-এই বুড়ি,এই!
-কে?!!?
-আমি।
-দরজার পেছনে কি করিস?
-মাকড়শা ধরার চেষ্টা করি।
-কি করবি মাকড়শা দিয়ে?!
-তোমার গায়ে ছেড়ে দিব।
-কি বলিস এসব!!!
-হুম... কতক্ষণ ধরে ডাকছি হিসেব আছে?
আমার মনে পড়ল আমি নিজের চিন্তায় এতোটাই মগ্ন ছিলাম যে ওর ডাক শুনতেই পাই নি।আমি ঝুমুরকে বললাম,"বল কি বলবি?"
ঝুমুর বলল, "আমাকে ত্রিশ হাজার টাকা দাও.. জলদি!"
আমি বললাম, "হুম... আমি ওই জানালার পাশে টাকার গাছ লাগিয়েছি।গাছ থেকে ছিড়ে নে।
ঝুমুর খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল, "আমি সিরিয়াস।"
আমি বললাম, "আমি তোর থেকেও বেশি সিরিয়াস।"
ঝুমুর মাথা নাড়িয়ে বলল, "ভালো হবে না কিন্তু...!"
আমি বললাম, "খারাপ কি হবে?"
ঝুমুর এবার নিজের হাতের ব্রেসলেট খুলে বলল, "আমি তাহলে এটা দিয়ে দিব।"ও খুব ভালো ভাবেই জানে আমি এটা করতে দিব না, কেননা আমি ওকে ব্রেসলেটটা গিফট করেছি।তাই আমি এবার আলমারি থেকে টাকা নিয়ে ওর হাতে দিলাম।
তারপর জিজ্ঞেস করলাম, "কি করবি টাকা দিয়ে?"
ও বলল, "রাস্তায় দেখলাম একটা বয়স্ক লোক ভিক্ষা করছে।আমি তাই ওনাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বললাম এই বয়সে ভিক্ষা না করতে।তারপর উনি বলল ওনার মেয়েটা নাকি অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি।কিন্তু এই ত্রিশ হাজার টাকা জমা পরেনি দেখে অপারেশন হচ্ছে না।শ্বশুর বাড়িতে বলেছে প্রথম বাচ্চা বাবার বাড়িতে হয় তাই সমস্ত খরচাও বাবার।"
এটুকু বলেই ও কাঁদতে লাগল।আমি ওর মাথায় হাত রেখে বললাম, "কাঁদছিস কেন?"
ও কাঁদতে কাঁদতেই বলল, "ওই মেয়েটাও আমার মতো একমাত্র মেয়ে।অথচ আমি অসুস্থ হলে ড্যাড হাসপাতাল কিনে ফেলার উপক্রম করে।কিন্তু ওই মেয়েটার বাবার আর আমার বাবার নিজেদের মেয়ের প্রতি ভালোবাসা এক হলেও সামর্থ্য না থাকায় আজ ওনার মেয়ে এতটা কষ্ট পাচ্ছে আর আমি যখন যা চাচ্ছি তাই পাচ্ছি... "আমি ওকে বললাম, "সবাই যদি সমান হতো তাহলে তো এই দুনিয়া মূল্যহীন হয়ে যেত! এখন কান্না না করে তুই টাকা নিয়ে ওনাকে দিয়ে আয়।"
ও চোখ মুছে বলল, "যাচ্ছি... আর আমার আসতে দেরি হবে।আমি ওই মেয়েটার বেবি হওয়ার পর বাসায় আসব।"
আমি বললাম, "যা, কিছু লাগলে ফোনে বলিস।"ঝুমুর একটু মাথা নাড়িয়ে সাথে সাথে বেরিয়ে গেল।আমার সত্যি মনে হলো এই মেয়ে যে পরিবারে বউ হয়ে যাবে সেই পরিবারের চেয়ে ভাগ্যবান বোধহয় আর কেউ হবে না।