পর্বঃ১০

268 19 4
                                    

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই হাটতে বের হই। ইদানিং খুব সকালে উঠাটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। ভালোই লাগে। দিনটা ফুরফুরে লাগে খুব। আগে রাত জেগে পড়তাম আর দেরি করে উঠতাম। এখন একটু চেঞ্জ করেছি রুটিনটা। ১২ টায় ঘুমিয়ে যাই আর সকাল সকাল উঠে পড়ি। এই বাসাটা আমার শান্তির স্থান। এখানে সবসমই আমার শান্তি লাগে। গতকাল থেকে রাহির সাথে কথা হয় না। সকালে একবার হয়েছিলো। একটু ব্যাস্ত আছে। আজকে শপিং এ  যাবো দু'জন। ক্লাস শেষেই যাবো। গতকাল রাতে বাসায় আসার পর খুব ক্লান্ত লাগছিলো। তাই খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। নাহলে রাতে ওকে ফোন দিতাম।

তানভীর ভাইয়াকেও আম্মু রেখে দিয়েছে। তানভীর ভাইয়া আমাকে দিয়েই চলে যেতে চেয়েছিলো যেহেতু বাসা সবটা গুছানো হয়েই গিয়েছে। কিন্তু আম্মু আটকে দিয়েছে। আম্মু বলেছে- আজ আর যাওয়ার দরকার নেই। একা একটা ছেলে কি খাবি! রান্না করে খাবি এখন! কি দরকার বাসা নেওয়ার আলাদা। এখানে থাকলে সমস্যাটা কোথায় হতো! পুরো এক ঘন্টা আম্মু তানভীর ভাইয়াকে এসবই বুঝিয়েছে। 

তাও তানভীর ভাইয়া তার কথায় অটল। উনি ভাড়া বাসায়ই থাকবে। খাবার এর জন্য একজন রান্নার মহিলা রাখবেন। ৩ বেলা রেধে দিয়ে যাবে। মূল কথা উনি এখানে থাকবে না। জাহিদ ভাইয়াও কিছু বলেনি আর আশাহত হয়ে। আম্মুও হাল ছেড়ে দিয়েছে। তবে বলেছে প্রতি শুক্রবারে এখানেই থাকতে হবে। তানভীর ভাইয়া এতে রাজি।

তানভীর ভাইয়ার সাথে আমাদের পরিবারের সম্পর্কটা খুব গভীর। মায়ের ভালোবাসা উনি পায়নি। ছোট থেকেই বাবা-মা আলাদা হওয়ায় বাবা-মা দু'জনের ভালোবাসা, আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবে তানভীর ভাইয়ার দাদা-দাদু উনাকে সবসময় আগলে রেখেছে। ওর বোন তাসনিম। আমারি সমবয়সী। তাসনিম ওর বাবা-মার সাথে মাঝে মাঝেই থাকতো। যোগাযোগ ছিলো। কিন্তু তানভীর ভাইয়া উনাদের সাথে সম্পর্ক শেষ করে দেওয়ার পর তাসনিমও যোগাযোগ রাখেনি। তাসনিমও বাবা-মায়ের ভালোবাসা ছাড়া বড় হচ্ছে।

জাহিদ ভাইয়ার সাথে তানভীর ভাইয়ার বন্ধুত্ব অনেক বছরের। সেই ছোট থেকেই। ভাইয়ার কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি তানভীর ভাইয়া নাকি ক্লাসে কারো সাথে কথা বলতো না। এক কোণায় চুপ করে একা একা বসে থাকতো। তবে খুব ভালো ছাত্র ছিলো। জাহিদ ভাইয়াকে একদিন কয়েকজন সিনিয়র স্কুলের বুল্লি করছিলো। তখন তানভীর ভাইয়া ওদের থেকে বাঁচিয়েছিলো। যেহেতু উনি সবসময় চুপচাপ থাকতো আর একটু মুডি ছিলো মোটামুটি সবাই ভয়ে পেতো। কিন্তু এরপর থেকে আমার ভাই তো সে-ই না! তানভীর ভাইয়ার পিছু পিছু ঘুরতো। তানভীর ভাইয়ার সাথে বসতো। কথা বলতো যদিও উত্তর পেতো না কোনো কথার তাও বলতো। এভাবেই চলতে থাকে। তানভীর ভাইয়া প্রথমে ওকে এভয়েড করলেও কিছু বলতো না। একদিন আম্মু স্কুলে যায়। জাহিদ ভাইয়াকে খাবার দিতে টিফিনে। তখন ভাইয়াকে খাইয়ে দিচ্ছিলো। তখন তানভীর ভাইয়াকে পরিচর করিতে দেয় জাহিদ ভাইয়া। আম্মুও তানভীর ভাইয়াকে জাহিদ ভাইয়ার মতো আদর করে খাইয়ে দেয়। তখন থেকে তানভীর ভাইয়া কথা না বললেও ভাইয়ার সাথে ওর কথায় উত্তর দিতো। এভাবেই শুরু ওদের বন্ধুত্ব। আম্মুও দু'জনকে একসাথে ছেলের মতোই ট্রিট করতো।এখনো করে। যখন আম্মু জানতে পারে তানভীর ভাইয়ার পরিবারের কথা তখন থেকেই আম্মু বলে আমাদের পরিবারই উনার পরিবার। আম্মুও উনার আরেকজন মা। সেই থেকে আম্মু উনার ভালো মা।

সবটাতে তুমি | K.TH FF| ✔Where stories live. Discover now