(সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর বয়ান)
মোসলমান কখনও এলেম থেকে বিমুখ হতে পারে না
হামদ-ছানা, আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়ার পর তিনি ফরমান:
ٱقْرَأْ بِٱسْمِ رَبِّكَ ٱلَّذِى خَلَقَ
"পড় তোমার পরওয়ারদিগারের নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।" (সুরা আলাক, ৯৬:১)
এ মোবারক আয়াতে আমাদের পয়গম্বর মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে আল্লাহ তাআলা ফরমায়েছেন: 'পড় তোমার রবের নামে'। ইক্বরা (অর্থাৎ পড়) লফজটির মাধ্যমে আল্লাহ পাক এক পষ্ট ইশারা দিয়েছেন যে এবার দুনিয়ায় যে উম্মত আসছে, সে উম্মত দুনিয়াকে জাহেলিয়াতের নিকষ আঁধার থেকে বের করে নূর ও রৌশনীর দুনিয়াতে আনয়ন করবে। 'ইকরা' এর সাথে আল্লাহ পাক এলেম, কিসমত ও তাহকিকের (গবেষণা) আঁচল বেঁধে দিয়েছেন, এর ফলে যে কেউ এলেমদার (জ্ঞানী) হবে, উস্তাদ হবে, আবার নিজের জিন্দেগির হিসাব করবে।'ইকরা' লফজ থেকেই মোসলমানদের ভবিষ্যৎ নির্দিষ্ট হয় যে মোসলমান কখনও এলেম থেকে বিমুখ হতে পারে না। ইসলামী সমাজ কখনও এলেমকে আল্লাহ পাকের ওজুদ (সত্ত্বা) থেকে আলাদা করতে পারে না, উম্মত হরদম এলেমকে খোদায়ে পাকের সঙ্গে বন্ধনযুক্ত রাখবে। কারণ এলেমের বন্ধন যদি খোদায়ে পাক রাব্বুল আলামিনের সাথে না হয়, তাহলে এলেম মানুষের জন্য বরবাদ ও ধ্বংসের হেতু হবে।
রোম-ইউনানের কমতি
রোম ও ইউনান জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতির শেখরে উঠা কওম ছিল। কিন্তু তাদের এলেমের সম্পর্ক আল্লাহর সাথে ছিল না। ফলস্বরূপ তাদের দাঙ্গা-হাঙ্গামায় দুনিয়া সরগরম হয়ে উঠেছিল। আধুনিক জমানাতেও জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও অন্যান্য এলেমের রিশতা আল্লাহ পাকের সাথে না হওয়ায় এর এস্তেমাল ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যয় হচ্ছে। আজ মানুষে মানুষে লহুর পিয়াস স্রেফ এজন্য যে সে তো এলেম হাসিল করেছে বটে; কিন্তু এলেমের সিলসিলা আল্লাহ তাআলা তক পৌঁছায়নি।
জগতের ভেদ আবিষ্কারের রাস্তা
এলেম যখন খোদায়ে পাকের কুদরত, হেকমত ও আজমতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে উন্নতি হতে থাকে, জগতের ভেদ আবিষ্কার হতে থাকে, কওম গঠনমূলক কাজে মশগুল হয়। এ ধরণের এলেম মানুষকে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও বরবাদি কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখে, যার দরুণ সে উম্মত এসব লানত থেকে দূরে থাকে। আল্লাহর নামে রাহনুমায়ী (পথপ্রদর্শন), তওহীদ ও তাকওয়ার নেশায় মাতাল হয়ে এলেম মানবজাতির উন্নতির সোপানে তুলতে থাকে।
আংরেজ লেখক আর্থার (Arthur Peacoke) 'Conflict Between Science and Religion' কেতাবে খুব স্পষ্ট করে দেখিয়েছেন যে এলেম যখন আল্লাহর নাম থেকে বিমুখ হয়ে যায় তখন তা বরবাদির কারণ হয়। আল্লাহ তাআলার নাম ছাড়া এলেম মানুষের মধ্যে অহমিকা পয়দা করে। মানুষ ভাবতে শুরু করে যে আমি দুনিয়ার সবচেয়ে দামি বস্তু। অথচ মানুষের উচিত আপন ওজুদের কথা ভুলে না যাওয়া, 'ইকরা' আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষের মনোযোগ সেদিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন। কোরআন শরিফে আল্লাহ পাক ফরমায়েছেন যে আমি মানুষকে রক্তপিণ্ড থেকে পয়দা করেছি, আল্লাহ তাআলার এ কথার মাকসাদ হচ্ছে মানুষের শক্তি-সামর্থ কতটুকু, মানুষ তার ওজুদ এগুলো যেন ভুলে না যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন 'ইকরা' আয়াতটিতে এ বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছেন যে মানুষ যেন আল্লাহর বড়ত্ব ও আজমতের কথা না ভুলে যায়, যিনি মানুষকে রক্তপিণ্ড থেকে তৈয়ার করতে পারেন, তামাম দুনিয়া তার কব্জায়, গোটা আলমের (বিশ্বজগৎ) ছোট ছোট কণাও তার ক্ষমতাধীন।
এজন্য এলেমকে আল্লাহর নামের সাথে জুড়ে দেয়া উচিত। কোরআনী শিক্ষা থেকে কেউ যেন মাহরুম না হয়, মানুষ যেন আল্লাহ থেকে অমুখাপেক্ষী না সাজে। সবকিছু থেকে অমুখাপেক্ষী হওয়া স্রেফ আল্লাহ পাকের সিফাত। তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন; সবকিছু তার মুখাপেক্ষী। মোসলমান এলেমের নেয়ামত ও দৌলতে ভরপুর হবে, তবে আল্লাহর সাথে এলেমের নেসবত রেখে। যখন কোন কওম এমন দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতে শুরু করে তখন দুনিয়ার ইজ্জত-দৌলত সব তার পায়ের নিচে আসে, সাথে সাথে তারা কওম-গঠনের কাজ আঞ্জাম দেয়।
[৫ই জুলাই ১৯৯৪ ঈসায়ীতে ভারতের মুম্বাই এম.এইচ সাবু সিদ্দিক কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির 'আল-মাতাফি' হলে 'তেহরিকে ফেহমে কোরআন, দাওয়াতে কোরআন-সুন্নাত' এর তত্ত্বাবধানে আয়োজিত মজলিসে বয়ানটি পেশ করা হয়। বয়ানটি পাক্ষিক তামীরে হায়াত এ ২৫ই জুলাই ১৯৯৪ সংখ্যা থেকে সংগৃহীত।]
YOU ARE READING
তরজমাশালা
Randomএটি আমার জিন্দেগির নয়া সফর, তবে সফরের সীমা-সরহদ কোথায় গিয়ে ঠেকবে আল্লাহ মালুম। আমার পছন্দসই গল্প বা প্রবন্ধ আরবী, উর্দু, আংরেজি বা ফারসি থেকে তরজমা করে প্রকাশ করব। লিখা পড়ে ভুল-ত্রুটি বা আরও ভালো করার সুপরামর্শ দিতে ইচ্ছা করেন, তাহলে মেহেরবানি করে এ...