অনেকদিন হলো ঝুমের বাবা মা দেশের বাইরে।ঝুম তাই ঈদে একাই আমার বাড়িতে আছে।আমার ছেলে হাসান যেহেতু আমার সবচেয়ে আদরের ছেলে, তাই ঈদে খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার খুব খারাপ লাগছে।তবে ঝুম থাকলে এর পরিমান অনেকটাই কমে যাবে।
ঝুমকে আমি বেশ কিছুক্ষণ ধরে ডেকে গেলেও ওর কোনো সাড়াশব্দ নেই।আমি আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ওর ঘরের দিকে যাওয়া শুরু করলাম।ওর ঘরের সামনে গিয়ে দেখি ও যেন কার সাথে কথা বলছে।আমি ওর ঘরে না ঢুকে কথা শুনে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম যে ওর কার সাথে কথা বলছে।খানিকক্ষণ শোনার পরেই বুঝতে পারলাম ও ওর বাবার সাথে কথা বলছে।এটা দেখেই কেন যেন আমার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো।বারবার মনে হতে লাগল হাসান ওর মেয়ের সাথে এতো কথা বলছে আর আমার সাথে আজ ওর ছয় দিন হলো কথা হয় না।রাগে আমার সারা গা কাঁপতে শুরু করল।অথচ আমার একবারও মনে হলো আমার চিন্তাটা কতটা নিম্নমানের, কতটা অবান্তর!আমি দ্রুত পায়ে নিচে নামতে শুরু করলাম।ঝুম তখনো হাসানের সাথে কথা বলছে কেননা ওর কাঁচভাঙা হাসির শব্দ নিচেও পাওয়া যাচ্ছে।অন্য সময় হলে ঝুমের হাসি শোনার সাথে সাথে আমারও হাসতে ইচ্ছা করে।কিন্তু এখন ওর হাসি শুনে আমার আরো বেশি মেজাজ খারাপ লাগছে।আমি আর কিছু না ভেবে নিজের ঘরে গিয়ে বসে রইলাম।কিছুক্ষণ পর শুনতে পেলাম ঝুম ওর দাদুর সাথে গল্প করছে।নিতান্তই ছেলেমানুষী কথাবার্তা।মেজাজ খারাপ করার মতো কিছুই না।কিন্তু আমার মেজাজ খারাপ হলো।আমি ঘর থেকে বেরিয়ে কোনো কারন ছাড়াই ঝুমকে বকাবকি করলাম।ঝুম কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর নিজের ঘরে চলে গেল।আমি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছি, ঠিক সেই মুহুর্তে ঝুমের দাদুর গলা শোনা গেল।
-অহনা।
-বলো।
-তুমি কি কোনো কারনে বিরক্ত?
-এটা কেন জিজ্ঞেস করলে?
-এমনি।তবে তোমার যাই হয়ে থাকুক না কেন ঝুমকে ঠিক আধঘন্টার মধ্যে আমার সামনে ও যে অবস্থায় আমার সাথে গল্প করতে এসেছিল ঠিক সেই অবস্থায় হাজির কর।
-কি বললে?
-যা বলেছি তুমি শুনতে পেয়েছো।তোমার হাতে ত্রিশ মিনিট সময় আছে।
আমি বনুর বাবার এমন কঠিন স্বভাবের সাথে পরিচিত না।তাই এটা দেখে আমার দ্বিতীয় বারের মতো ঝুমের ওপর মেজাজ খারাপ হলো।তারপরও রাগ সামলে আমি ওর ঘরের দিকে গেলাম। কিছুক্ষণ ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হাল ছেড়ে চলে এলাম।
ঘরে বসে মনকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম।তারপর আবার ওর ঘরের দিকে গেলাম।