পর্ব-১০

353 16 0
                                    

হাসানের মেয়েটা সত্যি অনেক চঞ্চল।মেয়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এতো দুষ্টু হয় না।আজ আবার বনুও আসছে ওর দুই ছেলে নিয়ে।ওর ছোট ছেলে খুব শান্ত হলেও বড় জন সব মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।গাড়ির শব্দ হচ্ছে।নিশ্চয় চলে এসেছে ওরা।
শাহেদ তাড়াহুড়ো করে আমার কাছে এসে বলল,"এসব কি মনি?"
সৌজন্যবোধও নেই এই ছেলের।আট বছর হয়ে যাওয়ার পরও।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,"কোনসব?"
ও চোখ বড় বড় করে বলল,"ওই পিচ্চিটার সাথে খেলা করতে হবে আমার!!তাও আবার মেয়ে পিচ্চি!!!"
আমি একটু হেসে বললাম,"তাতে সমস্যা কি?"
ও হতাশ গলায় বলল,"একটা পিচ্চি মেয়ের সাথে আমি খেলব?আমার একটা প্রেস্টিজ নেই?"
আমি খুব কষ্ট করে হাসি থামিয়ে বললাম,"আচ্ছা যা,খেলতে হবে না।কথা বলিস ওর সাথে।তাহলেই হবে।"
শাহেদ মাথাটা হালকা ঝাকিয়ে বলল,"ওই মেম বাচ্চার সাথে কি কথা বলব?নিশ্চয় ইংরেজিতে কথা বলে!"
আমি ওকে আশ্বস্ত করে বললাম,"ও বাংলাতেই বলে।কথা বলে তো দেখ!"
শাহেদ অবিশ্বাসীর গলায় বলল,"সত্যি বলছ?"
আমি হাসিমুখে বললাম,"বিশ্বাস না হলে কথা বলে দেখ।"
শাহেদ তক্ষুণি গিয়ে ঝুমুরকে টেনে ঘরের মধ্যে টেনে নিয়ে এল।এরপর আমার সামনেই ঝুমুরকে জিজ্ঞেস করল,"তুমি বাংলা জানো?"
ঝুমুর একবার আমার দিকে তাকিয়ে তারপর হাসিমুখে জবাব দিল,"I know but I am not going to show you that."
শাহেদকে দেখলাম সাথে সাথে চুপ করে গেল।তারপর ঝুমুরের হাত ধরে টেনে আমার সামনে নিয়ে এল।আমি ঝুমুরকে জিজ্ঞেস করলাম,"ওর সাথে বাংলায় কথা বলবি না?"
ঝুমুর মিষ্টি করে হেসে বলল,"তুমি বললে বলব।"
আমি ওর গাল টিপে বললাম,"বাংলাতেই বলিস ওর সাথে কথা।"
শাহেদের দিকে তাকিয়ে বললাম,"এবার ঠিক আছে?"
শাহেদ গম্ভীরভাবে মাথা নাড়িয়ে বলল,"হুম হুম।"
শাহেদ তারপর ঝুমুরকে টেনে বাইরে নিয়ে গেল।একটু পর রান্নাঘরের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি শাহেদ আর ঝুমুর পা ঝুলিয়ে বরই গাছে বসে আছে।
আমি আঁতকে উঠে শাহেদকে জিজ্ঞেস করলাম,"ঝুমুরকে গাছে কি করে উঠালি?"
শাহেদ হাসিমুখে বলল,"কোলে করে।"
আমি চিন্তিত হয়ে বললাম,"সাবধানে থাক।পা নাড়াবি না কিন্তু।"
ঝুমুর একটু মিষ্টি করে হাসল।তারপর মহা উৎসাহে পা নাড়াতে লাগল।শাহেদকে দেখলাম ঝুমুরকে বলল,"আমার শার্ট ধরে রাখ।পড়লে দুজনে একসাথে পড়ব।"
ঝুমুর বেশ কয়েকবার মাথা ঝুলিয়ে তারপর শাহেদের শার্ট ধরে হাসতে শুরু করল।তারপর ওর দেখাদেখি শাহেদও হাসতে লাগল।আমি কতক্ষণ ওদের দিকে তাকিয়ে তারপর আবার কাজে মন দিলাম।
কিছুক্ষণ পর বসার ঘর থেকে কাঁচ ভাঙার শব্দ পেলাম।দৌঁড়ে গিয়ে দেখি শাহেদ ফুটবল দিয়ে শোকেসের কাঁচ ভেঙে ফেলেছে।আর ঝুমুর হাসিমুখে হাততালি দিচ্ছে।কাঁচ ভাঙার শব্দ শুনে বনু আর আনিকা ভেতর থেকে বেরিয়ে এল।বনু এসেই শাহেদকে মারতে গেল।বনু শাহেদের কান ধরার সাথে সাথে ঝুমুর কেঁদে উঠল।
এটা মনে পড়তেই খুব হাসি পেল।ঝুমুর আর শাহেদের এই একটা ব্যাপার।একজন আরেকজনের দুঃখে ব্যাথিত হয়।তবে এতো বড় হওয়ার পরও এদের দুষ্টুমি একটুও কমে নি।এরা যখনই একসাথে হয় তখনই কোনো না কোনো দুষ্টুমি করবেই।শাহেদ আর ঝুমুরের মতে ওরা সবচেয়ে বেস্ট ভাইবোন।

প্রিয়Where stories live. Discover now