পর্ব-১৩

344 14 0
                                    

ঝুমুররা থাকবে দুই মাস।এতো লম্বা সময় শাহেদদের থাকা সম্ভব না।ওদের স্কুল আছে।আজ চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বনু।প্রত্যেকবারই ও বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় কান্নাকাটি করে।এবারো করেছে।তবে তার সাথে যুক্ত হয়েছে ঝুমুরের আর শাহেদের কান্না।বনু কতক্ষণ এদের থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে গোছগাছ করছে।আমার ছেলের বউ তার মেয়ে আর শাহেদের দিকে তাকিয়ে Holy cow বলে বিড়বিড় করছে।বনুর ছোটছেলে গম্ভীরভাবে আনিকার কোলে বসে আছে।তবে তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে এই কান্নার ব্যাপারে অত্যন্ত বিরক্ত।
তবে দেখতে দেখতে বনু তার ছেলেদের নিয়ে চলে গেল।ঝুমুরও একসময় কান্না বন্ধ করে ঘরময় ছোটাছুটি করতে লাগল।

বিকেলের দিকে দেখি আনিকা আমার ঘরের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
বনুর বাবা তাকে দেখতে পেয়ে ভেতরে এনে একটা চেয়ারে বসাল।তবে ঝুমুরের মা ঘরে এসে এখনও কোনো কথা বলে নি।হঠাৎ বনুর বাবা বলল,"তোমরা মেয়েরা মেয়েরা কথা বলো।আমি না হয় গিয়ে দেখি ঝুমুর কোথায়।"
এই বলেই বনুর বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।আমি আনিকার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,"কিছু বলবে?"
আনিকা কিছু না বলে শুধু মাথা ঝাকাল।আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,"কি ব্যাপারে?"
আনিকা আস্তে আস্তে বলল,"হাসান খুব রাগারাগি করছে।"
আমি জিজ্ঞেস করলাম,"কেন?"
আনিকা বলল,"ঝুমুর সারাক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরে বেরায় কিন্তু ওর পিছনে এখনো লোক লাগানো হয়নি।"
আমি বললাম,"আচ্ছা,কাল থেকে লাগিয়ে দিব।"
আনিকা মুখ তুলে বলল,"Then....may I leave?"
একবার মনে হলো বসতে বলি।তারপর আবার ভাবলাম প্রয়োজন নেই।ওকে চলে যেতে বললাম।আনিকা নিঃশব্দে চলে গেল।
আনিকা ঘর থেকে বের হতে না হতেই ঝুমুরের চিৎকার শুনলাম।আমি তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে দেখি ঝুমুর তার মায়ের শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর সামনে আমার বড় ছেলে হাসান হতম্ভব ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি হাসানের দিকে এগিয়ে গেলাম।হাসান আমাকে দেখেই বলল,"কেমন আছ মা?হঠাৎ এসে চমকে দিয়েছি কিনা বল?"
আমি ওর মাথায় হাত রেখে বললাম,"চমকে তো দিলি কিন্তু ঝুমুর অমন চিৎকার করল কেন?"
ঝুমুর ওর মার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে বলল,"ড্যাডকে ভয় দেখালাম।"
হাসান ঝুমুরকে কোলে নিয়ে বলল,"ড্যাড তো খুব ভয় পেয়েছি।তা মামনি,এতোদিন ড্যাডকে মিস করোনি?"
ঝুমুর হাসানের গলা জরিয়ে ধরে বলল,"বলব না।"
আনিকা এগিয়ে এসে ঝুমুরকে কোলে নিয়ে হাসানকে বলল,"তোমার মেয়েকে পরেও পাবে।আগে মা বাবার সাথে কথা বলো।"
অনেকক্ষণ হাসানের সাথে আমি আর বনুর বাবা গল্প করলাম।আনিকা তখনই মেয়েকে নিয়ে ঘরে চলে গিয়েছে।খাবার টেবিলে ওকে দেখলাম একা আসছে।হাসান জিজ্ঞেস করল,"আমার ছোট্ট পরীটা কই?"
আনিকা জানাল ঝুমুর ঘুমিয়ে পড়েছে।অনেক রাত পর্যন্ত কথা হলো।হাসান জানালো ঝুমুরের জন্মদিন যেহেতু কিছুদিন আগে গেছে তাই এবার এই দেশে বড় করে অনুষ্ঠান করবে।আমি আর বনুর বাবা জানালাম আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

প্রিয়Where stories live. Discover now