁচাচ্ছিস! এই সাফু ঘুমা তো। কাল সকালে তোর সব কথা শুনবো। এখন ঘুমাতে দে আমায় শান্তিতে আর তোরা ও ঘুমা।"
শাহেদুল আলম আর তৃণা তারান্নুমের খবর ইদানীং না নেয়ায় তার খুব সাহায্য হয়েছে নিজের বাবার ওপর নজর রাখতে। তৃণা ঘুমিয়ে পড়েছে অবশ্য পড়তে পড়তে। পড়ন্ত অবস্থায় একবার সে ঘুমিয়ে পড়লে তার ঘুম সকাল না হওয়ার আগে ভাঙেনা। শাহেদুল আলম বসে বসে আজো কথা বলছেন। গত কয়দিন ধরেই তৃণা ঘুমিয়ে পড়লে তারান্নুম লুকিয়ে লুকিয়ে নজর রাখে বাবার ওপর। কথা শুনতে নয়, নাম্বারটা হাসিল করতে। তার যে জানতেই হবে সেই মহিলা কে! সে বলতে বাধ্য যে তার বাবা ভীষণ চতুর প্রকৃতির মানুষ। প্রতিদিন কথা শেষ হলে কলিমউদ্দিন জেনারেল স্টোরের নাম্বার লাস্ট ডায়াল হিসেবে রেখে যান। ফলে কেউ কল করলেই কল চলে যায় কলিমউদ্দিন জেনারেল স্টোরে। কিন্তু তারান্নুম ও কম যায়না। একুশ বছরে একুশ হাজাররের ও অধিক ঠাট শিখেছে সে শত শত ক্রাইম শো দেখে, গোয়েন্দা সিরিজ পড়ে। হাতে ছোট্ট একটা নোটপ্যাড আর কলম। নোটপ্যাডের প্রথম পাতা থেকে শুরু করে একটা একটা করে ডিজিট লিখেছে সে ওই মহিলার নাম্বারের। এই ক্ষেত্রে ও তারান্নুম তার বাবার প্রশংসা করতে বাধ্য! কত ফ্লুয়েন্টলিই না মনে রেখেছে সে ওই মহিলার নাম্বার। খুব ভালোভাবে খেয়াল না করলে নাম্বার মিস হয়ে যাাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। মনে মনে বলল, 'আর তিনটা ডিজিট বাকি! আমি জেনেই ছাড়বো এই মহিলা কে।'
YOU ARE READING
দুই মঞ্জিলের গল্প(completed ✅)
Romanceসময়কাল ২০০০ সনের আশে পাশেই। কিছু সুখবতীদের গল্পের মাঝে ঢাকা পড়ে যায় দুঃখবতীদের গল্পগুলো। দুই দুঃখবতীর আপ্রাণ চেষ্টা এক হওয়ার। কিন্তু হায়, কেউ কি এটুকু ও বুঝেনি যে সমাজ ভালোবাসাকে খুনের মত পাপ বানিয়ে দেয়? যতদিন ঘনায়, ততই কেন দুঃখদের ভেলা চেপে বসে দুঃ...