সিনিম্মারের মজুরী

4 0 0
                                    

কাহিনীটা বহুত আগের। বাদশাহর নাম নোমান। তিনি মনে মনে ভাবলেন, 'এমন একটা শাহী মহল বানাব যে সালতানাতের তামাম বাদশাহরা তাজ্জব বনে যাবে। সব বাদশাহর কাছে এই মহল ফখরের কারণ হবে।'

Ups! Tento obrázek porušuje naše pokyny k obsahu. Před publikováním ho, prosím, buď odstraň, nebo nahraď jiným.

কাহিনীটা বহুত আগের। বাদশাহর নাম নোমান। তিনি মনে মনে ভাবলেন, 'এমন একটা শাহী মহল বানাব যে সালতানাতের তামাম বাদশাহরা তাজ্জব বনে যাবে। সব বাদশাহর কাছে এই মহল ফখরের কারণ হবে।'

এরপর যেই ভাবা সেই কাজ। বাদশাহ তার রাজ্যের সকল দালান-এমারত নির্মাতাদের তলব করলেন। মন্ত্রীরা জানাল যে সিনিম্মার নামে একজন একজন মোহান্দিস (ইঞ্জিনিয়ার) আছে, যে এ কাজে সবচেয়ে বেশি পাকা। 

বাদশাহ নামদার সিনিম্মারকে মহলে হাজির করার ফরমান দিলেন। সিনিম্মার হাজির হয়ে আরজ জানালেন,

- 'লাব্বাইক! সুলতানের কি খেদমত করতে পারি?'

- আহলান ওয়া সাহলান সিনিম্মার! তোমাকে ডেকেছি একটি কাজের জন্য। আমাকে একটা শাহী মহল বানিয়ে দিবে। এমন মহল বানিয়ে দিবে, যেমন মহল আমার সালতানাতের কেউ কখনও দ্বিতীয়টা করে দেখাতে পারবে না। মনে রেখো, করে দেখালে মোটা অংকের বদলা মিলবে কিন্তু!

- আমার খোশনসীব, আপনার শাহী মহলের কাজে আমাকে তলব করেছেন বলে। আলবৎ, আপনাকে এমন মহল বানিয়ে দিব, ওরকম মহল জিন্দেগিতে কেউ চোখে দেখেনি। কিন্তু জাঁহাপনা, এ জটিল কাজের জন্য আমাদের প্রায় হাজারখানেক ঝানু মিস্ত্রি দরকার।

- তোমার যা যা লাগে নাও। এখন যত জলদি পার মহলের কাজটা শেষ কর।

সিনিম্মার ও তার দলের দিন-রাত গুজার হচ্ছে মহলের নকশা বানানোর কাজে। আখেরে তারা একটা চমৎকার নহরের পাশে জায়গা এখতিয়ার করল। মিস্ত্রিরা টানা কয়েক বছর আরাম-আয়েশ কুরবানি দিয়ে কাজ করল।

মিস্ত্রিদের কাজ শেষ। সিনিম্মার বাদশাহর কাজে গিয়ে বলল,

'আপনার মহল এখন তৈয়ার, আপনার খোশ আমদেদের এন্তেজারে আছি জাঁহাপনা!'

খবর শুনে বাদশাহ মহল দেখার আশায় বেচাইন হয়ে গেলেন।

শাহী মহলে ঢুকে বাদশাহ যারপরনাই বিমোহিত। তিনি সিনিম্মারকে তার মেহনত ও কাজের নিপুনতার জন্য শুকরিয়া জানিয়ে বললেন,

'সিনিম্মার, আমি তো কল্পনাও করিনি যে এমন সুচারুরূপে কাজ করবে তুমি! অবশ্যই তুমি অনেক বড় এনামের হকদার।'

কয়েকদিন পর বাদশাহ তাঁর নয়া শাহী মহলে বদলী হলেন। আবার তিনি সিনিম্মারকে তলব করলেন। সিনিম্মার যথারীতি হাজির। বাদশাহর সাথে মহলের চারপাশ ঘোরাঘুরি করল, কামরা ও হলঘরগুলোর সঙ্গে পরিচিত হল।

পুরা মহল ঘোরা শেষে দুজন ছাদে উঠল। ছাদটা বিশাল উঁচু, ওপর থেকে শহরটা বেশ সুন্দর লাগে। বাদশাহ নোমান এবার পুঁছলেন,

- এরকম আর কোন মহল আছে কি? সিনিম্মার জানাল, জ্বি না সুলতানুল আজিম।

- তুমি ছাড়া এমন মহল কেউ বানাতে পারবে?

- কখনও না, সুলতান।

বাদশাহ মনে মনে ভাবলেন, ও বেঁচে থাকলে তো এর চেয়ে সুন্দর মহল বানাবে। তাহলে কি করা যায়, কি করা যায়... হ্যাঁ, একটাই উপায়!

বাদশাহ নোমান কিছু সিপাহী ডেকে জলদি কানে কানে কিছু বললেন। সিপাহীরা কালক্ষেপণ না করে সিনিম্মারকে ধরে ছাদ থেকে সোজা ধাক্কা ফেলে দিল। এত উঁচু জায়গা থেকে ফেলে দেয়ার দরুণ সিনিম্মার সেখানেই তার প্রতিদান, অর্থাৎ অক্কা পেল।

এই ছিল সিনিম্মারের এত আজিমুশশান কাজের এমন খুবসুরত (!) পাওনা।

তাই আরবী প্রবাদে বলা হয়, যে মানুষের ভালো করে খারাপ প্রতিদান পায় তার জন্য সিনিম্মারের মজুরী। 

(ঈষৎ পরিমার্জিত) 

তরজমাশালাKde žijí příběhy. Začni objevovat