তারান্নুম মায়ের হাত ধরে বসে আছে বেডের পাশে থাকা টুলের ওপর। গভীর নিদ্রায় আছন্ন হয়ে আছে তার মা। গত দুইদিন আগের থেকে অবশ্য শরীর অনেকটা ভালো এখন জোহরা সারোয়ারের। ভয়ে সবার আত্মা কেঁপে উঠছিলো তার ওমন বেহাল দশা দেখে। যেকোনো মুহূর্তে খারাপ কিছু ঘটে যাবে এমন অনুভুতি আসছিলো ভেতর থেকে সবার। সকালের দিকে তৃণা ও এসেছিলো বাবার সাথে, তার মা'কে দেখে যাওয়ার জন্য। নিজে অল্প কিছু রান্না শিখেছিলো শখের বসে। তাই রান্না করে নিয়ে এসেছিলো মা আর বোনের জন্য। বোনকে জড়িয়ে ধরে তখন ও ভেউ ভেউ করে সাফায়েতের সামনেই কেঁদেছিলো তারান্নুম। কিন্তু বড় বোনকে শান্তনা দিতে গিয়ে একবিন্দু অশ্রুজল ও ফেলেনি তৃণা। অল্প বয়সে সে এটা মনে প্রাণে মেনে নিয়েছে যে মানুষ মরণশীল।সবার সময় সীমা একদিন ফুরোবেই। হোক আজ বা কাল!আলতো করে মায়ের হাতটা বেডের ওপর রেখে তারান্নুম বের হয়ে এলো সে কেবিন থেকে। সাফায়েত করিডোরে রাখা বেঞ্চে বসে বসেই ঝিমুচ্ছে। দুইদিন যাবৎ এখানেই আছে সাফায়েত। সে ছিলো বলেই শাহেদুল আলম নিজের মেয়ে আর বউকে একা রেখে নিশ্চিন্তে যেতে পেরেছেন বাড়িতে। নাহলে তৃণাকে একা বাড়িতে থাকতে দেয়া নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন তিনি। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তারান্নুম আস্তে করে সাফায়েতের পাশে গিয়ে বসলো। তেমন কেউ নেই এ সময়টায় এখানে, নাহলে সাফায়েতের পাশে বসতে গেলেও দু'বার ভাবতো তারান্নুম।
-"সাফায়েত ভাই?"
সাফায়েত ততক্ষণে হালকাভাবে নাক ডাকছে।তারান্নুম একবার ভাবলো ডাকবে নাকি। যা ধকল গেছে মানুষটার ওপর। ঘুমাতে দেখে মায়া ও লাগছে, আবার মানুষ তার ব্যাপারে কি কি আজেবাজে কথা বলতে পারে ভেবে খারাপ ও লাগছে তার। শেষমেষ আবারো ডেকে উঠলো,
-"সাফায়েত ভাই?"
সাফায়েতের কোনো হোলদোল না দেখে মনে মনে বললো - 'হাসপাতালে বসে বসে বেহায়াদের মত কীভাবে ঘুমান আপনি সাফায়েত ভাই? মানুষ দেখলে ভাববে আপনাকে মেরে কেউ ফেলে গেছে! আমার কথা ও ভাবেন না নাকি একটু ও? এতক্ষণ ডাকছি! অথচ আপনি দিব্যি নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন?' আশেপাশে আরেকবার ভালোভাবে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো তারান্নুম। সাফায়েতের হাতের ওপরে নিজের তুলতুলে হাতটা রেখে হালকা ঝাঁকালো।

YOU ARE READING
দুই মঞ্জিলের গল্প(completed ✅)
Romanceসময়কাল ২০০০ সনের আশে পাশেই। কিছু সুখবতীদের গল্পের মাঝে ঢাকা পড়ে যায় দুঃখবতীদের গল্পগুলো। দুই দুঃখবতীর আপ্রাণ চেষ্টা এক হওয়ার। কিন্তু হায়, কেউ কি এটুকু ও বুঝেনি যে সমাজ ভালোবাসাকে খুনের মত পাপ বানিয়ে দেয়? যতদিন ঘনায়, ততই কেন দুঃখদের ভেলা চেপে বসে দুঃ...