পর্ব-২৭

256 9 0
                                    

সেলাই বন্ধ করে ওর ঘরে গিয়ে দেখি ও ঘুমিয়ে পড়েছে।একদম একটা বাচ্চা মেয়ের মতো দেখাচ্ছে।আমি ওর গায়ে একটা চাদর টেনে দিয়ে নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়লাম। 

ঘুম ভাঙতেই মনে হলো আজ উঠতে আমি অনেক দেরি করে ফেলেছি।তৃষার কি বাইরে যাওয়ার কথা ছিল..? কি জানি! কিছুই মনে পড়ছে না।আমি আর দেরি না করে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুম থেকে বের হলাম।বের হয়েই দেখি তৃষা একটা কফি মগ হাতে নিয়ে বসে আছে।ওর মুখ দেখে মনে হলো কি যেন ভাবছে।আমি ভাবলাম হঠাৎ করে ওর সামনে গিয়ে ওকে চমকে দিব। কিন্তু ওর সামনে যেতেই ও বলে উঠল, 'চমকে দেওয়া আমার কাজ, তোমার নয়।Have your seat. Coffee?'

আমি বসতে বসতে বললাম, ঘুম ভালো হয়েছে?

তৃষা গম্ভীরভাবে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল, হুম। আর তোমার যে ভালো ঘুম হয়েছে সেটা আমি জানি।

আমি মগে কফি ঢালতে ঢালতে বললাম, তুই কিভাবে শিওর হচ্ছিস?

তৃষা বলল, কাল তুমি একদম চিন্তা মুক্ত ছিলে।তোমার মনে হচ্ছিল যে জটিল সমস্যা তোমাকে ঘিরে তৈরি হচ্ছিল তা তুমি সমাধান করে ফেলেছো।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি সমাধান করতে পারে নি?

তৃষা বলল, পেরেছো দিম্মা। এটা নিয়ে তোমার আর ভাবতে হবে না।

দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। তারপর একসময় আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা,ধর... তুই যাকে ভালোবাসিস তার নাম, ডাক, টাকাপয়সা কিছুই নেই।এককথায় তোর চাহিদা পূরনের তার কোনো ক্ষমতা নেই।এমনকি তোর বাবা মা ও তোকে তার সাথে বিয়ে দিতে চায় না। কিন্তু তার আছে শুধুমাত্র সবকিছু দিয়ে তোকে ভালোবাসার ক্ষমতা। তুই কি তখনও তার কাছে যাবি?

তৃষা উত্তর দিল, আমি যেহেতু তাকে ভালোবাসার আগে এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করি নি তাহলে এরপরও এসব নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তবে তারপরও যদি কোনো কথা হয় তাহলে আমি বলব আমার তো কোনো কিছুর অভাব নেই। আমার চাহিদা পূরনের জন্য তো আমাকে তার উপর নির্ভর করতে হবে না কখনও... আর যদিও মম আর ড্যাড আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাবে না, তবে যদি যায় তবে আমি তো আর অযোগ্য নই দিম্মা! আমি তো ওর অবস্থা ফেরানোর জন্য সবসময় ওর পাশে থেকে কাজ করব। তার বিনিময়ে ও যদি আমাকে শুধু অনুভব করাতে পারে যে ও আমাকে ভালোবাসে তাহলেই হবে... কারন তুমি আমার ভালোবাসার মাত্রা জানো।

এটুকু বলে ও উঠে গেল। চলেই যাচ্ছিল তবে আবার ঘুরে এসে আমার সামনে বসে বলল, আমি কখনও অভাব দেখি নি দিম্মা। কিন্তু আমি আমার বাবা মায়ের কাছে গল্প শুনেছি। ড্যাড, দাদুর কোনোরকম সাহায্য ছাড়া বিদেশে থেকে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে... আর তার মধ্যে মম ড্যাডের হাত ধরে সবসময় সাপোর্ট করেছে। তাই তো ড্যাডকে আর কোনোদিন পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। আমি জেদী, রাগী কিন্তু আমি আমার মম আর ড্যাডের কাছে থেকে যা শিখেছি আমি তা দিয়ে সকলের মনও জয় কতআরতে পারব আর যেকোনো পরিবেশে নিজেকে মানিয়েও নিতে। শুধু কিছু মানুষ আমার পাশে থাকলেই হবে। আর যদি আমি আমার ভালোবাসার মানুষের হাত তার যেকোনো অবস্থায় না ধরতে পারি তবে তো বলতে হবে আমি তাকে কোনোদিন ভালোইবাসি নি।

আমি ওর মাথায় হাত রেখে বললাম, তোর পাশে সবাই সবসময় থাকবে।

তৃষা তখনি দাঁড়িয়ে বলল, চলো দিম্মা! আজ তুমিও আমার সাথে অফিসে যাবে। তোমার ছেলের পরিশ্রমের ফল দেখবে না। আর সবাই তোমাকেও দেখবে আর ভাববে ড্যাড কত ভাগ্যবান! চলো চলো... জলদি রেডি হও।

আমাকে একপ্রকার টানতে টানতেই ও নিজের ঘরে রেডি করাতে নিয়ে গেল।

প্রিয়Donde viven las historias. Descúbrelo ahora