'রেহান হচ্ছে ড্যাডের বন্ধুর ছেলে, এটাতো তুমি জানো।আমার থেকে ও প্রায় পাঁচ বছরের বড়। ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয় আমার বাড়িতেই।ড্যাডের কার অ্যাকসিডেন্ট হওয়ার পর আঙ্কেল রেহানকে নিয়ে ড্যাডকে দেখতে আসে। আমি তো তখন ছোট।আমার ওকে দেখে মনে হলো ও কি আমার সাথে একটু খেলবে....
তাই আমি ওকে প্রথমে ডাকতে গেলাম ।তারপরই মনে হলো আমি কেন ডাকব? আমি ছোট মানুষ।ও আমার চেয়ে যেহেতু একটু বড় তো ওর উচিত আমাকে ডাক দেয়া।
অনেকক্ষণ পর ও আমাকে ডাকল।বলল, এই মেয়ে! কতক্ষণ ধরে দেখছি ওই ঘরটায় তুমি উঁকি দিচ্ছ.. কি চাই?আমি তখন বেশ অবাক হয়ে বললাম, উঁকি কেন দেব? আমি তো শুধু দেখতে যাচ্ছিলাম যে তুমি কখন ওঠো... আমার সাথে তুমি হাইড অ্যান্ড সিক খেলবে?
রেহান রীতিমতো চোখ কপালে তুলে বললো, আমাকে দেখে কি মনে হয় যে আমি খেলার মানুষ? এসব আমার দ্বারা হবে না খুঁকি। আমি....
ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ওকে টেনে নিয়ে আমার শখের বাগানে নিয়ে যাই।ওকে আমাদের নাইটকুইন গাছটা দেখিয়ে বলি, দেখেছো এই গাছ কখনো? এটা হচ্ছে নাইটকুইন গাছ।আসলে গাছ নাইটকুইন না, এই গাছের ফুলের নাম হচ্ছে নাইটকুইন। বাংলায় হলো নিশিপদ্ম। আমাকে ড্যাড বলেছে। আমার ড্যাড সব জানে।যারা সব জানে তাদের বলা হয় ব্যাবলার। বাংলায় কি যেন বলে সেটা আমি ভুলে গেছি। এই ফুল দেখেছো কখনো? খুব সুন্দর নাকি হয় দেখতে। আর গন্ধ ও নাকি খুব সুন্দর।ড্যাড বলেছে এই গাছের কোনো যত্ন লাগে না। কিন্তু এখানকার আবহাওয়া তো ভালো না, তাই ড্যাড বলেছে.....
এটুকুর পর আর বলতে পারলাম না। তাকিয়ে দেখে ও আমার মুখ চেপে ধরেছে।চেহারায় একরাশ বিষ্ময় এনে ওই অবস্থাতেই ও আমাকে বলল, এতো কথা বলো কেন তুমি? এতো কথা কি করে বলছো? আর এত্তো তাড়াতাড়ি বলছো যে আমি অর্ধেক বুঝতে পারছি আর বাকি অর্ধেক তোমার কথার মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে।
এটুকু বলে ওর আমার মুখ থেকে ওর হাত সরালো।তারপর একটু হেসে বলল,
তোমার নাম কি?আমি বিরক্তির সাথে বললাম, তৃষা।
ও বলল, তৃষা... তৃষা... তৃষা... বেশ কমন নাম।আমি বরং তোমাকে রিশা বলে ডাকব।
আমি কিছু না বলে শুধু একটু মাথা নাড়লাম।তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা চলে গেল।
তবে তারপর থেকে ও নিয়মিতই আসত।ছোটোবেলা থেকেই ওর সাথে আমার অবাধ মেলামেশা। আমি সারাক্ষণ কথা বলতাম... আর ও মুখ বন্ধ করে শুনতো। কোনো কথা বলতো না।মাঝে মাঝে আমাকে অনেক ছোট ছোট গল্প শোনাতো। আমাকে ও ছবি আঁকা শিখিয়েছিল। গিটারের হাতেখড়িও ওর কাছ থেকেই। ও ছিল আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আমার জীবনে যা যা ঘটতো সব আমি ওকে বলতাম। কোনো কিছু ওর অজানা ছিল না। এমনকি আমার মুখ থেকে শুনে আমার সব ক্লাসমেটের নাম ওর মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে তখন আমরা ছিলাম শুধু বন্ধু।
আস্তে আস্তে যখন বড় হলাম তখন বুঝতে পারলাম আমার দিক থেকে না হলেও রেহানের দিক থেকে সম্পর্কটা আর বন্ধুত্ব পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নেই। আমি এসব নিয়ে কখনোই চিন্তা করতাম না, তবে একদিন আমার ক্লাসমেট পাওয়েল আমাকে যখন জিজ্ঞেস করল রেহান আমার বয়ফ্রেন্ড কিনা তখন আমার মনে হলো যে রেহানের সাথে কথা বলা উচিত।
কথা বলার কথা ভাবলেও কথা আমার তখন বলা হয়নি কারন ও পড়াশুনা নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিল।তার প্রায় একমাস পর আমাদের দেখা হয়। তার কিছুদিন আগেই আমার চেয়ে দুবছরের সিনিয়র একজন আমাকে একটা ডেটের জন্য প্রপোজ করে। এটা আমেরিকায় সাধারন ব্যাপার ।তো আমিও খুব স্বাভাবিকভাবেই রেহানকে এটা জানালাম। কিন্তু এটা শোনার পরপরই ওর চেহারা বদলে গেল। ও এক ঝটকায় আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিল আর বলল, 'তো ওই ডেটে না গিয়ে আমার সাথে কেন... তার সাথেই যাও। এমন তো না যে আমার অনুমতির জন্য তুমি অপেক্ষা করছিলে... আমাকে এসব শোনাচ্ছ কেন...
এটুকু বলেই ও চলে গেল।এতোটা মেজাজ খারাপ হলো যে বলার মতো না।ইচ্ছে করছিল ঠাশ করে দু'গালে দুটো চড় লাগিয়ে দেই।কিন্তু ততক্ষনে তো ও চলেই গিয়েছিল।
আমি বাড়ি গিয়ে ঠিক করলাম আমি ততক্ষণ ওর সাথে কোনো কথা বলব না যতক্ষণ না ও নিজে আমার কাছে এসে আমাকে সরি বলে।তবে আমার বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি।ও সেদিন বিকেলেই আমার কাছে এসে সরি বলে আর আমাকে পরদিন লাঞ্চে ইনভাইট করে।আমিও কিছু না ভেবেই রাজি.............
হঠাৎ তৃষার ফোনে একটা অজানা নাম্বার থেকে কল এলো ।ও রিসিভ করে একটু কথা বলেই আমাকে কিছু না বলে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেল।বুঝতে পারলাম বিজনেসের ব্যাপার।
আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।