-কি করো?
-রান্না।
-কি রান্না?
-গরুর মাংস।
-আমিষ!!!!
-তো?
-আমাকে আবার গোসল করতে হবে!!
এটা শুনে আমার ইচ্ছা করছিল ওকে জোরে একটা চড় লাগাই। কিন্তু রাগ সামলে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,"কেন গোসল করতে হবে তোকে?আমিষে তোর কি সমস্যা?"
ঝুমুর খানিকটা অবাক হয়ে বলল,"সমস্যা না,আসলে মাছ মাংসের গন্ধে আমার গা গুলোয়।"
আমি এবার একটু ধমক দিয়ে বললাম,"তাহলে শাওয়ার নেওয়ার কথা আসছে কেন?"
ও আমতা আমতা করে বলল,"না মানে....
আমি এবার জোরে একটা ধমক দিয়ে বললাম,"তাহলে বললি কেন?আমিষ খাবি না ঠিক আছে,তাই বলে বাড়াবাড়ি কেন করছিস?আরেকদিন একথা তোর মুখে শুনলে সোজা চড় লাগিয়ে দিব।"এটা বলেই মনে হলো ভুল করে ফেলেছি।কেননা ঝুমুর যে কারো কাছ থেকেই ধমক শুনলেই বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে।আমি এবার ওর দিকে একটু খেয়াল করে তাকাতেই দেখি যে ওর চোখ টলমল করতে শুরু করেছে।আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঝুমুর মুখ ঢেকে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
হঠাৎ আমার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো। বকা না দিলে মেয়েটা এমন মন খারাপ করত না।
সারাটা সময় ওর ঘরের দরজা বন্ধ।খাওয়া দাওয়া তো অসম্ভব ব্যাপার।আমি অনেকবার ওকে দরজা খুলতে অনুরোধ করলাম।ওর দাদুও চেষ্টা করল।কিন্তু ও দরজা তো খুলছেই না,এমনকি কোনো সারাশব্দও নেই।
একটা সময় ওর দাদুও আমার উপর রাগ করে না খেয়ে শুয়ে পড়ল।মেয়েটা সকাল থেকে না খাওয়া।আর এখন রাত।আমি আবার ওর দরজা সামনে গিয়ে দাড়ালাম।দরজা হালকা একটু শব্দ করে বললাম,"খাবি না আজ?"
জানি কোনো জবাব আসবে না।তারপরও বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম।
তারপর আবার বললাম,"ঠিক আছে,খেতে হবে না।আমার সাথে কথাও কি বলবি না?"
এবারও ভেতর থেকে কোনো আওয়াজ এল না।
আমি আবার দরজায় শব্দ করে বললাম,"তাহলে আমি বরং বাড়ি ছেড়ে চলেই যাই।কেননা তুইও আমার সাথে কথা বলছিস না,তোর দাদুও আমার সাথে কথা বলছে না।তাহলে এখানে থেকে কি লাভ?আমি বরং চলেই যাই।"
একথা বলার সাথে সাথে দরজা খুলে গেল।ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ মুখ লাল হয়ে ফুলে গেছে।নিশ্চয় সারাটা সময় কান্নাকাটি করেই কাটিয়েছে।
ধরা গলায় মেয়েটা বলে উঠল,"তোমার জামাই তোমার সাথে কথা বলে না কেন?"
আমি বললাম,"তুই সারাদিন আমার সাথে রাগ করে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিস তাই তোর দাদুও আমার উপর রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।"
একথা শুনে ঝুমুর নিজের চোখ মুছে বলল,"আচ্ছা!আর রাগ করব না।তুমি যেও না।কেমন?"
হঠাৎ মনে হলো ঝুমুর সেই ছোট্টই রয়ে গেছে।নিজের অজান্তেই হেসে উঠলাম।
ও চোখ বড় বড় করে বলল,"হাসার কি হলো?"
আমি হাসি বন্ধ করে বললাম,"কিছু না।আয় খাবি চল।"
ও মিষ্টি করে হেসে বলল,"খাবো না।সময় নেই।"
আমি অবাক হয়ে বললাম,"মানে কি?"
ও বলল,"ওর ফোন চলে আসবে।"
আমি হাল ছেড়ে দিয়ে বললাম,"এই ও টা কে রে?"
ও খানিকটা লজ্জা পেয়ে বলল,"একটা গাধা।"
আমি কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম,"আমি তাহলে চলে যাব?"
ও হেসে বলল,"যাও,জামাইর সাথে রোমান্স কর গিয়ে।"
এই কথা বলেই দরজা বন্ধ করে দিল।আমি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ভাবলাম এই মেয়ে বড় হবে না নিশ্চয়।কেননা ছোটবেলাতেও যেমন দুষ্টুমি করে কথা বলত এখনও ও ঠিক ওইভাবেই কথা বলে।