হাতপাখাটা ঘুরাতে ঘুরাতে তারান্নুম বাবার প্লেটে খানিকটা কলমি শাক তুলে দিলো। মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বাবা শাহেদুল আলম বলে উঠে,
-"তোকে আর তৃণাকে না বলি আমার সাথে খেতে? আমার সাথে খাস না কেন তোরা?"
-"তৃণা অনেক রাত করে খায়। আর তোমার সাথে খেলে তৃণা একা খাবে কি করে বাবা?"
-"তাও ঠিক! একা খেতে বসতে তো তোর বোনের ঘোর আপত্তি। তা করছে কি ও?"
-"পড়ছে এখনো। এস এস সির মডেল টেস্ট আসছে যে তাই।"
-"আর তোর মা?"
-"মা তো খেয়ে আগেই ঘুমিয়েছে। ঔষধের যা পাওয়ার! খেলে চোখ খুলে রাখাই মনে হয় কষ্টকর মায়ের জন্য। কিন্তু আমি না একটা কথা বুঝলাম না বাবা।"
-"কি?"
-"মায়ের এত অসুখ বাঁধলো কি করে? সামান্য জ্বর হয়েছিলো। একটা মাস হয়ে গেলো, কিন্তু মায়ের জ্বর কমছেই না। সাথে শরীর ও পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।"শাহেদুল আলমের হাত প্লেটে আটকে গেলো। না এদিকটায় নড়ছে না ওদিকটায়! তারান্নুমকে অবাক করে দিয়ে তার বাবা হুহু করে কেঁদে ফেললো ছোট বাচ্চাদের মত। তাড়াতাড়ি হাতপাখাটা রেখে পানির গ্লাসটা এগিয়ে ধরলো বাবার দিকে।
-"বাবা! ও বাবা? কি হয়েছে তোমার? এভাবে কাঁদছো কেন?"
শাহেদুল আলমের বুকের ভেতরটায় যেন কেউ লাঙ্গল চালিয়ে গেলো সজোরে। চার্জ লাইটের আলো ক্ষীণ হয়ে এলো আরো। সাথে খানিকটা কমে এলো শাহেদুল আলমের কষ্টের কান্নাটা। প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঝুলছে তারান্নুমের মনের কাঁটাতারে। বাবা চেয়ার ছেড়ে গেলো উঠে বেসিনের পাশে। ফিরে এসে শোকেসের ওপরে থাকা খামটা নিয়ে তারান্নুমের হাত দিলো। প্রায় সাথে সাথেই তারান্নুম খাম খুলে পড়তে শুরু করলো।
-"তোর মায়ের হাতে সময় খুব বেশী নেই।"
-"টায়ফয়েড হয়েছিলো মায়ের?"
-"হ্যা..! সেই টায়ফয়েড এখন প্রায় লাস্ট স্টেজে।"
-"বাবা তুমি এভাবে বলছো কেন? আমরা মা'কে অনেক ভালো ডাক্তার দেখাবো তো।"
-"ঢাকার সবথেকে ভালো ডাক্তারই দেখিয়েছি রে মা। কিন্তু বড্ড দেরী করে ফেলেছি আমরা।"
-"না না! বাবা আমরা আবার দেখাবো। রিপোর্ট ভুল ও তো আসতে পারে।"মায়াভরা দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে শাহেদুল আলম বললো,
![](https://img.wattpad.com/cover/214879407-288-k541868.jpg)
YOU ARE READING
দুই মঞ্জিলের গল্প(completed ✅)
Romanceসময়কাল ২০০০ সনের আশে পাশেই। কিছু সুখবতীদের গল্পের মাঝে ঢাকা পড়ে যায় দুঃখবতীদের গল্পগুলো। দুই দুঃখবতীর আপ্রাণ চেষ্টা এক হওয়ার। কিন্তু হায়, কেউ কি এটুকু ও বুঝেনি যে সমাজ ভালোবাসাকে খুনের মত পাপ বানিয়ে দেয়? যতদিন ঘনায়, ততই কেন দুঃখদের ভেলা চেপে বসে দুঃ...