(৩০) বীজবপন

435 3 0
                                    

ড.রিয়াজের বুকে মাথা রেখে নাদিয়া বেগম ঘুমিয়ে পড়েছেন। ডাক্তারের চোখে ঘুম নেই, মনে নানা চিন্তার তরঙ্গ বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়ছে। মনে হল ফোন বাজছে।নাদিয়া বেগমের হাত গায়ের উপর থেকে সন্তর্পণে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলেন। দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে ফোন ধরলেন, হ্যালো?
–আব্বু আমি। রুদ্ধস্বরে বলে বলদেব।
–হ্যা বলো আমি শুনতেছি, তুমি কোথায়? ড.রিয়াজের কণ্ঠে উদবেগ।
–আব্বু আমি -আমি শহিদুল্লাহ ভবনের নীচে। আমার কাছে পয়সা নাই আব্বু।
–ঠিক আছে তুমি কোথাও যেও না। আমি আসছি।
ফোন রেখে ইউসুফকে ডেকে তুললেন।

ফোন বাজছে, গুলনাহারের তন্দ্রা ছুটে যায়। বেশবাস বিন্যস্ত করে খাট থেকে নামতে গিয়ে শুনতে পেলেন আব্বুর রাশভারী গলা। কান খাড়া করে দরজায় কান পাতে। ”তুমি কোথাও যেও না,আমি আসছি।” কে হতে পারে? কাকে যেতে নিষেধ করলেন? কোনো পেশেণ্ট?রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করেন আব্বু হয়তো তার দরজায় টোকা দেবেন। বিছানায় উঠে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন। গুলনাহার জেগে ছিলেন যেন বুঝতে না পারেন। সব চুপচাপ সাড়া শব্দ নেই। চোখ ছাপিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।

এত রাতে কোথায় কোথায় ঘুরছে কে জানে। বয়স হয়েছে লেখা পড়াও কম শেখেনি কিন্তু বাস্তব বুদ্ধি হলনা। কাল সকালে সবাইকে কি বলবেন ভেবে কামনা করেন যেন কোনদিন সকাল নাহয়। রাতের আঁধারে এই পোড়ামুখ লুকিয়ে থাকতে চান।

ইউসুফকে কিছু বলেন নাই, শুধু বলেছেন, শহিদুল্লাহ ভবন। সাহেবকে বেশ উত্তেজিত বোধ হয়। ইউসুফ ফাকা রাস্তায় তীব্র গতিতে গাড়ির এক্সিলেটারে চাপ দিল। শহিদুল্লাহ ভবনের দক্ষিনে ভবঘুরেরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।  গাড়ির ভিতর থেকে দেখতে পেলেন, তাদের মধ্যে অন্ধকারে একটা লোক বসে আছে।

–ইউসুফ ঐ লোকটারে এইখানে ডাকো।

ইউসুফ গাড়ি থেকে নেমে দ্বিধান্বিত ভাবে এগিয়ে গেল। তার চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। কারে দেখতেছেন, এতো জামাই সাহেব।
–আসেন,আপনে এইখানে কি করতেছেন?
–চাচা! মণ্টি আসছে?
–সাহেব আসছেন। আপনি আসেন।

মন যা চায় তুমি তাইWhere stories live. Discover now