জনৈক বেদুঈন ও উজীর

1 0 0
                                    

'A Bedouin' by John Frederick Lewis (1804-1876)

Oops! This image does not follow our content guidelines. To continue publishing, please remove it or upload a different image.

'A Bedouin' by John Frederick Lewis (1804-1876)


বর্ণিত আছে যে জনৈক বেদুঈন খলীফা মু'তাসিম বিল্লাহর কাছে গেল। অল্পসময়ের মধ্যেই সে খলীফার সোহবতে থেকে তাঁর আস্থাভাজন হিয়ে উঠল। এমনকি এজাজত ছাড়াই তাঁর হারেমে যাতায়াত করতে লাগল। খলীফার এক উজীর ছিল, বেদুঈনের এমন নৈকট্য তার অন্তর্জ্বালার উদ্রেক তৈয়ার করল। সে মনে মনে বলল, 'জলদি একটা কিছু দরকার। এভাবে ও আমিরুল মোমেনীনের মনজয় করে আমাকে খলীফার হৃদয়পুর থেকে দূরে হেটিয়ে দিচ্ছে।'

এরপর থেকে উজীর বেদুঈনের সঙ্গে খুব নেক-আখলাক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ দেখাল। একদিন বেদুঈনকে নিজের বাড়িতে দাওয়াতও দিল; কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে দাওয়াতের খাবারে বেশি রসুন দিল। খাবার পর্ব শেষ হলে সে বেদুঈনকে বলল, 'খবরদার! এ হালতে জাঁহাপনার কাছে যেয়ো না, তিনি কিন্তু রসুনের গন্ধ বেশ অপছন্দ করেন।'

অতঃপর উজীর খলীফার কাছে নিরালায় বলল, 'আমিরুল মোমেনীন! বেদুঈনটা সারা এলাকা রটিয়ে বেড়াচ্ছে যে আপনার মুখে দুর্গন্ধ।' শোনামাত্রই খলীফার মেজাজ বিগড়ে গেল। বেদুঈনের ফেরার খবর পেয়ে খলীফা তাকে তলব করল। রসুনের দুর্গন্ধের ভয়ে আস্তিন দিয়ে মুখ ঢেকে খলীফার কাছে হাজির হল। এ হালত দেখে তিনি মনে মনে বললেন, 'উজীর যা বলছে তা তো ঠিক।' এরপর খলীফা মু'তাসিম এক গভর্নরের কাছে এই মর্মে চিঠি লিখলেন যে চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিঠির বাহকের দেহ থেকে মুণ্ডু আলগ করে দিবে। এবার বেদুঈনকে ডেকে চিঠি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, 'এটা অমুকের (গভর্নরের) কাছে নিয়ে যাও, আর দ্রুত জবাব নিয়ে আসবে।'

বেদুঈন হুকুম মোতাবেক চিঠি নিয়ে মহল থেকে বের হচ্ছিল, পথিমধ্যে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা উজীর সওয়াল ছুঁড়ল,

'কি, কোথায় চললে?'

'অমুক গভর্নরের কাছে আমিরুল মোমেনীনের জরূরী পত্র পৌঁছাতে।'

উজীর মনে মনে বলল 'তাহলে নিশ্চয়ই বিরাট এনাম পেতে যাচ্ছে বেদুঈনটা।' তখন চট করে উজীর বলে উঠল,

'যদি কেউ তোমাকে কেউ এ ক্লান্তিময় সফরের ঝামেলা থেকে মুক্তিদান করে এবং সঙ্গে দুই হাজার দিনার দেয়, তাহলে তার ব্যাপারে তোমার কি অভিমত?'

'আপনি আলেম-হাকেম মানুষ, আপনার যা মর্জি হয় করুন।'

'তাহলে চিঠিটা আমার কাছে দাও।'

উজীরের হাতে চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বেদুঈন তার পাওনা বুঝে নিল। অতঃপর উজীর বাহনে উঠে 'মঞ্জিলে মকসুদে' পৌঁছে গেল। গভর্নরের হাতে পত্রখানা পড়ে চিঠির বাহকের (সৌভাগ্যবশত উজীর সাহেবের) জিন্দেগীর যবনিকাপাত ঘটিয়ে দিলেন।

কয়েকদিন পর আমিরুল মোমেনীনের আচানক বেদুঈনের কথা ইয়াদ হল। তাঁকে জানানো হল যে উজীর নিখোঁজ; কিন্তু বেদুঈনটা শহরে আরামে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খলীফা পুরোদস্তুর তাজ্জব বনে গেলেন, তড়িৎবেগে বেদুঈনকে হাজির করার হুকুম দিলেন।

বেদুঈন উপস্থিত হল। খলীফা বললেন, 'কি ব্যাপার! পরে কি ঘটল?' বেদুঈন আলিফ থেকে ইয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে যা যা ঘটেছিল গদগদ করে শুনাল। তারপর খলীফা বললেন, 'তুমিই তো আমার নামে এ কথা ছড়িয়েছ যে আমার মুখে দুর্গন্ধ?' বেদুঈন বলে উঠল, 'আস্তাগফিরুল্লাহ! এগুলো বেশক উজীরের চক্রান্ত।' তারপর সে উজীরের বাড়িতে বেশি করে রসুন খাওয়ানোর কাহিনী বলল। খলীফা বললেন, 'হায় হিংসা! কীভাবে তাকে মৃত্যুমুখে ধাক্কা দিয়ে নিপতিত করল।'

তিনি বেদুঈনকে খেলাত পড়িয়ে দিয়ে আগের উজীরের কায়েম-মকাম বানিয়ে দিলেন, পূর্বের উজীর হিংসার চোরাবালিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।


(আরবী সাহিত্যের প্রখ্যাত কিতাব 'নাফহাতুল ইয়ামান' থেকে ভাষান্তরিত)

তরজমাশালাWhere stories live. Discover now