পর্ব ০৬

1.9K 71 6
                                    



নীরাকে দেখেই সোবহান সাহেব উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,
---তোর ফিরতে এত দেড়ী হলো যে?/ রনি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে, একসাথে খাবে বলে।
নীরা জবাব না দিয়ে হাসলো। সিঙ্গারা খেয়ে তাঁর পেট মোচড় দিচ্ছে। বাসি ছিলো নাকি কে জানে??
-----ছেলেটা প্রায়ই এটা সেটা নিয়ে অাসে, তোর জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে। তোঁকে কত পছন্দ করে বুঝতে পারছিস?? শফিকের ঝামেলা শুরুর দিন থেকেই কিন্তু ও'র সব বন্ধুরা ও'কে ছেড়ে গেছে। একমাত্র রনিই সেই প্রথম দিনের মত করে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। অামার কি মনে হয় জানিস, ও' র এ বাড়িতে অাসার একমাত্র কারণ তুই!বেচারা মুখ ফুটে বলতে পারছেনা।অাজ দেখ সেই কখন থেকে বসে অাছে.....
------উনি মোটেও অামার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে না বাবা, উনার এই বাড়িতে অাসলে বসে থাকতে ভালো লাগে। অাসলে এই বাড়িটাকে উনি ভীষণ পছন্দ করেন!
------তুই বলতে চাচ্ছিস একটা ডাক্তারি পড়া ছেলে এই বাড়িতে শুধু শুধু এসে বসে থাকে??
------অামি কিছুই বলতে চাচ্ছি না বাবা।
তারচেয়ে বরং রনি ভাইকে ডাকো, উনাকেই জিজ্ঞেস করে ফেলি, উনি কেনো এ বাড়িতে অাসেন??এই বাড়িতে কোন সাত রাজার ধন অাছে যে, দুদিন পরপর এতগুলো বাজার নিয়ে অাসতে হবে??
সোজা যদি জবাব না দেয়ে, নাক বরাবর দুই ঘুষি দিয়ে জিজ্ঞেস করবো। অামি যদি হাতদুটো পেছনে নিয়ে শক্ত করে ধরি, তুমি ঘুষিটা মারতে পারবে না বাবা??

সোবহান সাহেব খুকখুক করে কাশলেন। মেয়েটার মুখে কিচ্ছু অাটকায় না। শফিকের মত মাথাটা না অাবার যায়??
সোবহান সাহেব হাসিহাসি মুখ করে বললেন
-------তুই ফ্রেশ হয়ে অায়।সবাই একসাথে খাবো।
-----অামার কিন্তু অাঁধঘন্টা সময় লাগবে....
------যা...

সোবহান সাহেব মেয়ের দিকে তাঁকিয়ে মমতাসুলভ হাসি হাসলেন। তাঁর মন অাজ অনেক ভালো। রনি অাজ সবার জন্য শপিং করে এনেছে। তাঁর জন্য এনেছে পাঞ্জাবী পায়জামা, নীরার মায়ের জন্য শাড়ি, নীরার জন্য জামা, লাবণীর জন্য শাড়ি, অার শফিকের জন্য টি-শার্ট! ছেলেটা টিউশন পড়িয়ে এ মাসে যা পেয়েছে সব খরচ। ছেলেটার মন অাছে বলতে হবে। একটা জিনিসও কমদামী নয়।স্বামী হিসেবে খরুচে ছেলেরা বেশ ভালো হয়। এরা বৌকেও সবসময় খুশিমতো খরচ করতে দেয়।যার খরচ করার হাত থাকে, তাঁর কামাই করারও চেষ্টা থাকে।
এরকম ছেলের ঘরে নীরা সুখেই থাকবে।সোবহান সাহেব নিশ্চিন্ত হয়ে লম্বা একটা শ্বাস ফেললেন।মেয়েটার ভাগ্য অাছে বলতে হবে। ডাক্তার ছেলে, তাঁর উপর মনটা দেখো কত নরম। যাবার সময় যতবার সোবহান সাহেবের সাথে দেখা হয়, ততবার কদমবুসি করে। একদম যেনো নিজের ছেলে। সোবহান সাহেবের চোখ ভিজে এলো। তাঁর নিজের তেমন জমানো টাকা পয়সা নেই, তবু এখন থেকে তিনি কিছুটা জমাবেন। নীরার বিয়ের সময় ছেলেটাকে একটা দামী কিছু উপহার দিবেন। যতই হোক, ডাক্তার পাত্র; পাঁচজনে দেখবার মত তো কিছু দেওয়া দরকার!

হলিডেWhere stories live. Discover now