খলীফা হারুন ও একটি স্পর্শকাতর কিচ্ছা

1 0 0
                                    

Photo: Collected

Oops! This image does not follow our content guidelines. To continue publishing, please remove it or upload a different image.

Photo: Collected


রাগের মাথায় আব্বাসী খলীফা হারুনুর রশীদ প্রিয়তমা বিবি যোবাইদাকে বলে ফেললেন, 'আমি জান্নাতে না গেলে তুমি তালাক'। মাথা ঠাণ্ডা হওয়ার পর পরে গেলেন দুশ্চিন্তায়, কারণ যোবাইদাকে তিনি নেহাত ভালোবাসতেন।

বাগদাদের তামাম ফকীহদের (আইনবিশারদ) মজমা তৈয়ার করলেন ফতোয়ার জন্য। কিন্তু সবার ঐ একই জবাব: 'আপনি জান্নাতবাসী হবেন, এ ফতোয়া* দেয়ার স্পর্ধা কার আছে'? ব্যাপারটা গেল খলীফার প্রতিকূলে। এরপর তাঁর অনুচরদের ডেকে বললেন,

'বাগদাদের বাইরের কোনো খোদাভক্ত ফকীহকে ডেকে আনো, জলদি!'

তারা বলল, 'লাইস বিন সা'দ নামে একজন ফকীহ আছেন মিশরে, সেখানকার সব ফকীহদের গুরু। এলেমের ময়দানে ইমাম মালেককেও ছেড়ে গেছেন। ইমাম শাফেয়ী তাঁর ব্যাপারে বলেছিলেন, লাইস ইমাম মালেকের চেয়েও বড় ফকীহ; কিন্তু তার সহচররা লিখার মাধ্যমে তাঁর এলেমকে হেফাজত করেনি, তাই এখন তা বিলুপ্ত।'

খলীফা বললেন, নিয়ে এসো তাঁকে।

লাইস আসার পর সকল আলেম-উলামা মিশরের ফকীহের সম্মান প্রদর্শন করলেন। তাঁর সামনে মাসআলা পেশ করা হল। একবার তিনি খলীফার দিকে তাকালেন, আরেকবার তাকালেন মজলিসে উপস্থিত ফকীহদের দিকে। এবার বললেন, 'হে আমিরুল মোমেনীন! ব্যাপারটা সুরাহার জন্য আমি আর আপনি একা থাকা চাই, আর সঙ্গে থাকবে আপনার কুরআন।' সবাই মজলিস ত্যাগ করল এবং এ জটিল সমস্যার সমাধানের এন্তেজারে বাইরে দাঁড়াল।

ইমাম লাইস বললেন, আমিরুল মোমেনীন! কালামে পাকের (কুরআন) ওপর হাত রেখে কসম করে বলুন: "যাহা বলিব সত্য বলিব, মিথ্যা বলিব না।" খলীফা কসম করে বলে গেলেন। ইমাম বললেন: 'কসম আল্লাহর, হলফ করিয়ে আপনার গায়ে তোহমতের বোঝা চাপাতে চাই না। যাতে কোনোক্রমেই যেন আপনার নিজের সঙ্গে যেন প্রতারণা না হয় তাই আমি এমনটা করতে চেয়েছিলাম। এবার মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলুন তো:

'আপনার কি কখনও নির্জনে রবের স্মরণে নয়নযুগল বেয়ে অশ্রুফোয়ারা প্রবাহিত হয়নি?'

'আপনি কি কোনোদিনও আল্লাহর ভয়ে কাঁদেননি?'

'আপনি কি সে মহাপ্রলয়ঙ্করী দিনে পরওয়ারদেগারের সামনে দাঁড়াতে ভয় পাবেন না, যেদিন তিনি বলবেন: "আজ রাজত্ব কার?"(১) কিন্তু কেউ টুঁ শব্দটাও করবে না?'

খলীফা বললেন, 'এ সত্য ও পাক কালাম নাজিলকারীর কসম! এরকম কাহিনী তো অহরহ ঘটেছে জিন্দেগীতে'।

ইমাম বললেন, তাহলে কালাম শরীফ থেকে সুরা আর-রাহমান বের করে খুব ধ্যান-খেয়ালের সঙ্গে পড়তে শুরু করুন।

কথা মোতাবেক খলিফা তেলাওয়াত শুরু করলেন। যখন এ আয়াতে পৌঁছালেন "যে ব্যক্তি আপন রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে তার জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত।"(২) অমনি ইমাম বলে উঠলেন:

'ব্যাস, ব্যাস, ব্যাস পেয়ে গেছি জবাব আমিরুল মোমেনীন! আপনার বিবি তালাক হয়নি। কারণ যে ব্যক্তি নিজ রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে তার জন্য জান্নাত দুটি, একটি নয়'। এবার বললেন, 'এবার ফকীহগণকে আসতে দেয়া হোক।'

ফকীহগণ ডাক পেয়ে মজলিসে প্রবেশ করলেন। ইমাম লাইস বললেন, 'কসম খোদার, আপনাদেরকে অবজ্ঞা করে বাইরে যেতে বলিনি; বরং যাতে তিনি নিজের সঙ্গে ধোঁকাবাজি না করেন তাই আমরা নির্জনালাপকে বেছে নিয়েছি।'

ফতোয়া শোনার পর সকল ফুকাহায়ে কেরাম ইমাম লাইসের ফতোয়ার সত্যায়ন করলেন।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে আঁসু ফেলে সে দোযখে যাবে না।"

তিনি আরও বলেছেন: "দুজনের চোখ জাহান্নাম স্পর্শ করবে না। এক. যার চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। দুই. যার চোখ আল্লাহর রাস্তায় (জেহাদে) রাত জেগে পাহারা দেয়।"

আল্লাহর ভয়ে হে ক্রন্দনকারী, খোশখবর তোমার জন্য!


(সূত্র: হিলয়াতুল আওলিয়া ওয়া ত্ববাকাতুল আসফিয়া, আবু নুআইম ইস্পাহানী রহ.।)

তরজমাশালাWhere stories live. Discover now