(২৮) সন্দেহ বাতিক মন

201 3 0
                                    

প্রথম শ্রেনীতে প্রথম। খবরটা গুলনাহারকে টেলিফোনে প্রথম দিল মামুন। আব্বু তার জামাইকে একটা ঘড়ি উপহার দিয়েছেন। রিসিভার ধরে মুখে কথা যোগায় না।ওপার থেকে মামুন বলে, আপা কিছু বলতেছো না, এতবড় একটা খবর দিলাম। 'বড় খবরের কি আছে?ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হলে না হয়-।' কথাটা অজান্তে ফস করে বেরিয়ে আসে।

মামুন প্রতিবাদ করে, কি বলতেছো আপা, দুলাভাই প্রথম হয়েছে?
'মা কেমন আছে? অন্য প্রসঙ্গে চলে যায় গুলনাহার।টেলিফোন রেখে টিচার্স রুমে ফিরে গালে হাত দিয়ে বসেন। জানলা দিয়ে মনটা বেরিয়ে দূর অতীতে বিচরণ করতে থাকে। গুলনার এম.এ.তে পেয়েছিলেন সেকেণ্ড ক্লাস। আব্বু তাকে দিয়েছিলেন একটা নেকলেস।সরকারী অফিসের পিয়ন সারাদিন পাঁচজনের খিদমদ খাটতো এখন এম.এ. পাস? বিয়ের আগে শর্ত করিয়ে নিয়েছিলেন পড়াশুনা করতে হবে। স্বামীর পরিচয় দিতে এখন আর সঙ্কোচের কারণ থাকলো না। তাহলে কেন গুলনাহারের মনে এই অস্বস্তি? এর কারণ কি? অবচেতনে কোন ঈর্ষাবোধ কাজ করছে নাতো? শুষ্ক
হাসি ফোটে গুলনাহারের ঠোটে। আহা!যত বোকাবোকা কথা। গুলনাহারই তো দেবকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন, না হলে কোথায় থাকতো সে?

-বাড়ি থেকে কোন খারাপ খবর?
মিসেস চৌধুরির কথায় সম্বিত ফেরে, ঘাড় তুলে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলেন গুলনাহার, না না কুশল বিনিময়।
-টেলিফোন রেখে এমন গম্ভীরভাবে বসলেন আমি ভাবলাম বুঝি-। কথা শেষ না করে চলে গেলেন মিসেস চৌধুরী।

বাড়ি থেকে কোনো খারাপ খবর আসেনি তাহলে মন ভারাক্রান্ত কেন? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করেন গুলনাহার। আম্মু তার জামাইরে নিয়ে আদিখ্যেতা করবে, উনিও ভাববেন কি না কি করেছেন, কল্পিত নানাছবি তাকে স্বস্তি দিচ্ছে না। কখন ঘণ্টা পড়ল খেয়াল নেই। জুনিয়ার শিক্ষিকা সাহানা ক্লাস থেকে ফিরে জিজ্ঞেস করে, মণ্টি আপা আপনার ক্লাস আছে?
-ঘণ্টা পড়ে গেছে? হ্যা ক্লাস আছে-তুমি কিছু বলবে?
সাহানার মুখ দিয়ে হাসি উপচে পড়ছে, ফিসফিস করে বলে, অধ্যাপিকা চলে যাচ্ছেন।
-ধ্যৎ তোমার যত বাজে কথা। গুলনাহার ক্লাসে চলে গেলেন।

মন যা চায় তুমি তাইWhere stories live. Discover now