দিগ্বীজয়ী মুসলিম সেনাপতি সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদি. একবার রিব'ঈ বিন আমির রাদি. কে পারস্যের মশহুর বীরসেনানী ও নেতা রুস্তমের দরবারে দূত হিসেবে প্রেরন করেছিলেন। তাঁর আগমনের খবর শুনে পারস্যরা অন্দরমহল সাজালো স্বর্ণখচিত গদি, রেশমের গালিচা, দামি ইয়াকুত ও ঝলমলে মুক্তাদানা দিয়ে। আরও শোভা পাচ্ছিলো বিরাট সাজসজ্জার বাহার, মাথায় মুকুটসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস। আর রুস্তম বসেছে স্বর্ণখচিত সিংহাসনে।
আর সাহাবী রিব'ঈ গেলেন ঘন ও পুরু জামা পড়ে, সাথে ঢাল-তলোয়ার আর ছোটো ঘোড়া। ঘোড়াটা সেই গালিচা মাড়াতে মাড়াতে শেষপ্রান্তে পৌঁছালো, অতঃপর সাহাবী নামলেন আর ঘোড়াটা বাঁধলেন সেসব গদি দিয়ে। সশস্ত্র ও বর্মাবৃত অবস্থায় সামনে অগ্রসর হতে লাগলে সেনারা বলে উঠলো: 'অস্ত্র রেখে দিন'। তিনি বললেন: তোমাদের জন্যেই আসা। ডেকেছো, তাই এসেছি। যদি এভাবে যেতে বাঁধা দাও, তাহলে আমি চলে গেলাম।
রুস্তম বলল: আসতে দাও ওকে!
তারপরে তিনি বল্লমের ওপর ভর দিতে দিতে সিংহাসনের সামনের দিকে এসে থামলেন, তবে ততক্ষণে রুস্তমের সে রেশমের গালিচার রফাদফা হয়ে গেছে!
ওরা তাঁকে সুয়াল করল: কি নিয়ে এসেছো?
তিনি বললেন: আল্লাহ আমাদেরকে প্রেরণ করছেন যাতে আমরা মানুষদের বান্দার ইবাদত থেকে বের করে আল্লাহর ইবাদতের দিকে নিয়ে যাই, দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে তার প্রশস্ততার দিকে নিয়ে যাই, আর অন্যান্য ধর্ম-মতাদর্শের জুলুম থেকে ইসলামের ন্যায়পরায়ণতার দিকে নিয়ে যাই। আমাদেরকে তাঁর জীবনাদর্শ দিয়ে সৃষ্টিজীবের কাছে তার দাওয়াত দেয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে, যারা এ (জীবনাদর্শ) কবুল করবে আমরাও তাদের কবুল করে নেই এবং তাদের নিয়ে মাথা ঘামাই না। আর যারা আমাদের অমান্য করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আল্লাহর সেই ওয়াদাটি না পাওয়া পর্যন্ত আমরণ লড়াই চালিয়ে যাই।
- আল্লাহর ওয়াদাটা কী?
- জান্নাত, যারা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে শহীদ হয় তাদের জন্য। আর বিজয়, যারা বেঁচে থাকবেন।
- হুমমম...তোমার কথা শুনলাম এতক্ষণ। আচ্ছা, তোমরা কী আমাদের একটু অবকাশ দিবে যাতে আমরা একটু ভেবেচিন্তে দেখতে পারি এবং তোমরাও চিন্তাভাবনা করতে?
- অবশ্যই! কয়দিন চান আপনারা? এক না দুই?
- নাহ! আমরা বরং তোমাদের আমলা-মন্ত্রীদের সঙ্গে পত্রযোগাযোগ করবো।
- আমাদের আল্লাহর রাসুল শত্রুদেরকে সাক্ষাতের পর তিনদিনের বেশি সুযোগ দিতেন না। তোমার আর মন্ত্রীদের নিয়ে ভাবো, আর নির্ধারিত সময়সীমা থেকে আরও এক দিন বাড়ানোর সুযোগ তোমাকে দেয়া হলো।
- তুমিই কি তাদের নেতা নাকি?
- উহুঁ, মুসলিমরা একটা শরীরের মতো... সর্বনিম্নরাও সর্বোচ্চদের সাহায্য করে।
কথা শেষে রুস্তম তার মন্ত্রীবর্গকে একত্রিত করে বললেন: "এ লোকটির মতো মূল্যবান ও গ্রহনযোগ্য কথা আর কারও থেকে শুনেছো?"
ওরা বলল: ওর কথা সমর্থন করা বা ওই কুকুরের কাছে নিজের আদর্শ বিকিয়ে দেয়া থেকে আল্লাহর পানাহ চাই! আপনি কি ওর পোশাক-আশাক দেখেন নাই?
রুস্তম বলল: দুর্ভোগ তোমাদের ওপর! জামাকাপড় না দেখে বাতচিত, চিন্তা-ফিকির ও স্বভাব-চরিত্র দেখো। আরবরা খাবার-দাবার বা পোশাক-আশাকের দিকে মনোযোগ দেয় না। ওরা বংশমর্যাদার ব্যাপারে রক্ষণশীল।
তথ্যসূত্র: আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, আল্লামা ইবনে কাসীর, ৮ম খণ্ড, ৪০ পৃষ্ঠা।
YOU ARE READING
তরজমাশালা
Randomএটি আমার জিন্দেগির নয়া সফর, তবে সফরের সীমা-সরহদ কোথায় গিয়ে ঠেকবে আল্লাহ মালুম। আমার পছন্দসই গল্প বা প্রবন্ধ আরবী, উর্দু, আংরেজি বা ফারসি থেকে তরজমা করে প্রকাশ করব। লিখা পড়ে ভুল-ত্রুটি বা আরও ভালো করার সুপরামর্শ দিতে ইচ্ছা করেন, তাহলে মেহেরবানি করে এ...