যদিও ১০টা অনেকক্ষণ আগেই বেজে গেছে,কিন্তু ঝুমুর নিচে নেমে আসে নি।আমি একবার ভাবলাম গিয়ে ডেকে তুলি,কিন্তু একটু পরেই মনে হলো প্রয়োজন নেই।আমি মনে হলো এই মেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই নিচে নেমে আসবে আর স্বভাব অনুযায়ী চিৎকার করে কফির জন্য বাড়ি মাথায় তুলবে।
-কফি!!!!
আমি চমকে উঠে পেছনে তাকিয়ে দেখি ঝুমুর দাঁড়িয়ে।
-এতো চোখ বড় বড় করে কি দেখছো?আমায় বুঝি সুন্দর দেখতে লাগছে?
-নাহ্,খুব বাজে দেখাচ্ছে।
-তাতেই বরং ভালো।সুন্দর হলে তো আবার নজর লাগবে!
-তুই...
কথা শেষ করতে পারলাম না।তার আগেই ঝুমুর রান্নাঘরের এদিক সেদিক হাটাহাটি
শুরু করে দিল।আমি কিছু না বলে আগের মতো কাজ করতে লাগলাম।
-দিম্মা!
-কি?
-আমার কফি?
-দিচ্ছি।
-জলদি দাও।
-হয়ে গেছে।এই নে...
-থ্যাংকস।
-হুম।
-হুম না,বলো ওয়েলকাম।
-ওয়েলকাম।
-এই তো গুড গার্ল।
আমি ওর কান টেনে কাছে এনে বললাম,"আমাকে শেখাচ্ছিস?"
ও অতিকষ্টে কান ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,"শেখার কোনো বয়স নেই দিম্মা!"
আমি খেয়াল করলাম ওর কানে কোনো রিং নেই।অথচ গতকালই আমি ওকে নতুন রিং পড়িয়ে দিয়েছি।খুলে ফেলেছে বোধহয়।
তারপরও জিজ্ঞেস করলাম,"তোর কান খালি কেন?"
ও নির্বিকার ভাবে বলল,"খুলে ফেলেছি।"
আমি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,"খোলার কারনটা কি?"
ও কফির কাপ হাত থেকে নামিয়ে বলল,"কেমন যেন বউ বউ লাগছিল।রিংটা লাইট না,তাই..."
আমি বললাম,"তাহলে অন্য একটা পরে নে।"
ও হাসিমুখে মাথা নাড়িয়ে বলল,"আচ্ছা।"
আমি আর কোনো কথা না বলে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।ঝুমুরও আমার পিছনে হাটতে শুরু করল।একসময় জিজ্ঞেস করল,"রান্না করবে না?"
আমি বললাম,"নাহ্,মাথা ধরেছে আর তাছাড়া কালকের রান্না সবই আছে।"
ঝুমুর মিষ্টি করে বলল,"তাহলে গিয়ে রেস্ট করো।"
আমি বললাম,"তুইও উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।"ও মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।আমি বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে থেকেও মাথা ব্যাথা কমাতে পারলাম না।তাৎক্ষণিক ঔষুধ খাওয়া আর ক্রিম লাগানো আমার স্বভাব নয়।আর বনুর বাবা আজ আবার বলে গেছে দুপুরে মেহমান আসবে।আর এমনিতেও এই বাড়িতে একবেলার রান্না অন্য বেলা খাওয়া হয় না।ঝুমুরকে বললে ও হয়তো কিছু ব্যবস্থা করত।কিন্তু সেক্ষেত্রে অন্য কারো হাতে রান্না হতো।এটাও এই বাড়িতে চলবে না।একবার ভাবলাম ঝুমুরের দাদুকে ফোন করে বলি যে আমি রান্না করতে পারব না।তারপর মনে হলো একবার চেষ্টা করে দেখি।তবে সময় নেই।এতো কম সময়ে এতো রান্না সম্ভব না।তারপরও ভাবলাম চেষ্টা করলে ক্ষতি নেই।
ঘরের দরজা খুলতেই মনে হলো রান্নার ঘ্রানে বাড়িঘর ভরে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে দেখি ঝুমুর রান্না করছে।আমাকে দেখেই বলল,"এত্তো বাজার এসছে আর তুমি বলছ রান্না হবে না!"
আমি বললাম,"এসব ছাড়।এতো রান্না কে করেছে?"
ও চুলা বন্ধ করে বলল,"দিম্মা,তুমি আমাকে যত আনাড়ি ভাবো অতো আনাড়ি আমি না।"
এই বলেই ও রান্নাঘরও থেকে বের হয়ে গেল।আমি তাড়াতাড়ি সব রান্না দেখলাম।রং ও ভালো হয়েছে,স্বাদও চমৎকার হয়েছে।সম্পূর্ণ বাঙালি রান্না।কিভাবে করল কে জানে...
আমার হঠাৎ খুব ভালো লাগতে শুরু করল।