হাসানটা কতদিন পর আসছে!সেইকবে আমেরিকায় গিয়েছে পড়তে!পাক্কা ৫ বছর পর আসছে!ভাবতেই আনন্দ লাগছে!
হঠাৎ বনুর বাবার ডাক...
-অহনা!!!
-কি হলো?
-ওখানে কি করছো?গেটে এসে দাঁড়াও।চলে আসবে তো!
-আসছি।
-এই!!!!!!!
-এবার কি?
-চলে এসেছে!!!
আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল।আমার ছেলেটা চলে এসেছে!কোনোরকম ঘর থেকে বের হয়ে গেটের দিকে যেতে লাগলাম।ওই তো গাড়ি থেকে নামছে।কিন্তু আমি কাছে যেতে গিয়েও থমকে গেলাম। এ কি! কে নামছে গাড়ি থেকে!এ তো একটা বিদেশিনী!
প্রথমে ওই মেয়ে বের হয়ে এল।তারপর বের হলো আমার ছেলে।ওর কোলে একটা বাচ্চা মেয়ে।দ্রুত মাথায় অনেক চিন্তা আসতে লাগল।তারপরও স্বাভাবিক থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।ওদিকে দেখলাম আমার মেয়ে বনু,ওর বাবা,স্বামী,আমার ছোটছেলে অনিক বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হাসানের দিকে।দেখলাম হাসান বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আমার কাছেই আসছে।পেছনে ওই বিদেশী মেয়েটা।আমার সামনে এসে হাসান ডাকল,মা!
আমি কোনোরকমে বললাম,"বলো!কি বলতে চাও?"
ও চোখ নামিয়ে বলল,"আমি তোমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছি।তোমরা কি আমার স্ত্রী আর মেয়েকে গ্রহন করবে?"
আমার পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে...আমার এতো আদরের ছেলে কিনা আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে!তা ও আবার এই বিদেশীকে!এমনকি একটা মেয়ে পর্যন্ত আছে!হঠাৎ দেখলাম ওর মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।নিজের অজান্তেই হাত বাড়িয়ে গাল টিপে দিলাম।আর তখনই মেয়েটা হেসে উঠল।এটাই যথেষ্ট ছিল।আমার নাতনিকে আমি তখনই কোলে নিয়ে নিলাম।আর আমার ছেলে আর তার স্ত্রীকে বললাম ভেতরে আসতে।
এই বাড়িতে চিরকাল আমার কথাই শেষ কথা।তাই বনুর বাবাও কিছু বলল না।অবশ্য সে এসব নিয়ে মাথাও ঘামাবে না আমার ধারনা।
ঘরে ঢুকে হাসান আর তার স্ত্রীকে বললাম,"বসো।ঘরে ঢুকতে দিয়েছি বলে এটা ভেবো না যে সব মেনে নিয়েছি।"
ওরা বসলো।হঠাৎ দেখি আমার নাতনি আবার বনুর দিকে তাকিয়ে হাসছে।ওর হাসি দেখে আমি তখনই এর নাম দিলাম ঝুমুর!
বনুর বাবা তখন হঠাৎ হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল,"হ্যাঁরে হাসান,এটা সত্যই তোর মেয়ে!"
হাসান আর তার স্ত্রী আহত দৃষ্টিতে বনুর বাবার দিকে তাকাল।আমিও বেশ বিরক্ত হলাম।এ আবার কেমন প্রশ্ন!
বনুর বাবা তখন ঝুমুরকে কোলে নিতে নিতে বলল,"না মানে...এতো মিষ্টি মেয়েটা তোর!!তুই যে রসকষহীন মানুষ!!"
আমার মেজাজ তখন এত্তো খারাপ হলো যে বলার মতো না।কিন্তু লক্ষ করলাম আমি বাদে সকলেই বেশ মজা পেয়েছে কথাটা শুনে...হাসানের ঠোঁটে সূক্ষ্ণ হাসি দেখতে পেলাম।এমনকি ওর স্ত্রীও মুখ নিচু করে হাসছে।তখন আমি বনুকে বললাম নাস্তা আনতে।বনু আমার কথা শুনে দ্রুতপায়ে রান্নাঘরের দিকে গেল।আর ওর বড়ছেলে শাহেদ ততক্ষণে তার মামীর সাথে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে।
ওদের নাস্তা শেষের পর আমি কথা শুরু করলাম হাসান আর তার স্ত্রীর সাথে।