ফ্রম রিভার টু সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি
ফিলিস্তিনের জন্য তৈয়ার করা এই স্লোগানটি বোধহয় ফিলহালে দুনিয়ায় চলমান পরিস্থিতির সাদৃশ্য ধারণ করেছে। আজ প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভুমধ্যসাগর পর্যন্ত দুনিয়ায় বিবেকের ইন্তিফাদা চলছে।
তামাম বর্ণ, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে বিভিন্ন দেশের অগণিত মানুষজন নজিরবিহীনভাবে রাস্তায় নেমে ইন্তিফাদা বা বিদ্রোহ করছে। নিশ্চয় এটি ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের তরফ থেকে বিবেকের ইন্তিফাদা।
জাবালিয়ার রিফিউজি ক্যাম্প থেকে সংঘঠিত সেই পহেলা ইন্তিফাদার পর ৩৬ বছর ধরে দুনিয়া ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে এর মত শক্ত প্রতিবাদ আগে দেখেনি। অবাক করার বিষয় হচ্ছে বিবেকের এই ইন্তিফাদায় শরীকদের বৈচিত্রতা।
কখনও এই চৈতন্য দেখা যাচ্ছে নামজাদা ফ্যাশন মডেল বেলা হাদিদের প্রতিবাদে, কখনও দেখা যাচ্ছে খেলোয়াড়দের থেকে, যেমন অস্ট্রেলিয়ান বাস্কেটবল প্লেয়ার কাইরি আরভিং এর বাস্কেটবল লিগে (NBA) ফিলিস্তিনি সাদা-কালো কেফিয়ে রুমাল পরার থেকে, আবার কখনও প্রকাশ পাচ্ছে সাহসী স্প্যানিশ মন্ত্রী ইওনে বেলেরার প্রতিবাদ থেকে, যিনি কুল ইওরোপের রাজনীতিবিদদের বদনাম করেছেন। এছাড়াও দেখা যাচ্ছে রাজপথে লাখো মানুষের বিক্ষোভ।
অপর দিকে, আমার মনে হয় যে ফিলিস্তিনের পক্ষে সাম্প্রতিক বিক্ষোভটি ওয়াশিংটনে সেই মার্টিন লুথার কিং এর কালোদের জন্য আজাদির লংমার্চের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ওয়াশিংটনের (সম্প্রতি) বিক্ষোভটি এত বড় ও কার্যকর ছিল যে ইলন মাস্ক বেশ তাজ্জবের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের ড্রোন ফটোশুট শেয়ার করেন।
কিছুদিন পরে বিগত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ ঘটে লন্ডনে, যা আপাতদৃষ্টিতে ওয়াশিংটনের বিক্ষোভকে চ্যালেঞ্জ করার মত। বলা হচ্ছে যে 'বিগ বেন' ঘড়ি গত ৫০ বছরে এত বড় সমাগম দেখে নাই।
একইভাবে মালেয়শিয়া, পাকিস্তান, ইস্তাম্বুলেও লক্ষ লক্ষ মানুষ বিক্ষোভ করেছে। কি হচ্ছে সেখানে?
ফ্যাশন ডিজাইনাররা ফিলিস্তিনের রঙে ফ্যাশন স্টেজ সাজাচ্ছে, মিউজিশিয়ানরা ফিলিস্তিনি গান গেয়ে হামাসদের উৎসাহ দিচ্ছে, মশহুর সাংবাদিকরা 'আমরা আজাদ নই' বলে ইস্তফা দিচ্ছেন। সেলিব্রিটি, আর্টিস্ট, ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী, কমেডিয়ান, একাডেমিয়ান, ড্রাইভার, ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যরা, পুরা দুনিয়ার বিভিন্ন পেশা ও কর্মক্ষেত্রের মানুষজন উদ্বেলিত হচ্ছে, বদনামি গাইছে, এই বিষয়ে বাতচিত করছে।
এসবকিছু ইশারা দেয়, গাজা মানববিবেককে জাগ্রত করেছে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এইসব লোকজন তাদের মুলুকের ইসরাইল সমর্থন ইস্যুর বিরোধিতা করছে। ফ্রান্স যখন ফিলিস্তিনের পতাকা ব্যান করল, প্যারিসের রাস্তাঘাট মেতে উঠল লাল, কালো ও সফেদ রঙে। জার্মান হুকুমত যখন বিক্ষোভকারীদের এন্টি-সেমিটিজমের অপরাধে সাজাদানের হুমকি দিল, জনকওম তখন বার্লিনের মশহুর আলেক্সান্ডার স্কয়ারে তার জবাব দিল: প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি।
সত্তরের দশকে বিশ্বের দেশগুলির জ্বলে উঠা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের পর থেকে এই ধরনের যৌথ পদক্ষেপ, এই ধরনের যৌথ বিদ্রোহ, সারা বিশ্বে দেখা যায়নি। এজন্য এটিকে আমি "বিবেকের ইন্তিফাদা" বলি।
সম্ভবত ইতিপূর্বে ইস্রায়েলের ইতিহাসে তাদের বিরুদ্ধে এত বড় পরিসরে, বিভিন্ন কওম থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিক্ষোভ করে নাই। যেমনভাবে ফিলিস্তিনি কওমও -যারা ১৯৪৮ থেকে যাতনায় ভুগছে- তাদের ইতিহাসে এমন দুনিয়াজোড়া সমর্থন জোটে নাই।
অপরদিকে, এই বিক্ষোভ থেকে জাহির হয়েছে যে, কিছু মুলুক তার কওমের মত বাহাদুর না, তাদের বিবেক বলতে কিছু নাই। আজ ফিলিস্তিনের ইস্যু একটি বিবেকের ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ধর্ম বা কওম নির্বিশেষে মানুষকে শামিল করছে, স্রেফ খাসভাবে মুসলিমদের ইস্যু বলে আর নাই।
অবশেষে বলব, জানি না এই ক্রমবর্ধমান ঘটনাপ্রবাহ কোথায় আমাদের নিয়ে যাবে। তবে এটা নিশ্চিত, দুনিয়া আর তার সুরতে কখনও থাকবে না।
(আল-জাজিরা আরবি থেকে অনূদিত, লিঙ্ক: https://www.aljazeera.net/opinions/2023/12/7/%D8%A7%D9%86%D8%AA%D9%81%D8%A7%D8%B6%D8%A9-%D8%A7%D9%84%D8%B6%D9%85%D9%8A%D8%B1-%D9%81%D9%8A-%D8%A7%D9%84%D8%B9%D8%A7%D9%84%D9%85)
YOU ARE READING
তরজমাশালা
Randomএটি আমার জিন্দেগির নয়া সফর, তবে সফরের সীমা-সরহদ কোথায় গিয়ে ঠেকবে আল্লাহ মালুম। আমার পছন্দসই গল্প বা প্রবন্ধ আরবী, উর্দু, আংরেজি বা ফারসি থেকে তরজমা করে প্রকাশ করব। লিখা পড়ে ভুল-ত্রুটি বা আরও ভালো করার সুপরামর্শ দিতে ইচ্ছা করেন, তাহলে মেহেরবানি করে এ...