(২১) অঘোষিত বাসর

378 2 0
                                    

ফ্লাটে পৌছাল তখন রাত প্রায় সাড়ে-নটা। গুলনাহার টাকা দিয়ে বলেন, নিচে হোটেল আছে দুইজনের খাবার নিয়ে আসেন।

সুন্দর করে বলদেবের বিছানা করে দিলেন। অন্য ঘরে নিজের বিছানা করলেন। আজ থেকে শুরু হল স্বামী-স্ত্রীর নতুন জীবন। রাতের খাবার খেয়ে গুলনাহার বলেন, আপনি এইখানে শোবেন আর আমি পাশের ঘরে।
–আমি তোমারে দেখতে পাবো না?
–যতক্ষন জাগনা থাকবেন দেখতে পাবেন। আপনি শুয়ে পড়েন।

বলদেব শুয়ে পড়ে, মন্টি গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ায়। হঠাৎ নজরে পড়ে দেবের চোখ থেকে পানি পড়ে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, কাদছেন কেন?
দেব হেসে বলে, কাদি না। মায়ের কথা মনে পড়ল। আমার মাও এইভাবে ঘুম পাড়াতো।

সকাল বেলা রান্না করে দেবকে খাইয়ে দাইয়ে স্কুলে বেরিয়ে যান মন্টি। একদিন সাঈদা বেগম সই করতে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

ভুমিকা শুনে মন্টি ভ্রু কুচকে তাকান। সাঈদা তার চেয়ে বয়সে বেশ বড়, তার কলিগ। মন্টির বিষয় ইতিহাস সাঈদা বেগম ইংরেজি পড়ান।

–আপনি নামের শেষে সোম লেখেন। আপনার স্বামী কি হিন্দু?
–সেইটা আমি বলতে পারবো না।
–বুঝলাম না।
–শুনতে অদ্ভুত লাগবে তিনি নিজেকে শুধু মানুষ মনে করেন।
–ইন্টারেষ্টিং। ভাবছি একদিন উনার সঙ্গে আলাপ করতে হবে।
–প্রয়োজন ছাড়া আলাপ তার অপছন্দ।

গায়ে পড়ে আলাপ করা গুলনাহার পছন্দ করেন না। বাধ্য হয়ে বানিয়ে বলতে হল। সাঈদা একটু মনক্ষুন্ন হন।
–ভদ্রলোক সামাজিক নন?

মন্টি খোচাটা গায়ে মাখে না বলেন, তা বলতে পারেন।মাফ করবেন আমার ক্লাস আছে।

দুজন দু-ঘরে শোবার ব্যবস্থা দেব এত সহজে মেনে নেবে আশা করেনি মন্টি। শুধু একটা ব্যাপার স্কুল থেকে ফিরলেই বায়না, গান শুনাও। গান না-শুনালে এমন অশান্তি করে তা বলার নয়। খাবে না তার সঙ্গে কথা বলবে না। তখন বাধ্য হয়ে তানপুরা নিয়ে বসতে হয়।ওনার আম্মু বলছিলেন উনি কাঁদেন না–। কিন্তু গান শুনতে শুনতে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। মন্টি লক্ষ্য করেছেন দেবের পছন্দ রবীন্দ্রনাথের গান। বাড়ী থেকে তাই ‘গীতবিতান’ নিয়ে এসে নতুন করে ঝালানো শুরু করেন।

মন যা চায় তুমি তাইOù les histoires vivent. Découvrez maintenant