His Family

384 20 8
                                    

"নেমে এসো.... "
স্পন্দনের ডাকে সমৃদ্ধি গাড়ির ভেতরকে বেরিয়ে আসে । স্পন্দন ওর ওর কোমর জড়িয়ে ওকে নীচে নামতে সাহায্য করে  । ড্রাইভার এদিকে এগিয়ে আসতেই স্পন্দন বলে "দেখে নিন ,ভেতরে সব ঠিক থাক আছে কিনা।  তারপরে আমি বাকি payment টা করে দিচ্ছি । "
ড্রাইভার একবার   দেখে নিয়ে এসে বলে "হ্যাঁ স্যার ঠিক আছে । "
স্পন্দন সমৃদ্ধির দিকে তাকিয়ে বলে "তুমি একটু ওই সাইডটাই গিয়ে দাঁড়াও..  আমি আসছি । "
"নাহ আমি এখানেই থাকবো । "
এই বলে সমৃদ্ধি স্পন্দনের জামার কোমরের কাছটা ধরে দাঁড়ায় ।
স্পন্দন পকেট থেকে কয়েকটা পাঁচশো টাকার নোট দেয় লোকটাকে । লোকটা গুণে নিয়ে বলে "একদম ঠিক আছে স্যার ... স্যার একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো ?  "
স্পন্দন বলে "হ্যাঁ করুন... "
"বলছি , আপনারা কি বিবাহিত ? "
এটা শুনে স্পন্দন সমৃদ্ধির দিকে তাকায় সমৃদ্ধি স্পন্দনের দিকে । সমৃদ্ধি ভ্রু কুঁচকে বলে "কেনো বলুন তো ? "
"না মানে এমনি জিজ্ঞেস করলাম । "
স্পন্দন মাথা নেড়ে বলে "হ্যাঁ আমরা বিবাহিত , এবার আপনি আসুন যান... "
ড্রাইভার চলে যায় । সমৃদ্ধি স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বলে "তুমি মিথ্যে কেনো বললে ?  সত্যি বললে কি হতো ? "
স্পন্দন ওর গাল টিপে দিয়ে বলে "সত্যি বললে এটা হতো যে লোকটা ভাবতো আমি খুব কুল ছেলে , সিএম .... আর তোমার চরিত্র নিয়ে ভাবতে বসতো । ভাবতো , এমা ... ছেলেটা না হয় পুরুষমানুষ বলে মেয়েটাকে ডেকেছে , তাই বলে মেয়েটা চলে এলো .. নির্ঘাত মেয়েটার চরিত্রের দোষ... আমিও ছিলাম সেটা নিয়ে ওর কিছু যায় আসতো না , কিন্তু তুমি বিয়ে ছাড়া আমার সাথে কেনো ছিলে এরকম নির্জন রোড ট্রিপে সেটা নিয়ে ওর মাথায় অনেক কিচ্ছু ঘুরত । Typical outdated mentality  বোঝো ? ...আর আমি কেনো চাইবো ওই লোকটা আমার ঋদিকে নিয়ে এসব ভাবুক ..  why.. "
এই বলে স্পন্দন ভ্রু নাচায়।  সমৃদ্ধি ওকে জড়িয়ে  ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে "I love you ... "
স্পন্দন ওর মাথায় চুমু দিয়ে বলে "I love you too এবার ভেতরে চলুন... "

দুজনে লিফটে এসে দাঁড়িয়েছে । লিফটের দরজা বন্ধ হতে যাবে এরমধ্যেই রিটা দৌড়ে দৌড়ে এসে লিফটে ঢুকে পড়ে । সামনে স্পন্দন আর সমৃদ্ধিকে দেখে বলে "তোমরা....সকাল সকাল কোথায় যাওয়া হয়েছিল ..  "
সমৃদ্ধি "morming walk " বলে একটা চওড়া হাসি দেয় ।
রিটা চোখ বড়  বড় করে বলে "তুমি এখানেই ছিলে নাকি রাতে ? "
"তো ? কোথায় থাকবো ? "
তারপরে স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বলে "ওকে গার্ড দিতে হবে না ? কেউ যদি ওকে নিয়ে পালিয়ে যায় , তাই আমি এখানেই থাকি ..  "
রিটা অবাক হয়ে বলে "স্পন্দনদা বাচ্চা নাকি , যে ছেলেধরা এসে নিয়ে চলে যাবে বলে তুমি ওকে গার্ড দাও .. "
সমৃদ্ধি মাথা নেড়ে বলে "বাচ্চাই তো ..  এই দেখো কত কিউট কিউট ফেস... খালি একটু হাইটটা বেশিই লম্বা হয়ে গেছে আর দাঁড়ি গোঁফ গজিয়ে গেছে এই যা।  নাহলে বাচ্চাই তো .. "
এই বলে স্পন্দনের গাল টিপে দেয় । স্পন্দন  মনে মনে বলে "এটা তুমি কি করছ ঋদি , হাসি পাচ্ছে  তো আমার। "
এরকম করতে করতে রিটার ফ্লোর চলে আসে , ও নেমে চলে যায় গটগট করতে করতে । লিফটের দরজা বন্ধ হতে হতেই স্পন্দন সমৃদ্ধিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে "আমি বাচ্চা ?বাচ্চা আমি ... তবে.. দেখাচ্ছি তোমায়... "
সমৃদ্ধি হাসতে হাসতে হাসতে বলে "আর একটু মজা করছিলাম তো ...  ছাড়ো .. লিফটে cctv রয়েছে প্রাণ... "
সিসিটিভির কথা শুনে স্পন্দন ওকে ছেড়ে দেয় ,বিড়বিড় করে বলে "রুমে চলো দেখছি তোমাকে । "
এই বলতে বলতে ওরা ফ্লোরে চলে আসে । লিফট থেকে নেমে স্পন্দন আগে আগে হাঁটছে , সমৃদ্ধি ওর পেছন পেছন । স্পন্দন ফ্ল্যাটের লক খুলে ওরা দুজন ফ্ল্যাটে ঢুকে আসে । দরজা লাগিয়েই স্পন্দন বলে "এবার.. এবার কোথায় যাবে ? আমি বাচ্চা তাইনা ? "
সমৃদ্ধি সোফার ওপর থেকে বালিশ তুলে নিজেকে গার্ড করে বলে "খুব গায়ে লেগেছে তাই না ? আমাকে যে দিনে রাতে বাচ্চা বলো .. তখন আমারও এমনি করেই গায়ে লাগে .. বেশ করেছি বাচ্চা বলেছি ... "
এই বলে সমৃদ্ধি জিভ দেখিয়ে দৌড় দেয় । সারা ফ্ল্যাট সমৃদ্ধি দৌড়ায় আগে আগে , স্পন্দন পেছন পেছন... এভাবে তারা করতে করতে স্পন্দনের ফোন বেজে ওঠে , সমৃদ্ধি সোফায় বসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে "ফোন বাজছে , কথাবলে নাও তারপরে আবার আমাকে তাড়া কোরো... "
স্পন্দন পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে ওর মা ফোন করেছে ।
"হাইইই মা.... "
মা শুনে সমৃদ্ধি তাকায় । স্পন্দন এসে ওর পাশে বসে ।
"কি করছো .. ডিনার হলো ? "
"হ্যাঁ হয়েছে .. আমার বেটা এখন কি করছে ? "
"ব্রেকফাস্টে কি খাবে সেটা ভাবছে । "
"কি দরকার বলতো বাবু , কেনো এতো কষ্ট করে একা একা থাকছিস .. যতক্ষণ রান্না না করবি কিছু খেতে পারবি  না । বাড়ি ফিরে যাও স্পন্দন.. আমি কুককে বলবো আমার প্রিন্সকে   রোজ তার পছন্দের খাবার রান্না করে দেবে , তারপরে আমি ফিরে এলে তো আর সমস্যা হবে না তাই না । "
সমৃদ্ধি ছবি শুনতে পাচ্ছে , মা ছেলের কথা শুনে মনে মনে বলে "নিজেকে বড্ড বেমানান লাগছে ... কেনো জানিনা... , ভুল করে ফেললাম না তো । এখন থেকে তো আমি পিছিয়ে যেতেও পারবো না .. "
এই বলে মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।  স্পন্দন ফোন ওর মাকে বলছে "তুমি আর বাবা না থাকলে বাড়ি থাকতে ভাল্লাগে না , আমি এইভাবেই ভালো আছি । শান্তিতে আছি । কবে ফিরবে মা ? "
মায়ের প্রতি ছেলের এরকম আবদারের সুর শুনে সমৃদ্ধি মৃদু হাসে। ওপার থেকে মা উত্তর দেয় "চলে আসবো বাবা , আর কয়েকমাস পরেই  আমরা তোমার কাছে চলে আসবো । তোর বাবার সাথে কথা বল.. "
স্পন্দন ওর বাবার সাথেও একইরকম ভাবে কথা বলে । একটা সময় ওর বাবা বলে "যখন তুই বিদেশে তখন আমরা ছিলাম দেশে , আর এখন আমরা বিদেশে তো তুই দেশে চলে গেলি ... কতদিন বাপ ছেলেটা একসাথে বসে আড্ডা দেওয়া হয়নি .. "
স্পন্দন একহাতে সমৃদ্ধিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে  বলে "তুমি শুধু একবার মাকে নিয়ে ইন্ডিয়া ফিরে এসো .. তারপরে রোজ আড্ডা হবে বাবা ... I am missing you two...  "
"We miss you too my son.. সাবধানে থাকো... "
এই বলে উনি ফোন রেখে দেন ।
ফোন রাখতেই স্পন্দন দেখে সমৃদ্ধি ওর দিকে তাকিয়ে আছে । স্পন্দন ভ্রু তুলে বলে "হলো কি ? এইভাবে স্ক্যান করছো কেনো আমাকে ... "
"আমার ইচ্ছা , স্ক্যান করবো , xerox করবো যা খুশি তাই করবো ... "
"সে স্ক্যান , xerox যা খুশি করে দিতেই পারো ... সাথে একটু আদর করে দিও তাহলেই হবে । "
সমৃদ্ধি ওর গায়ে এক চাটি মেরে বলে "ধ্যাত... "
তারপরে বলে "আচ্ছা , তোমার মায়ের নাম অপরাজিতা... "
স্পন্দন বলে "হুমম.... "
"তাহলে তোমার নাম স্পন্দন কেনো ? এই যেমন ধরো আমার বাবার নাম সম্রাট , দিদির নাম সম্প্রীতি আর আমি সমৃদ্ধি... বাবার সাথে মিলিয়ে আমাদের নাম রাখা হয়েছে । তাহলে তোমার সাথে আন্টির নামের মিল নেই কেনো? "
স্পন্দন বলে "কারণ.... আমার নামও আমার বাবার নাম থেকেই নেওয়া...."
সমৃদ্ধি সুর করে বলে "ওওওওও.... আংকেলের নাম কি ? স্পন্দন থেকে মিলিয়ে বন্ধন  , চন্দন ? নন্দন নাকি রন্ধন? উপস সরি... রন্ধন আবার কারোর নাম হয় নাকি , ভুল করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে সরি... "
স্পন্দন হেসে বলে "না না ঠিক আছে ... আমার বাবার নাম এগুলোর কোনোটাই নয় ..  "
সমৃদ্ধি কৌতূহল নিয়ে বলে "তাহলে ? আর কি হয় ? "
স্পন্দন সমৃদ্ধিকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলে "আমার বাবার নাম হচ্ছে হৃদয় গাঙ্গুলি... "
সমৃদ্ধি স্পন্দনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে "অ্যা... হৃদয় এর সাথে স্পন্দনের মিল কোথায় ? "
"শুধু অক্ষরের মিল দেখলে তো হবে না ম্যাডাম... হার্ট বিটের উৎপত্তি হয় হার্ট থেকে .. তাই হার্টবিট হলো হার্টের অংশ , আর আমার বাবার অংশ হলাম আমি , তাই হৃদয় গাঙ্গুলির ছেলের নাম স্পন্দন গাঙ্গুলি .... "
সমৃদ্ধির চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে , ও পুরো মুগ্ধ হয়ে বলে "ওয়াও... কি দারুন আর্টিস্টিক... কত ভেবে নাম রাখা হয়েছে তোমার ..  এই তোমার নামটা কি রেখেছে গো ? "
"আমার দাদু..  আমার মায়ের বাবা .. দাদুরবাড়ি গ্রামে ছিল , দাদু ওখানকার স্কুলের ইংলিশের টিচার ছিলেন । "
সমৃদ্ধির উৎসাহ বেড়ে যায় , ও আর কৌতূহল নিয়ে বলে "সেখান থেকে আন্টি এত বড় একটা কোম্পানির ফাউন্ডার ... এটা তো রূপকথা ... আংকেল কি করতেন ? "
"PearlX এর জন্মের আগে বাবা কি করত আমি জানিনা , তবে মা বলে .. মা এতদূর পৌঁছেছে বাবা পাশে ছিল তাই ... , মা কোম্পানির CEO আর বাবা CMO.. বাবা মার্কেটিং এর দিকটা ম্যানেজ করে .... "
"ওনাদের নিশ্চয় লাভ ম্যারেজ তাই না ? "
"হবে হয়তো ... ,মনে তো তাই হয় .. কোনোদিন জিজ্ঞেস করা হয়নি । তবে বাবা চিরকাল ব্যাকফুটে  থেকে মাকে উৎসাহ দিয়ে এসেছে ... আর মা , বাবাকে পাগলের মতো ভালোবাসে ..  দুজনকে একসাথে দেখে আমার কিযে ভাললাগে ...  "
সমৃদ্ধি মুগ্ধ হয়ে স্পন্দনের কথা শুনছে ।






(ক্রমশ.... )

//একটু বেশি গ্যাজানো হয়ে গেছে মনে হলে আমি Sorry চেয়ে নিচ্ছি 🙃

প্রেমিক Where stories live. Discover now