Photo: Collected
একদিন একজন লোক নবী সোলাইমানের খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করল, 'হে আল্লাহর নবী! আমাকে পাখি-জানোয়ারের ভাষা শেখান।' নবীজি বললেন, 'আচ্ছা, শেখাব। তবে শর্ত হচ্ছে ব্যাপারটা যেন কাকপক্ষীও না জানে, নাহলে কিন্তু নির্ঘাত অক্কা পেতে হবে।'
লোকটি শর্ত কবুল করল। নবীজির থেকে ভাষার তালিম নিয়ে বাড়ি ফিরল। তার বাড়িতে জানোয়ার বলতে ছিল একটা করে গাধা, বলদ আর একটা মোরগ। ইতিমধ্যে গাধা আর বলদের হালপুরসি পর্ব শুরু হয়ে গেল:
'কি বলদ সাহেব, আজকের দিন কেমন গেল?'
'মেহনত-খাটুনির ওপর দিয়ে রে গাধা, সারাটা দিন এভাবেই পার হয়।'
'তুমি কি চাও যে কাল থেকে তোমাকে আর বোঝা টানতে দেয়া না হোক? তুমি কি পায়ের ওপর পা তুলে আরাম-আয়েশে দিন কাটাতে চাও?'
বলদের মনে ঈদের আমেজ, গায়ে শিহরণ। গাধার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলল, 'আরে হ্যাঁ রে গাধা, আলবৎ চাই। উপায়টা জলদি বল।'
'তাহলে কাল রাতে ঘাস খাওয়া নিজের ওপর হারাম জারি কর।'
জানোয়ারগুলোর মালিক তন্ময় হয়ে সব শুনছিল। সকালে মালিক বলদের দায়িত্ব গাধার ঘাড়ে সোপর্দ করল। রাতের বেলায় গাধা ঘাসের গামলার কাছে মুখ এগিয়ে দিতে বলদ সওয়াল করল, 'কি খবর গাধা ভাই? মনে হচ্ছে আজ তেমন খাটুনিই হয়নি!'
গাধা হাঁফ ছেড়ে বলল, 'ওরে আল্লাহ, বলে কি! খাটতে খাটতে জান একেবারে ঠোঁটের আগায় চলে এসেছিল। ঠিক তোমার মত বেহাল দশা। তবে আজ শুনলাম ওরা বলছে যে তুমি বলে বেমার হয়ে বেকার হয়ে পড়ছ, তাই তোমাকে মরে যাওয়ার আগে জবাই করা দরকার। যদি বাঁচতে চাও তো ঘাস খাওয়া শুরু কর।'
লোকটি আজও আড়াল থেকে শুনছিল, ওদের কথাগুলো শুনে একগাল হেসে দিল। পাশ থেকে বিবির আওয়াজ ভেসে এল,
'কি ব্যাপার, হাসলে কেন?'
'আরে বাদ দাও তো, তেমন কিছু না।'
কিন্তু নাছোড়বান্দা বিবির জিদ থামছে না। এদিকে ভদ্রলোকও মুখ খুলছেন না প্রাণবিনাশের ভয়ে। অবশেষে বিবি মুখের ওপর বলে দিল, 'যদি না বল, হয় তুমি পাগল নাহয় আমি ছাড়া তোমার অন্য কেউ আছে।' বেচারা নিরুপায় হয়ে বলল, 'আরে বললে আমাকে মওতের সঙ্গে হাত মেলাতে হবে যে!' তাও বিবিজানের মন মানে না। আর কোন উপায়ন্তর না খুঁজে পেয়ে সে বলল, 'বেশ! তাহলে আমাকে একটু মওকা দাও, অসিয়তের সময় জানিয়ে দিব।' বিবি তাতেই রাজি হয়ে গেল।
রোজ সকাল বেলা, ভদ্রলোকের অসিয়তের মাহেন্দ্রক্ষণ ঘনিয়ে এসেছে। গাধা-বলদ মালিকের খবর শুনে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে; কিন্তু মোরগটার খুশির হিড়িকে ডাকাডাকি ছাড়ছে না। ওরা দুজন মোরগকে জিজ্ঞেস করল,
'আমাদের মালিক মারা যাচ্ছে, এতে আবার উল্লাসের কী?'
'এমন বাঁচার চেয়ে মরাই ভালো।'
'কেন?'
'আমার আওতায় বিশটা মোরগ-মুরগি থাকে, অথচ আমার নিয়ন্ত্রণ ওদের ওপর বহাল তবিয়তে জারি থাকে। আর এই মর্দ সামান্য একজন মহিলাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।'
'তাহলে সে করবেটা কি?'
'নতি স্বীকার না করা পর্যন্ত চাবুকপেটা জারি রাখবে।'
এ কথা শোনামাত্রই ভদ্রলোকটি বলল, 'ঠিক বলছিস মোরগ'। তারপর চাবুক দিয়ে উত্তম-মধ্যম শুরু করলে বিবিজান সওয়াল করা থেকে খামোশ হল।
(প্রখ্যাত আরবী সাহিত্যের প্রাচীন কেতাব 'নাফহাতুল ইয়ামান' থেকে ভাবানুবাদ)
YOU ARE READING
তরজমাশালা
Randomএটি আমার জিন্দেগির নয়া সফর, তবে সফরের সীমা-সরহদ কোথায় গিয়ে ঠেকবে আল্লাহ মালুম। আমার পছন্দসই গল্প বা প্রবন্ধ আরবী, উর্দু, আংরেজি বা ফারসি থেকে তরজমা করে প্রকাশ করব। লিখা পড়ে ভুল-ত্রুটি বা আরও ভালো করার সুপরামর্শ দিতে ইচ্ছা করেন, তাহলে মেহেরবানি করে এ...